ছবির কাছে কৃতজ্ঞ ছবি

ফারজানা ছবি। ছবি: খালেদ সরকার
ফারজানা ছবি। ছবি: খালেদ সরকার

রাইড শেয়ারিং অ্যাপের হয়ে বাইক চালান শাহনাজ আক্তার। মাস কয়েক আগে তাঁকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হয়ে গেল বিস্তর আলোচনা। শাহনাজের কঠিন জীবনসংগ্রাম অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে অনেককে। এবার সেই শাহনাজের জীবনকে সবার আরও কাছাকাছি নিয়ে আসার জন্য বানানো হয়েছে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। তাতে বাইকার শাহনাজের চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফারজানা ছবি। আমরা ছবির সঙ্গে কথা বলতে বসি তাঁর সাম্প্রতিক কাজ ও জীবন নিয়ে। তিনি  

বাইকারের জীবনী

সিঙ্গল মাদার, সংগ্রামী নারী শাহনাজ আক্তার জীবিকার তাগিদে প্রতিদিন বাইক নিয়ে পাড়ি দেন মাইলের পর মাইল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক আলোচনা, প্রশংসা, বাহবা পেলেও তাতে কিন্তু শাহনাজের জীবনসংগ্রাম সহজ হয়নি। বরং আগে যতটা জটিল ছিল, তেমনই রয়ে গেছে। কিন্তু এই দুই কন্যার জননী গত ২৩ জুন সন্ধ্যায় তাঁর কর্মব্যস্ত দিন থেকে একটি বিরতি পেয়েছিলেন। বেড়াতে গিয়েছিলেন অভিনেত্রী ফারজানা ছবির বাসায়। সঙ্গে নিয়ে যান দুটো পান। কাঁচা সুপারি আর জর্দা দেওয়াটা নিজের জন্য, আর অন্যটা ফারজানা ছবির। কিন্তু সেই পান খেয়ে ২০১৪ সালে সমালোচক বিভাগে সেরা টিভি অভিনেত্রীর মেরিল–প্রথম আলো পুরস্কারজয়ী এই অভিনেত্রী চোখ উল্টে, মাথা ঘুরে পড়লেন। কারণ ভুল করে তিনি ওই জর্দা দেওয়া পানটিই খেয়ে নিয়েছেন! তবে এই ভুলটা দুশ্চিন্তার চেয়ে বেশি আনন্দ আর হাসির রসদ হয়ে উঠল। কারণ শাহনাজের সঙ্গে এখন ছবির খুব ভাব। অপরাজিতা নামে ১০ মিনিটের স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবিতে শাহনাজের চরিত্র করতে গিয়ে ফারজানা ছবি নিজেকে সংগ্রামী মা ও বাইকের জীবনের সঙ্গে অনেকটা মিলিয়ে ফেলেছেন, অনুভব করেছেন এক অদ্ভুত নৈকট্য। তাই পুতুলের পান খাওয়ার অভ্যাসটাও ছবির কাছে খুব সহজাত হয়ে উঠেছে। 

শুটিং অভিজ্ঞতা

পিস ফর ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় অপরাজিতা ছবিটি নির্মাণ করেছেন পাঁচ তরুণ নির্মাতা—শহীদ মাহমুদ, আসিমা কামাল, তানজির আহমেদ, ফাহমিদা আলম ও মোহাম্মদ আনিস। শহীদ মাহমুদের কণ্ঠে ঝরে পড়ল ছবির অভিনেত্রীকে নিয়ে অকুণ্ঠ প্রশংসা, ‘ফারজানা ছবি যে অভিজ্ঞ অভিনেত্রী এ নিয়ে তাঁর ভেতরে কোনো অহংকারের লেশমাত্র নেই। তিনি মাত্র পাঁচ দিনে বাইক চালানো শিখেছেন। মাত্র দুই দিনে করা হয়েছে পুরো শুটিং। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় আগে থেকে শুটিংয়ের অনুমতি না নেওয়ায় কাজ করতে গিয়ে একটু জটিলতা হয়েছিল। ফারজানা ছবি তখন অকল্পনীয়ভাবে আমাদের সহযোগিতা করলেন। চিত্রনাট্যের ঝুঁকিপূর্ণ দৃশ্যগুলো আমরা বাদ দিতে চাইছিলাম, কিন্তু তিনি একমুহূর্ত ভেবে বললেন, ওই দৃশ্যগুলো তিনি করবেনই।’ 

ফারজানা ছবি একনাগাড়ে বলে গেলেন তাঁর শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা। তিনি তাঁর কাছ থেকেই বাইক চালানোর তালিম নিয়েছেন যাঁর চরিত্রকে পর্দায় তুলে ধরবেন, অর্থাৎ শাহনাজ আক্তার। প্রথম যেদিন প্রশিক্ষণের বাইক হাতে পেলেন, সেদিন কলেজশিক্ষক স্বামী তন্ময় সরকার বাইক ধরে দৌড়েছেন স্ত্রীর সঙ্গে। এরপর শাহনাজ তাঁকে নিজের জীবিকার মূল হাতিয়ার প্রাণপ্রিয় বাইক ধরিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, ‘বাইকের যা হওয়ার হোক, খেয়াল রাখবেন আপনার যেন কিছু না হয়।’ এরপর তো বাইক চালানো শেখা হলো, শিখতে গিয়ে অনেকবার হোঁচট খাওয়াও হলো, শুটিংও হলো। আগামী ৮ জুলাই শাহবাগের পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে উদ্বোধনী প্রদর্শনী হবে এই কঠোর পরিশ্রমে বানানো ছবির। 

বাইকার শাহনাজই ছবির প্রশিক্ষক এবং তাঁর চরিত্রেই অভিনয় করেছেন ছবি

কৃতজ্ঞ ছবি

সীমানা পেরিয়ে নাটকের যে চরিত্রের জন্য ফারজানা ছবি মেরিল– প্রথম আলো পুরস্কার জিতেছেন, সেটা ছিল শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী শিউলি সাথীর জীবন নিয়ে বানানো। বাস্তবের শিউলি সাথীকে ছবি নিজের বাড়িতে ডেকে এনেছিলেন। কাছ থেকে বুঝেছিলেন মানুষটাকে। অপলক তাকিয়ে
দেখেছেন, কীভাবে ঘুমায় রক্তমাংসের শিউলি সাথী। ছবির মতে, এই চরিত্রগুলো শুধু অভিনেত্রী হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবে গড়েছে তাঁকে। শক্তি আর অনুপ্রেরণা দিয়ে এগিয়ে নিয়েছে। তাই ব্যক্তি ছবি অভিনেত্রী ছবির কাছে কৃতজ্ঞ। 

সামনের কাজ

বর্তমানে ফারজানা ছবি ব্যস্ত আছেন বকুলপুর, লাকি থার্টিন ও অন্তরীণ নামের তিনটি ধারাবাহিক নিয়ে। দুরন্ত টিভির আরেকটি শিশুতোষ ধারাবাহিকের কাজ শুরু করবেন শিগগিরই। জানতে চাইলাম, এত কাজের ভেতর ছোট দুই ছেলে আর পরিবার সামলান কীভাবে? উত্তর দিলেন, ‘জীবন তো একটাই। পরের জীবনের জন্য কিছু ফেলে রাখার সুযোগ নেই। তাই একজীবনেই ভারসাম্য রেখে যা কিছু করতে চাই, সব করছি। মা হতে চেয়েছি, হয়েছি। অভিনয়টাও চালিয়ে নিয়েছি। তিন মাসের সন্তানকে নিয়ে গেছি শুটিংয়ে। শট দিয়ে গাড়িতে এসে বাচ্চাকে খাইয়েছি।’ এভাবেই ফারজানা ছবি প্রতিনিয়ত নিজের সীমানা পেরিয়ে যাচ্ছেন। থেমেছেন, আবার উঠে দাঁড়িয়েছেন। কোনো শক্তিই পরাস্ত করতে পারেনি তাঁর শক্তিকে। এভাবেই একটু একটু করে মাটিতে পা রেখে বাস্তবতাকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন আকাশ স্পর্শ করার দিকে।