ম্যাজ মিকেলসন রোমাঞ্চিত! রুপালি পর্দায় তিনি প্রাণ দিয়েছেন যে চরিত্রে, সে চরিত্রেই হাজির হবেন লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও। অস্কারজয়ী ডেনিশ ছবি ‘অ্যানাদার রাউন্ড’ নির্মিত হবে হলিউডে, ইংরেজি ভাষায়। সেখানেই দেখা যাবে ‘টাইটানিক’ অভিনেতাকে।
শুধু অস্কার তো নয়, গোল্ডেন গ্লোব, বাফটা, কান, বিএফআই লন্ডন, স্যান সেবাস্তিয়ান—নানা উৎসবে আলোচিত ‘অ্যানাদার রাউন্ড’। এবার ইংরেজি ভাষার ভার্সনটি নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই চলচ্চিত্রপ্রেমীদের। উৎসাহের শেষ নেই অভিনেতা ম্যাজ মিকেলসনেরও। এবারের অস্কারে আন্তর্জাতিক সিনেমা বিভাগে পুরস্কার পাওয়া এই ছবি কয়েকজন ডেনিশ শিক্ষককে নিয়ে। যাঁরা মনে করেন, ক্রমাগত অ্যালকোহল গ্রহণের ফলে গড়ে উঠতে পারে সুন্দর জীবন। সেই জীবন নিয়ে হতাশ শিক্ষকেরা এই তত্ত্ব নিয়ে নিরীক্ষায় নেমে পড়েন।
নির্মাতা টমাস ভিন্টারবার্গ এই ছবির প্রধান কারিগর। ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র মার্টিনকে রূপায়ণ করেছেন ম্যাজ মিকেলসন। একই চরিত্রে দেখা যাবে লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিওকে। ম্যাজ জানান, কোনো চলচ্চিত্র পুনরায় অন্য ভাষায় তৈরি করা নিঃসন্দেহে কৌশলের ব্যাপার। যদিও ছবিটি ইতিমধ্যে অনেক আমেরিকান দেখে ফেলেছেন। তাই এটা মজার কিছু হতে যাচ্ছে।
অন্য ভাষায় নির্মিত হলে শুধু কি ভাষাই পাল্টে যাবে? নাকি সংস্কৃতিতেও কোনো পরিবর্তন দেখা যাবে? এ নিয়েও আগ্রহ আছে ম্যাজ মিকেলসনের। তিনি বলেন, ‘পানের সাংস্কৃতিক পার্থক্য দেশভেদে পাল্টে যায়। বিশেষ করে ডেনমার্ক ও আমেরিকায় তো একদমই আলাদা। এটা কি আসলেই আমেরিকায় আলাদাভাবে দেখানো হবে? হয়তো, অথবা না। আমি বোঝাতে চাইছি, আসলে ছবিটার মূল গল্প জীবন নিয়ে বিতৃষ্ণা এবং পুনরায় জীবনকে খুঁজে ফেরা।’
এর আগে ম্যাজ জানিয়েছিলেন, এই ছবির জন্য সত্যি সত্যিই পান করে নেশাগ্রস্ত হয়েছিলেন ম্যাজ। কেবল চরিত্রটিকে বাস্তবসম্মত করে তুলতে। এবার দেখার পালা, লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলতে কী করেন। যৌথভাবে ছবিটি প্রযোজনা করছেন লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও ও জেনিফার ড্যাভিসনের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান অ্যাপিয়ান ওয়ে।
এবারের অস্কারে ৯৩টি দেশের মধ্যে চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছিল বসনিয়া হার্জেগোভিনা, আর্মেনিয়া, তিউনিসিয়া, হংকং ও ডেনমার্কের সিনেমা। যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের ডলবি থিয়েটার ও ইউনিয়ন স্টেশনে বসে অস্কারের ৯৩তম আসর।
৪০ পেরোনো চার বন্ধু, যারা পেশায় শিক্ষক, তাদের কাছে ‘জীবন’ একঘেয়েমিতে পূর্ণ একটা ব্যাপার। বেঁচে থাকাই তাদের কাছে মনে হয় নিরর্থক। স্কুলে ও ব্যক্তিগত জীবনে তাদের আচরণ মনে করিয়ে দেয়, মহৎ পেশায় যুক্ত থাকলেও জীবন নিয়ে তারা এখন বিরক্ত। হঠাৎ তারা অনলাইন ঘেঁটে জানতে পারেন, জীবনকে সজীব ও স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ করা যায়। এ জন্য রক্তে অ্যালকোহলের মাত্রা বাড়াতে হবে। অ্যালকোহল পান করে তারা জীবনের ছন্দ খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করেন।
বিষাদ ও অবসাদ জেঁকে বসেছিল নির্মাতা টমাস ভিন্টারবার্গকেও। এই ছবি তৈরিতে উৎসাহ দিয়েছিলেন তাঁর মেয়ে আইডা। কিন্তু শুটিংয়ের চার দিনের মাথায় এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তাঁর মেয়ে। সেই শোকে ভিন্টারবার্গ মুষড়ে পড়েন। ছবিটি থেকে একেবারে সরে আসতে চেয়েছিলেন তিনি। নিজের জীবনই তাঁর কাছে হয়ে উঠেছিল বিভীষিকাময়। তাঁর নিজেরই তখন জীবনের ওপর নিয়ন্ত্রণ ছিল না। পরে মেয়েকে স্মরণীয় করে রাখতে তিনি আবার শুটিং শুরু করেন। ফলে ভিন্টারবার্গের অবসাদ চিত্রনাট্যকে করেছে আরও জীবন্ত।
এ কারণে অস্কার আসরে যখন ‘অ্যানাদার রাউন্ড’–এর নাম ঘোষণা করা হয়, আল্পুত হয়ে পড়েন টমাস। ছলছল করে ওঠে তাঁর চোখ। বারবার মেয়ে আইডাকে স্মরণ করেন তিনি। পুরস্কারটি উৎসর্গ করেন তাঁকে। অস্কারের রাতে মেয়েকে নিয়ে আবেগঘন বক্তব্য দিয়েছিলেন ভদ্রলোক। ভিন্টারবার্গ পুরস্কার হাতে বলেন, ‘আমরা তাকে (আইডা) মিস করি। আমরা তাকে ভালোবাসি। আজ আইডা এখানে থাকলে করতালি দিয়ে চিৎকার করত। আইডা, এই অলৌকিক ঘটনার অংশ তুমিও। তুমি আমাদের মধ্যে আছ। এই পুরস্কার তোমার জন্য।’