ঈদের ছবি ‘পাসওয়ার্ড’ সারা দেশের বিভিন্ন সিনেমা হলে চলছে। সেই সঙ্গে এ ছবি নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা চলছে সমান তালে। অভিযোগ উঠেছে, ছবিটি নাকি নকল। পরিচালক মালেক আফসারী এবং সহযোগী প্রযোজক মোহাম্মদ ইকবাল পরোক্ষভাবে সে অভিযোগ স্বীকার করেছেন।
অপরাধ জগতের এক ডনের সুইস ব্যাংকের অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড নিয়ে ‘পাসওয়ার্ড’ ছবির গল্প। ছবিটি প্রযোজনা করেছে শাকিব খানের প্রযোজনা সংস্থা এসকে ফিল্মস, সহপ্রযোজক মোহাম্মদ ইকবাল। শাকিব খান ফিল্মসের প্রযোজনায় নির্মিত এ চলচ্চিত্রে শাকিব খানের সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন বুবলী। আরও অভিনয় করেছেন মিশা সওদাগর, ইমন, অমিত হাসান, ডন।
মুক্তির আগেই ট্রেলার দেখে অনেকেই নকলের অভিযোগ তুলেছেন ‘পাসওয়ার্ড’ ছবিটির দিকে। কেউ কেউ বলেছেন, এটি ভারতের ছবির নকল, আবার কেউ বলেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার ছবির নকল। বিষয়টি আমলে নেন নির্মাতা মালেক আফসারী। নিজের ফেসবুক ওয়ালে ৫ জুন তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘যাঁরা এত দিন প্রচার করেছেন “পাসওয়ার্ড” তামিল ছবি “ডিনামাইট”-এর নকল, তাঁদের জন্য আমার পুরস্কার ঘোষণা করা আছে। প্রমাণ দিয়ে ১০ লাখ টাকা নিয়ে যান। আমি সব সময় বলেছি, মৌলিক ছবি তৈরির মতো পণ্ডিত আমি নই। তার মানে এই নয়, একজন সুপার স্টারকে অপব্যবহার করব তামিল/তেলেগু ছবি নকল করে। এসব ছবি দিয়ে এখন আর দর্শকদের খুশি করা যাবে না। আমার নজর আরও ওপরে।’
সাত দিন ধরে সারা দেশে চলছে ঈদের তিন ছবি ‘পাসওয়ার্ড’, ‘নোলক’ ও ‘আবার বসন্ত’। এই তিন ছবির মধ্যে শাকিব খান অভিনীত ‘পাসওয়ার্ড’ ছবির বিরুদ্ধে নকলের অভিযোগ তুলেছেন অনেক দর্শক। অনেকে ভারতের ছবি ‘ডিনামাইট’, ‘এক থা টাইগার’ বা ‘ব্যাঙ ব্যাঙ’কে নকল করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। তবে ছবিটি দেখেছেন, এমন অনেক দর্শক দক্ষিণ কোরিয়ার সিনেমা ‘দ্য টার্গেট’ গল্প এবং দৃশ্যের মিল পেয়েছেন। এই ছবির সঙ্গে ‘পাসওয়ার্ড’ সিনেমার কিছু কমেডি অংশ আর গানের দৃশ্য ছাড়া হুবহু মিলে যায় ছবির গল্প ও দৃশ্য। শুধু ছবিতে পাল্টে গেছে অভিনেতা, অভিনেত্রী আর নির্মাতা ও কলাকুশলী। কেউ কেউ বলছেন ফরাসি সিনেমা ‘পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক’-এর কাহিনি ও চিত্রনাট্য ব্যবহার করা হয়েছে ‘পাসওয়ার্ড’ ছবিতে। ‘দ্য টার্গেট’ ছবিটি ২০১০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ফরাসি সিনেমা ‘পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক’-এর রিমেক।
মধুমিতা সিনেমা হল থেকে ছবিটি দেখে হতাশা প্রকাশ করে গোপীবাগের রাশেদ ফায়সাল। তিনি বলেন, ‘নায়কের মুখে শুনেছি এটি আন্তর্জাতিক মানের ছবি। অনেক আশা নিয়ে এসেছিলাম ছবি দেখতে, প্রথম বাংলা ভাষার বিশ্ব মানের সিনেমা দেখব। পুরাটা ছবি দেখে মনে হয়েছে, এমন নকল গল্পের ছবি না বানালেও পারতেন। দেখা গল্প পুনরায় দেখতে ভালো লাগে না।’ ফেসবুকেও এ নিয়ে বিস্তর মন্তব্য দেখা গেছে। অনেকে লিখেছেন, নকল ছবি প্রমাণ আছে তাদের কাছে। পরিচালক যেন ১০ লাখ টাকা পুরস্কার দেন।
‘পাসওয়ার্ড’ ছবির সহযোগী প্রযোজক মোহাম্মদ ইকবাল এক ভিডিও বার্তায় নকল ছবি বিষয়টি পরোক্ষভাবে স্বীকার করেছেন। তাঁর মতে, ১২টি গল্প নিয়ে সারা পৃথিবীতে ছবি হয়। ঘুরে ফিরে এই ১২টি গল্পের মধ্যে সারা পৃথিবীর চলচ্চিত্রগুলো হয়ে আসছে। বললেন, ‘পৃথিবীতে কোনো না কোনো ছবির থিম নিয়েই কাজ করতে হয়। বাংলাদেশের ১০০টি ছবির মধ্যে ৯৫টি ছবি মৌলিক গল্পের না।’
পরিচালক মালেক আফসারী আজ মঙ্গলবার তাঁর ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘পাসওয়ার্ড’ নকল, সেটা তিনি জানতেন না। তবে একসময় তাঁর ওয়ালে স্ট্যাটাসটি আর দেখা যায় না। এ ব্যাপারে বক্তব্য নেওয়ার জন্য তাঁর মুঠোফোনে অসংখ্যবার কল দিলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের অনুমোদন পেয়ে মুক্তি পাওয়ার পর কোনো ছবির বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে ব্যবস্থা নেওয়ার নিয়ম আছে। এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সচিব মো. মমিনুল হক প্রথম আলোকে বলেন, এমন পরিস্থিতিতে অনুমোদন বাতিলসহ শাস্তির বিধান আছে। তবে এ বিষয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে লিখিত অভিযোগ করতে হয়।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সাবেক সদস্য, চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ইফতেখার নওশাদ বলেন, ‘বিদেশি ছবির অনুকরণে হরহামেশা ঢাকায় ছবি হয়। এখন ছবির বাজারে সংকট। তাই এসব এড়িয়ে গেলেই ভালো।’