দশক বদলে দেওয়া টিভি শো

>একসময় টেলিভিশনই মানুষের সময় কাটানোর অন্যতম মাধ্যম হিসেবে পরিচিত ছিল। ২০১০–এর দশকে টেলিভিশনের জায়গায় একটু একটু করে ভাগ বসিয়েছে মুঠোফোন আর ল্যাপটপ–কম্পিউটারের মতো পর্দাগুলো। গত এক দশকে পশ্চিমা টিভি প্রযোজনা ও ওয়েব প্রযোজনায় এসেছে আমূল পরিবর্তন। সেই পরিবর্তনগুলো নিয়েই এই লেখা। লিখেছেন মুসাব্বির হুসাইন

স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের উত্থান

ইউটিউব–নেটফ্লিক্স গত দশকেও ছিল। তবে চলতি দশকে এগুলোর প্রভাব ছড়িয়ে গেছে সব দেশে সব ধরনের মানুষের মধ্যে। এর ফলে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছে টেলিভিশন প্রযোজনার দুনিয়া। সাপ্তাহিক টিভি শো থেকে আমরা ঢুকে গেছি নেটফ্লিক্সের দুনিয়ায়। নাটক–সিনেমার জন্য অপেক্ষা এই দশকের দর্শকেরা আর করেন না। এখন সময় বুঝে দর্শক ঠিক করছেন, কখন কোন নাটক দেখবেন। পছন্দ না হলে জোর করে সেটা আর কাউকেই দেখানোর সুযোগ নেই। ২০১০–এর দশকে এসে প্রযুক্তির কল্যাণে যতটা স্বাধীন হয়েছে প্রযোজনাগুলো, ততটাই স্বাধীন দর্শকও।

দর্শকের এই স্বাধীনতাকে প্রাধান্য দিয়ে একে একে বেড়ে চলছে স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের সংখ্যাও। এই দশকে এসে নেটফ্লিক্সের সঙ্গে পাল্লা দিতে বাজারে নাম লিখিয়েছে আমাজন প্রাইম, অ্যাপল টিভি, ডিজনি প্লাস, এইচবিওর মতো প্ল্যাটফর্মগুলো।

চলতি দশকেই টিভি সিরিজ কোয়ান্টিকো দিয়ে পশ্চিমা বিনোদন জগতে অভিষেক হয় বলিউডের প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার



নেটফ্লিক্সের প্রবেশ
পশ্চিমা টেলিভিশন প্রযোজনায় বদল আসতে শুরু করে ২০১২ সাল থেকে। নেটফ্লিক্স তাদের প্রথম অনুমোদিত বিচিত্র ধরনের কমেডি টিভি সিরিজ লিলিহ্যামার নিয়ে আসে এ সময়। নেটফ্লিক্স নিজেদের মৌলিক কন্টেন্ট তৈরি করে এক নতুন পরিবর্তনের ডাক দেয়। একে একে এই প্ল্যাটফর্ম হাউস অব কার্ডস অরেঞ্জ ইজ দ্য নিউ ব্ল্যাক–এর মতো প্রযোজনা দিয়ে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দিতে থাকে, তৈরি করতে থাকে নতুন দর্শক। সহজভাবে বললে, সেই থেকেই টেলিভিশন থেকে দূরে সরে আসতে শুরু করেন দর্শক। নেটফ্লিক্স শুরু করে দেশ–কাল ও পাত্রের ছাঁচ ভেঙে দিতে। ঘরে বসেই সাধারণ দর্শক পরিচিত হতে শুরু করে কোরিয়ান ড্রামা থেকে শুরু করে জার্মান হররের সঙ্গে।

ব্রেকিং ব্যাড সিরিজের ‘জেসি পিঙ্কম্যান’

খল অভিনেতা হয়ে গেছে চোখের মণি
নায়ককেন্দ্রিক সিরিজ নির্মাণ থেকে এ দশকে বেরিয়ে এসেছেন পশ্চিমা প্রযোজক ও নির্মাতারা। নায়ক নয়, দর্শকের আবেগের জায়গা দখল করে নিয়েছে খল অভিনেতা ও অ্যান্টিহিরোরা। ব্রেকিং ব্যাড–এর কথাই ভেবে দেখুন। ওয়াল্টার হোয়াইট ছাড়াও জেসি পিঙ্কম্যান, মাইক, সাউলের মতো চরিত্রগুলোর এত নেতিবাচক দিক, এরপরও ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে তারা। একইভাবে গেম অব থ্রোনস–এর টিরিয়ন ল্যানিস্টার, সার্সেইর কথাও বলা যায়। বলা যায় নার্কোস–এর পাবলো এসকোবারের কথা।

নারীকেন্দ্রিক গল্পের সিরিজগুলো এই দশকে পেয়েছে দারুণ জনপ্রিয়তা। বিগ লিটল লাইস সিরিজটি গত কয়েক বছরে জিতেছে বিভিন্ন সম্মানজনক পুরস্কার। ছবি: এএফপি

এগিয়ে নারীরা

নারীদের আধিপত্য সমানে বেড়েছে এই দশকে। অরেঞ্জ ইজ দ্য নিউ ব্ল্যাক, ট্রান্সপারেন্ট, আনরিয়াল, কোয়ান্টিকো, বিগ লিটল লাইস–এর মতো নারীকেন্দ্রিক প্রযোজনাগুলো পেয়েছে জনপ্রিয়তা। এ ছাড়া নির্মাণ ও চিত্রনাট্য রচনাতেও এগিয়ে ছিলেন নারীরা। শন্ডা রাইমসের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘শন্ডাল্যান্ড’–এর সাফল্যের কথা এ ক্ষেত্রে বলাই যায়। আবার স্যালি ওয়েনরাইটের ক্রাইম সিরিজ হ্যাপি ভ্যালি, একইভাবে আগাথা ক্রিস্টির সৃষ্টি নিয়ে সারাহ ফেলপসের প্রযোজনাও সাড়া ফেলেছে বেশ।

গেম অব থ্রোনস এই দশকের সেরা সিরিজগুলোর একটি হিসেবে প্রশংসিত হয়েছে

দশকের অনন্য সৃষ্টি ‘গেম অব থ্রোনস’

২০১০–এর দশক তোলপাড় করা টিভি প্রযোজনার তালিকা করা হলে এইচবিওর গেম অব থ্রোনস–এর (জিওটি) কথা আসবে সবার আগে। ২০১১ সালে শুরু হয়ে এ বছর শেষ হওয়া এই সিরিজ চলতি দশকের অন্যতম টিভি প্রযোজনা। এর চরিত্রগুলো এতটাই জনপ্রিয়তা পায় যে যাঁরা সিরিজটি দেখেননি তাঁরাও খালিসি, দ্য রেড ওয়েডিং ও জন স্নো নিয়ে জেনেছেন, খোঁজখবর রেখেছেন। কারণ, জিওটি নিয়ে আলাপ না করার মানে হয়ে উঠেছিল ‘ব্যাকডেটেড’ ব্যাপার।

তথ্যসূত্র: বিবিসি