চলচ্চিত্র দিবস কাটবে নীরবে

গেল বছর এফডিসিতে জাতীয় চলচ্চিত্র দিবসের শোভাযাত্রার একটি মুহূর্ত। ফাইল ছবি।
গেল বছর এফডিসিতে জাতীয় চলচ্চিত্র দিবসের শোভাযাত্রার একটি মুহূর্ত। ফাইল ছবি।

১৯৫৭ সালের ৩ এপ্রিল প্রাদেশিক আইন পরিষদের শেষ দিন তৎকালীন শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘পূর্ব পাকিস্তান চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা’ বিল উত্থাপন করেন। ওই দিন পরিষদে উপস্থিত ছিলেন ১১ মন্ত্রী ও ২৫০ সদস্য। স্পিকার ছিলেন আবদুল হামিদ। বিল উত্থাপনের পর প্রাদেশিক আইন পরিষদ সদস্য আবদুল মতিন, ইমদাদ আলী ও মনীন্দ্র নাথ ভট্টাচার্য বিলে সামান্য সংশোধনী আনেন। সংশোধনীর পর বিলটি বিনা বাধায় আইন পরিষদে পাস হয়। এই বিলের সূত্র ধরেই জন্মলাভ করে চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা এফডিসি।

২০১২ সালের ৩ এপ্রিল থেকে জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস উদ্‌যাপন শুরু হয়। আট বছর নিরবচ্ছিন্নভাবে দিবসটি পালিত হলেও এবার ছন্দপতন ঘটেছে। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা স্থবির। এমন অবস্থায় চলচ্চিত্র দিবসও পালিত হচ্ছে না। চলচ্চিত্রের নানা সংগঠন দিনটিকে ঘিরে মাসখানেক আগে থেকে প্রস্তুতি নিলেও এবার তার ব্যতিক্রম হয়েছে। তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। অঘোষিতভাবে দিবসটি বাতিল হয়ে গেছে।

প্রতিবছর এ দিনে এফডিসিকে সাজানো হয় ব্যানার-ফেস্টুন দিয়ে। শোভাযাত্রা বের করা হয়। স্থিরচিত্র প্রদর্শনী থাকে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকে। সাজ সাজ রব পড়ে যায় চলচ্চিত্রের কারখানায়। চিত্রতারকারা আসেন। সরকারি কর্মকর্তারা আসেন। অংশ নেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। চিত্রতারকারা উপস্থিত থাকেন। তাঁদের দেখতে ভিড় জমে। এবারের চিত্র একেবারেই অন্য রকম। থাকছে না ছোট–বড় কোনো আয়োজন।

চলচ্চিত্র দিবসের অনুষ্ঠানকে ঘিরে চলে মান-অভিমানও। আমন্ত্রণ না পেয়ে গোস্বা হন অনেক শিল্পী। আবার অনেক শিল্পীকে না পেয়ে আয়োজকেরা মন খারাপ করেন। বছর দু-এক আগে দুই ভাগে দিবস উদ্‌যাপনের নজিরও আছে। সরকারিভাবে একটি অনুষ্ঠান হয়। শিল্পী-নির্মাতারা আরেকটি অনুষ্ঠান করেন। এবার সেসবেরও বালাই নেই।

২০১৬ সালের চলচ্চিত্র দিবসের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নাচছেন ইমন ও তমা

‘প্রথম আলো’র কাছে আক্ষেপ করলেন চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার। প্রতিবছর চলচ্চিত্র দিবসকে ঘিরে অনেক ব্যস্ততা থাকত তাঁর। এবার তেমন কিছু নেই বলে ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। দেশের বৃহৎ স্বার্থে এটুকু মেনে নিতে হবে বলে তাঁর মন্তব্য।

অভিনেতা কায়েস আরজু দারুণ উপভোগ করতেন দিনটি। দিনভর তাঁকে দেখা যেত এফডিসিতে। ‘ভালো লাগত দিনটিতে। সিনেমার লোকদের সম্পূর্ণ নিজেদের একটি দিন। এফডিসিতে ঘুরে ঘুরে কাটিয়েছি দিনটি। আড্ডা দিয়েছি। দেখা হতো অনেকের সঙ্গে। এবার অনুষ্ঠান হলেও হয়তো একই রকম হতো।’

দিবসের মেলায় পত্রিকার স্টল নিয়ে বসতেন মিল্টন। তাঁর কথায় আফসোস, ‘খুব ভালো লাগত এই আয়োজন। মৃত এফডিসিতে প্রাণ আসত এই দিনে। অনেক মানুষের সঙ্গে দেখা হতো। এবার হবে না, তাই খারাপ লাগছে। হয়তো আগামী বছর আরও বর্ণাঢ্য আয়োজন হবে। প্রত্যাশা করছি সেটাই।’

স্থিরচিত্র প্রদর্শনীতে বিরল সব স্থিরচিত্রের দেখা পাওয়া যেত। পোস্টার প্রদর্শনীতে থাকত দুর্লভ পোস্টার। আগ্রহীদের ভিড়ে জমজমাট থাকত এফডিসি। সেই স্মৃতি হাতড়ালেন আলোকচিত্রী রিফাত। বললেন, ‘স্টিল ফটোর টানে চলে আসতাম প্রতিবছর। এবার যেতে পারব না। খুব মিস করব।’

চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা, ফিল্ম আর্কাইভ, সেন্সর বোর্ডসহ তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রতিটি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের কর্মতৎপরতা থাকত চলচ্চিত্র দিবসে। এবার সমস্ত প্রতিষ্ঠানে ছুটি, নেই ছোটাছুটি। নীরবেই কেটে যাবে চলচ্চিত্র দিবস।