নিখুঁত নয়, সন্তানেরা চায় আপনি অকপট হবেন

>

অ্যাঞ্জেলিনা জোলি । ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে
অ্যাঞ্জেলিনা জোলি ।  ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

অ্যাঞ্জেলিনা জোলি হলিউডের খ্যাতনামা অভিনেত্রী। একাডেমি অ্যাওয়ার্ডসহ নানা পুরস্কার পেয়েছেন। আবার রুপালি পর্দার গণ্ডির বাইরে এসে নিজেকে তিনি মানবতার সেবায় যুক্ত করেছেন। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে তিনি রোহিঙ্গা শিশুদের প্রতি সমমর্মিতা জানাতে বাংলাদেশেও এসেছিলেন। নতুন করোনাভাইরাসের মহামারির এ সময়ে বিশ্বের লক্ষকোটি শিশু এখন ঘরবন্দী। তাদের এবং লক্ষকোটি মা-বাবার জন্য সময়টা কঠিন, দুর্বিষহ। এই কঠিন সময়ে বিশ্বের বাবা-মায়েদের কাছে জোলি একটি চিঠি লিখেছেন। চিঠিটি ছাপা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাপ্তাহিক পত্রিকা টাইম ম্যাগাজিন-এ। নিজের মা হয়ে ওঠার অভিজ্ঞতা থেকে জোলি যা লিখেছেন, তা বাবা-মায়েদের নতুন দিশা দেখাতে পারে। 

প্রিয় বাবা ও মায়েরা, 

আমি আপনাদের কথা ভাবছি। আমি কল্পনা করতে পারি, দিনগুলো পার করার জন্য আপনারা প্রত্যেকে কী কঠিন চেষ্টা করছেন। আপনার ভালোবাসার ধনদের এ সময়টা পাড়ি দেওয়ার পথ দেখাতে আপনারা কতটা উদ্‌গ্রীব, তা আমি বুঝি।

আপনাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আমি বুঝি। বুঝি, কীভাবে আপনারা দিন পেরোনোর নানা পরিকল্পনা করছেন। ভেতরে-ভেতরে কখনো যখন আপনারা ভেঙে পড়তে নিচ্ছেন, তখনো তাদের জন্য কীভাবে আপনারা হাসিমুখে থাকছেন, তা আমি বুঝি। 

আমি যৌবনে খুব ধীরস্থির ছিলাম না। আসলে আমি কখনো ভাবিনি যে কারও মা হব। যখন মা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম, সেই সময়ের কথা আমার মনে আছে। ভালোবাসাটা কঠিন কিছু ছিল না। কারও প্রতি এবং নিজের জীবনের চেয়ে বড় কোনো কিছুর জন্য নিজেকে উৎসর্গ করাটা কঠিন কিছু ছিল না।

কঠিন যেটা ছিল, সেটা হচ্ছে এটা জানা যে সবকিছু যেন ঠিকঠাক থাকে, তা এখন থেকে আমাকেই নিশ্চিত করতে হবে। সবকিছু সামাল দিতে হবে এবং সচল ও কার্যকর রাখতে হবে। খাওয়াদাওয়া, স্কুল আর চিকিৎসা থেকে শুরু করে যা কিছু সামনে আসবে, সবকিছু। আর আমার ধৈর্য অটুট রাখতে হবে।

আমি বুঝলাম, আমি নিরন্তর দিবাস্বপ্ন দেখা ছেড়ে দিয়েছি, বরং যখন যা কিছু করছি বা ভাবছি, নিমেষে তা ছেড়ে উঠে কোনো একটা চাহিদা মেটানোর জন্য আমি সর্বক্ষণ তৈরি থাকছি। এই নতুন গুণটি আমাকে আয়ত্ত করতে হয়েছে।

তাই এখন বিশ্বজোড়া এই মহামারির মধ্যে আমি ঘরবন্দী সন্তানদের সব মা ও বাবার কথা ভাবছি। সেই বাবা–মায়েরা, যাঁরা সবাই সবকিছু ঠিকমতো করতে পারবেন বলে আশা করছেন। আশা করছেন, তাঁরা সব প্রয়োজন মেটাতে পারবেন এবং শান্ত ও আশাজাগানিয়া হয়ে থাকতে পারবেন। ইতিবাচক থাকতে পারবেন।

এমনটা যে অসম্ভব, সেই বোধ আমাকে সাহায্য করেছে।

এটা বড় চমৎকার একটা অনুধাবন যে সন্তানেরা আপনাদের নিখুঁত দেখতে চায় না। তারা শুধু চায়, আপনারা অকপট হবেন, সত্য আচরণ করবেন। আর আপনাদের যথাসাধ্য ভালোটুকু করবেন। আসলে আপনাদের দুর্বল জায়গাগুলোতে নিজেদের সবল করে তোলার যত বেশি সুযোগ তারা পায়, ততই তারা শক্তপোক্ত হয়ে গড়ে ওঠে।

তারা আপনাদের ভালোবাসে। তারা আপনার সহায় হতে চায়। সুতরাং শেষ পর্যন্ত বিষয়টা একযোগে একটা দল গড়ার। এক দিক থেকে দেখলে তারাও কিন্তু আপনাদের বড় করে তুলছে। আপনারা একসঙ্গে বেড়ে উঠছেন।