ধারাবাহিকভাবে কমছে চলচ্চিত্রের বড় বড় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। এই সময়ে হাতে গোনা আট থেকে দশটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান কাজ করছে, যার কারণে ছবিও হচ্ছে কম, আবার সিনেমার জন্য পরিচালকেরা ভালো প্রযোজক ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানও পাচ্ছেন না। এই সময়ে দেশের চলচ্চিত্রের অভিনয়শিল্পীরা এগিয়ে এসেছেন প্রযোজনার হাল ধরতে। অভিনয়শিল্পীদের অনেকে নিজেরাই খুলেছেন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। তাঁদের বক্তব্য, চলচ্চিত্রের এই দুর্দিনে পাশে দাঁড়ানোটা তাঁদের কর্তব্য।
চলচ্চিত্র প্রযোজনার ব্যাপারে যেসব তথ্য উঠে এল, তার সারমর্ম এমন, বড় বড় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠিত অনেক প্রযোজকই দীর্ঘদিন থেকে ছবি নির্মাণ করছেন না। এতে বছরের পর বছর সিনেমা কমে যাচ্ছে। ফলে একদিকে তারকাদের হাতে কাজ কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে সিনেমার অভাবে হল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সেই জায়গা থেকে তারকারা নিজেরাই এগিয়ে এসেছেন।
ঢাকাই চলচ্চিত্রের শীর্ষ নায়ক শাকিব খান ২০১৪ সালে এসকে ফিল্মস নামে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। সে বছরই প্রথম ছবি হিরো দ্য সুপারস্টার মুক্তি পায়। এ বছর নির্মাণ করলেন পাসওয়ার্ড। চলছে বীর নামে একটি ছবির শুটিং। এই প্রতিষ্ঠান থেকে আরও ছবি বানানোর কথা চলছে। তার মধ্যে ফাইটার, প্রিয়তমা, পাসওয়ার্ড ২-এর নাম বলা যায়। শাকিব খান জানান, দায়িত্ববোধ থেকেই প্রযোজনায় নেমেছেন। তিনি বলেন, ‘চলচ্চিত্রের দুর্দিনে আমার কিছু করার একটা দায়িত্ব থাকে। তাই সিনেমাকে বাঁচাতে কাজ করছি।’
জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসানও ছবি প্রযোজনা করছেন। তাঁর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সি–তে সিনেমা থেকে দেবী সিনেমা তৈরি করা হয়। প্রথম ছবিটিই বেশ জনপ্রিয় হয় দর্শকের কাছে। এই প্রতিষ্ঠান থেকে দ্বিতীয় ছবি নির্মাণের ঘোষণা দেওয়া হয় ফুড়ুৎ নামে।
তিনি বলেন, ‘এই অঙ্গনে একটা নির্দিষ্ট জার্নির পর প্রযোজনায় আসা যেতেই পারে। কেননা একটা সময়ে এখানকার সবকিছু হাতের তালুর রেখার মতো পরিষ্কার হয়ে যায়। অভিনয়শিল্পীর জানা হয়ে যায় কোথায় কোন কাজটা কীভাবে করতে হবে। যদি কাজটা তাঁরা ভালোভাবে করে, ফাঁক-ফোকড়গুলো পূরণ করতে পারে, তাহলে ভালো কিছু করা সম্ভব। সঙ্গে যদি একজন প্রযোজককে পাওয়া যায় আর এর মধ্য দিয়ে যদি ইন্ডাস্ট্রিতে কিছু যোগ করা যায়, তাতে একে সমৃদ্ধও করা যায়। পাশাপাশি একটা ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গিও থাকে, যাতে টাকাটা ঘরে আসে। তবে আফসোস হয় যে, এত সম্ভাবনা থাকার পরও কেন ইন্ডাস্ট্রি একটা সিস্টেমের মধ্যে আসছে না।’
এদিকে তরুণ চিত্রনায়িকা ববিও খুলেছেন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। তাঁর প্রতিষ্ঠানের নাম ববস্টার। এই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রথম ছবি বানানো হয় বিজলী নামে। ২০১৮ সালে মুক্তি পায় এটি। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান তৈরি প্রসঙ্গে ববি বলেন, ‘বেশ অনেক দিন থেকেই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ও প্রযোজক কমে গেছে। জানি, এই সময়ে সিনেমা প্রযোজনায় ঝুঁকি আছে, তারপরও চলচ্চিত্রের একজন শিল্পী হিসেবে এগিয়ে এসে কাজটি করছি। আমাদের মতো তারকাদের দেখে অনেকেই প্রযোজনায় আগ্রহী হতে পারেন। তাহলে বেশি বেশি সিনেমা তৈরি হবে, সিনেমার সুদিন ফিরবে।’
এদিকে অনেক চিত্রনায়িকা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান তৈরির ঘোষণা দিয়েছেন। সেখান থেকে ছবি বানানোর কথাও শোনা গেছে। তাঁদের মধ্যে পরীমনি ও মিষ্টি জান্নাতের নাম বলা যায়। পরীমনির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের নাম সোনার তরী মাল্টিমিডিয়া। এর যাত্রা শুরু হলো গত বছর। প্রতিষ্ঠানটি থেকে ক্ষত নামে প্রথম ছবি নির্মাণের ঘোষণা দেওয়া হয়। পরীমনি বলেন, ‘গত বছর থেকেই কাজ শুরুর কথা ছিল। ছবির শুটিংয়ের জন্য কয়েকটি লোকেশনও দেখে রেখেছি। সময় নিয়ে প্রথম কাজটি করতে চাইছি। ভালো কিছু করার জন্য সময় লাগে।’
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের নাম ঘোষণা না করলেও আঁধার থেকে আঁধারে নামে একটি ছবি মাহিয়া মাহির প্রযোজনা করার কথা জানা গেছে।