চলচ্চিত্র মুক্তিতে অনিয়ম ঠেকাতে পদক্ষেপ নিচ্ছেন প্রযোজকেরা

একটি সিনেপ্লেক্সের অভ্যন্তর। ছবিটি প্রতীকি হিসেব ব্যবহার করা হলো
একটি সিনেপ্লেক্সের অভ্যন্তর। ছবিটি প্রতীকি হিসেব ব্যবহার করা হলো

অনিয়ম ও অপচয়ের কারণে চলচ্চিত্র প্রযোজকদের লোকসান হচ্ছে। সিনেমা মুক্তির সময়ও ঘটছে নানা বিশৃঙ্খল ঘটনা। এসব কারণে পদে পদে ঠকছেন প্রযোজকেরা। সেসব ঠেকাতে এরই মধ্যে গঠিত হয়েছিল চলচ্চিত্র নির্মাণসংক্রান্ত নীতিমালা কমিটি। প্রযোজক বাঁচাতে এবার চলচ্চিত্র পরিবেশনা নিয়েও গঠিত হয়েছে ১৯ সদস্যের একটি কমিটি।

জানা গেছে, কোনো কোনো হলের মালিক নিজেরাই একটি নিয়ম করেছেন। ছবি মুক্তির প্রথম সপ্তাহে টিকিট বিক্রির মোট টাকা থেকে কর বাবদ বড় অঙ্কের টাকা কেটে রাখেন তাঁরা। দেশের অনেক প্রেক্ষাগৃহ, বিশেষ করে যশোরের মণিহার ৩০ হাজার, ঢাকার পুনম ২০ হাজার, নারায়ণগঞ্জের মেট্রো ২০ হাজার টাকা করে কেটে রাখে। বাকি টাকা প্রযোজক ও হলের মালিকের মধ্যে ভাগাভাগি হয়। নতুন কমিটি এটা চলতে দিতে চায় না। সরকার সিনেমা হলের কর মওকুফ করে দিয়েছে। ভ্যাট ও পৌরকর বাবদ টিকিটপ্রতি ১০ থেকে ১২ টাকা কেটে রাখেন হলের মালিক। কেবল এ নিয়মটি বহাল থাকবে। এত দিন প্রজেক্টর ভাড়া বহন করে আসছিলেন প্রযোজক। এখন থেকে হলের মালিককে এ ভাড়া দিতে হবে। প্রযোজক কনটেন্ট খরচ বাবদ বড় হলকে চার হাজার এবং ছোট হলকে দেবেন দুই হাজার টাকা। বুকিং এজেন্ট কাজ করেন সিনেমা হলের পক্ষে। কিন্তু বুকিং বাবদ প্রতি লাখে শতকরা ১০ থেকে ১৫ টাকা দেন প্রযোজক। এই টাকাও আর প্রযোজক দেবেন না। এই খরচ বহন করতে হবে হলের মালিককে। কোনো কোনো হল দর্শকের কাছ থেকে টিকিটের দামের অতিরিক্ত টাকা নেয়। যেমন ঢাকার রানীমহল ও মতিমহল ৫০ টাকার টিকিট নেয় ১০০ টাকা করে। একই ভাবে ঢাকার পুনম, ভৈরবের মধুমিতা, কাঁচপুরের চাঁদমহল, সাভার সেনানিবাসসহ অনেক হলেই এ রকম অনিয়ম রয়েছে। নতুন কমিটি এসব বন্ধ করতে চায়।

চলচ্চিত্র পরিবেশনার নতুন কমিটির আহ্বায়ক প্রযোজক কামাল মোহাম্মদ কিবরিয়া লিপু বলেন, ‘চলচ্চিত্র প্রযোজকদের বাঁচাতে এই কমিটি করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ছবি মুক্তির সময় অনিয়ম করে প্রযোজককে যেভাবে ঠকানো হচ্ছে, এভাবে চলতে থাকলে প্রযোজকেরা আর ছবি নির্মাণ করতে আসবেন না। এমনিতেই দেশের বড় বড় প্রায় সব প্রযোজকই চলে গেছেন। আর ছাড় দেওয়া যায় না।’

কমিটির অন্য নেতারা বলেন, কোনো কোনো হল শেয়ারের টাকার ৪০ শতাংশ প্রযোজককে দেয়, বাকি ৬০ শতাংশ পান হলের মালিক। টঙ্গীর চম্পাকলি হল প্রতি শুক্রবার ১০০ টাকার টিকিটের কোনো হিসাব দেয় না প্রযোজককে। একইভাবে শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার প্রতিদিন ২৮টি টিকিটের হিসাব প্রযোজককে দেন না এই হলের মালিক। এটা কি কোনো নিয়মের মধ্যে পড়ে? অনেক প্রযোজকের টাকা হলের মালিকদের কাছে পড়ে আছে। বছরের পর বছর আদায় করতে না পেরে চলচ্চিত্র ছেড়েছেন তাঁরা। এখন থেকে ছবি মুক্তির এক সপ্তাহের মধ্যে টিকিটের শেয়ার মানি হলের মালিক প্রযোজককে বুঝিয়ে দেবেন।

পরিবেশনাসংক্রান্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ প্রেক্ষাগৃহই এ ধরনের নানা সমস্যার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। কমিটির নেতারা এবার শক্ত অবস্থান নিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, অভিযুক্ত হলগুলো এ ধরনের সমস্যা সমাধান না করলে তাদের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করা হবে।

এদিকে চলচ্চিত্র মুক্তির পথে পথে অরাজকতা ঠেকাতে কমিটির নেতারা হলের মালিকদের সঙ্গে বসতে শুরু করেছেন। এরই মধ্যে মণিহার, চম্পাকলি, রানীমহল, মতিমহল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সভা করেছেন প্রযোজকেরা। পর্যায়ক্রমে আরও প্রায় ৫০টি হল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসবেন তাঁরা। লিপু বলেন, ‘বিদ্যমান সমস্যাগুলো নিয়ে এ পর্যন্ত তিনটি মিটিং করেছি। আরও প্রায় ৫০টি হলের সঙ্গে বসব। যে হলের মালিকেরা সমস্যাগুলো সমাধানে এগিয়ে আসবেন না, তাঁদের সঙ্গে আমরা ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করব।’ এই প্রযোজক নেতা আরও জানান, ভবিষ্যতে হলে হলে কোনো প্রতিনিধিও পাঠানো হবে না। এ জন্য ই-টিকিটিংয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

কমিটির অন্যতম সদস্য মনির সিদ্দিকী বলেন, ‘প্রায় আট বছর প্রযোজক সমিতি ছিল না। এতে চলচ্চিত্রে বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি হয়েছে। আমরা একে নিয়মের মধ্যে আনতে চাই। প্রদর্শক সমিতি এবং আলাদাভাবে হল কর্তৃপক্ষকে ডাকছি, কথা বলছি। সবাই আমাদের সহযোগিতার আশ্বাস দিচ্ছেন।’

মণিহার সিনেমা হলের ব্যবস্থাপক তোফাজ্জেল হোসেন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, কমিটির আহ্বানে ঢাকায় মিটিংয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন তিনি। তিনি বলেন, ‘করের বিষয়ে কমিটি যা বলেছে, সে ব্যাপারে আমি কোনো সিদ্ধান্ত দিইনি। মালিক ভারত থেকে ফিরলে সিদ্ধান্ত হবে।’