ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যার বিচারের দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন নাটকের পরিচালক, শিল্পী ও কলাকুশলীরা।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘নুসরাতের সঙ্গে যা হয়েছে, তা বাংলাদেশের কেউ মেনে নেয়নি। নিতে পারে না। আমরা নুসরাতকে বলছি, আমাদের যতক্ষণ নিশ্বাস আছে, আমরাও প্রতিবাদ করে যাব।’
সারা দেশে নুসরাত হত্যার আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবিতে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র করপোরেশনের সামনের রাস্তায় যৌথভাবে মানববন্ধন করে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি ও ডিরেক্টরস গিল্ড। এ সময় দুই সংগঠনের পক্ষ থেকে ভবিষ্যৎ কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়। মানববন্ধনে শিল্পী ও কলাকুশলীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বরেণ্য চিত্রনায়ক আলমগীর, পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার, বদিউল আলম খোকন, ডিরেক্টরস গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক এস এ হক অলিক, শিল্পী সংঘের সভাপতি শহীদুল আলম সাচ্চু, প্রযোজক নেতা খোরশেদ আলম, চিত্রতারকা রিয়াজ ও অঞ্জনা, নাট্যজন সারা যাকের, সংগীতশিল্পী দিনাত জাহান মুন্নী, পরিচালক চয়নিকা চৌধুরী, অভিনয়শিল্পী ও সংগঠক রোকেয়া প্রাচী প্রমুখ।
বরেণ্য চিত্রনায়ক আলমগীর এই ঘটনার দ্রুত বিচার দাবি করে বলেন, ‘নুসরাতের সঙ্গে যা হয়েছে, তা বাংলাদেশের কেউ মেনে নেয়নি। নিতে পারে না। বিচারের দাবিতে আজ সবার সঙ্গে আমরা সাধারণ শিল্পীরাও রাস্তায় দাঁড়িয়েছি। সাত দিনের মধ্যে যদি সমাধানের দিকনির্দেশনা না পাই, তবে আমরা পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।’
নুসরাত হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করে মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘নুসরাত হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বাঁচাতে একটি শ্রেণি উঠেপড়ে লেগেছে। আমরা চাই, সাত দিনের মধ্যে বিচারকার্য সম্পন্ন হোক। প্রধানমন্ত্রী যে আদেশ দিয়েছেন, সেটা যেন ভিন্ন খাতে কেউ প্রবাহিত না করেন। নুসরাত হত্যাকাণ্ড এবং তার বিচার দাবি জাতীয় দাবি। এখানে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে যেন কেউ পার না পায়।’
বক্তাদের কেউ আবার এ-ও বলেন, এই বৈশাখে যেন সবাই কালো ব্যাজ ধারণ করেন এবং নুসরাত হত্যার প্রতিবাদ অব্যাহত রাখেন। কেউ যেন বর্ষবরণের আনন্দে নুসরাত হত্যার বিষয়টি ভুলে না যান।
চিত্রনায়ক রিয়াজ বলেন, ‘মৃত্যুর আগে নুসরাত বারবার বলেছিল, যতক্ষণ নিশ্বাস আছে, প্রতিবাদ করে যাবে। আজ নুসরাত নেই। তবে আমরা আছি। নুসরাতকে বলছি, আমাদের যতক্ষণ নিশ্বাস আছে, প্রতিবাদ করে যাব।’
নাট্যনির্মাতাদের সংগঠন ডিরেক্টর গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক এস এ হক অলিক বলেন, ‘আমরা এমন একটি বিচার দাবি করছি, যেন এই বিচার দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে। বাংলাদেশের মাটিতে আমরা এমন নৃশংসতা দেখতে চাই না।’
রোকেয়া প্রাচী বলেন, ‘আমি লজ্জিত, কারণ, আমার জন্মভূমিতে এই ঘটনা হয়েছে। আমি নুসরাতের বিচার দাবি করছি। পাশাপাশি স্থানীয় নেতা ও প্রশাসনের যারা এই ঘটনায় অপরাধীর পাশে দাঁড়িয়েছে, তাদেরও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’
শহীদুল আলম সাচ্চু বলেন, ‘সন্ত্রাস দমন, জঙ্গিবাদ দমন করে সরকার আমাদের শান্তিতে ঘুমানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছে। অথচ এই প্রশাসনের কিছু মানুষ অন্যায়কে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। তিনি যা বলেন, তা করেন। আশা করি খুব তাড়াতাড়ি এর বিচার হবে। যত দিন না কোনো সমাধান হচ্ছে, তত দিন বাংলাদেশের শিল্পী ও কলাকুশলীরা কালো ব্যাজ ধারণ করবে।’
৬ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় নুসরাত আলিম পরীক্ষা দিতে গেলে দুর্বৃত্তরা তাঁর গায়ে আগুন দেয়। গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় ওই দিন রাতে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। গত বুধবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নুসরাত মারা যান।
এর আগে গত ২৭ মার্চ ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা করেন নুসরাতের মা। গত রোববার নুসরাত চিকিৎসকদের কাছে দেওয়া শেষ জবানবন্দিতে বলেছিলেন, নেকাব, বোরকা ও হাতমোজা পরা চারজন তাঁর গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। ওই চারজনের একজনের নাম শম্পা।