বয়সে পূর্ণিমা দিলরুবার চেয়ে পাঁচ বছরের ছোট। কিন্তু বড় বোনের সঙ্গে পূর্ণিমার সম্পর্ক বন্ধুর মতোই। দিলরুবাকে নিয়ে পূর্ণিমার মন্তব্য, ‘ও আমার বোন, বন্ধু—দুই-ই।’
পূর্ণিমা পেশায় অভিনেত্রী আর দিলরুবা ফ্যাশন ডিজাইনার। সম্প্রতি অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন দিলরুবা। ফলে, দুই বোনের পথচলা এবার একই পথে।
দুই বোনের নিকুঞ্জের বাসায় যখন উপস্থিত হয়েছি, অঝোর ধারায় বৃষ্টি শুরু হয়েছে তখন। প্রথমেই এক দফা ফটোসেশন—ক্যামেরার ক্লিক...তাতেই হেসে কুটি কুটি দিলরুবা। ওদিকে পূর্ণিমার চেহারা তখন গুরুগম্ভীর, তা দেখে দিলরুবা ফটোসেশনে মনোযোগী। মুখ খুললেন পূর্ণিমা, ‘ও পেশাদার না তো, তাই হাসতে হাসতে মরে যাচ্ছে।’
প্রথমে দিলরুবার কথা। দীর্ঘদিন মঞ্চে কাজ করলেও টেলিভিশনে প্রথম তাঁর অভিষেক ইডিয়টস ধারাবাহিকের মাধ্যমে। ৬৫ পর্বে গিয়ে নাটকটি শেষ হয়েছে। গেইম নামের আরেকটি ধারাবাহিকেও অভিনয় করছেন তিনি। অভিনয়ে সুযোগ হলো কীভাবে?
‘ফ্যাশন ডিজাইন নিয়েই আমার ব্যস্ততা। এর মধ্যে একদিন পূর্ণিমা অভিনয়ের কথা তুলল।’ বোনের কথার এ পর্যায়ে ঢুকে পড়লেন পূর্ণিমা, ‘আমি ভেঙেই বলি। ছায়াছবি চলচ্চিত্রে শুটিং করতে গিয়ে মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজের সঙ্গে জানাশোনা হয়। রাজ একদিন জানালেন, ইডিয়টস নামের একটা ধারাবাহিক নির্মাণ করবেন। এখানে এমন একজন নারী শিক্ষক লাগবে, যাঁকে ছাত্ররা সবাই পছন্দ করে। কিন্তু চরিত্রের সঙ্গে মানানসই কাউকে তিনি খুঁজে পাচ্ছেন না। তখন আমি তাঁকে দিলরুবার কথা বললাম। আমিও ওই নাটকের একটি চরিত্রে অভিনয় করছি, তাই দিলরুবাও রাজি হয়ে গেল।’ আবার দিলরুবার মুখোমুখি: এক সাক্ষাৎকারে পূর্ণিমা বলেছিলেন, আপনার অভিনয় দেখে দেখে তিনি অভিনয় শিখেছেন। কিন্তু আপনি কার কাছে শিখেছেন অভিনয়? ‘মা চাইতেন, আমি কিছু একটা করি। ঢাকা নান্দনিকে কাজ করেছি অনেক দিন। অভিনয় শেখাটা ওখানেই।’ বললেন তিনি।
নিয়মিত অভিনয়ের ইচ্ছা আছে কি? ‘একটা কাজ শেষ করলাম। প্রশংসা পেয়েছি। আস্থাও পাচ্ছি। এ জন্য দ্বিতীয় ধারাবাহিকের কাজ করছি।’ পূর্ণিমা বললেন, ‘ও নিয়মিত অভিনয় করলে আমার ভালো লাগবে।’
অভিনয়ের ক্ষেত্রে পূর্ণিমার কোন বিষয়টি আপনার পছন্দ?
‘অভিনয় নিয়ে ওর সিরিয়াসনেস আমার ভালো লাগে। শাস্তি ছবিতে ওর অভিনয় দেখে আমি কেঁদেছি।’ দিলরুবার মুখে নিজের এত প্রশংসা শুনে পূর্ণিমা বললেন, ‘ও আমাকে বেশি ভালোবাসে।’ বোনের কথা কেড়ে নিলেন দিলরুবা, ‘কিন্তু তুমিও তো আমাকে ভালোবাসো, বাসো না?’
‘ছোটবেলার একটা ঘটনা বলি’—এ মুহূর্তে কথা শুরু করেছেন পূর্ণিমা। ‘বিকেল হলেই মাঠে খেলতে যেতাম আমরা। তখন “ছোট” অপবাদ দিয়ে দিলরুবা আমাকে খেলায় নিত না। এ জন্য ওকে মারতাম। বাসায় ফিরে মিথ্যা অভিনয় করে আরও একবার মার খাওয়াতাম মায়ের হাতে...।’
সেদিন এভাবে আরও অনেক গল্পের ঝাঁপি খুলে বসেছিলেন দুই বোন। এখনো সময় পেলেই ঢাকার রাজপথে হেঁটে কিংবা রিকশায় একসঙ্গে ঘুরতে বের হন তাঁরা। ফুচকা আর চটপটি দুজনেরই বড্ড প্রিয়।
ততক্ষণে বৃষ্টি থামলেও মেঘলা আকাশে আগেই চেপে বসেছে অন্ধকার। ওদিকে আমাদের আড্ডার কথা ফুরিয়ে এলেও দুই বোনের খুনসুটি চলছে তখনো।