চলচ্চিত্রে আমজাদ হোসেন একজনই ছিলেন

গোলাপী এখন ট্রেনে চলচ্চিত্রে ববিতা
গোলাপী এখন ট্রেনে চলচ্চিত্রে ববিতা

আমি শুনে খুবই মর্মাহত। আমজাদ ভাইয়ের বেশির ভাগ ছবি করেছিলাম আমি, যেগুলো ছিল মাইলস্টোন। আমজাদ ভাইয়ের সবচেয়ে বড় গুণ ছিল, তাঁর ছবি যেমন পুরস্কৃত হতো, তেমনি বাণিজ্যিকভাবেও আয় করত। মৃণাল সেন পর্যন্ত তাঁর ছবির সাংঘাতিক প্রশংসা করেছেন। চলচ্চিত্রে আমজাদ হোসেন একজনই ছিলেন।

ছেলে থাকে বলে এখন অনেক সময়ই আমি কানাডা–আমেরিকায় যাই। এ জন্য আমজাদ ভাইয়ের সঙ্গে কম দেখা হতো। তাঁকে কেউ ভুলতে পারবে না। তিনি একজনই। ছবিতে গ্রামবাংলাকে এত সুন্দর করে তুলে আনতে পারতেন তিনি! আমেরিকা থেকে ফিরে আসার পথে বিমানে আমি আমজাদ ভাইয়ের অসুস্থতার খবর পাই। দেশে ফিরেই তাঁর সঙ্গে দেখা করলাম। আশা করেছিলাম, তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। কিন্তু আমার সে আশা পূরণ হলো না।

আমজাদ ভাই একজন অসাধারণ লোক ছিলেন। তাঁকে নিয়ে আমার অনেক স্মৃতি, বলে শেষ করা যাবে না। দু–একটি কথা শুধু বলি। আমজাদ ভাইয়ের ছবির শুটিং মানে গ্রামে শুটিং। নয়নমনি, গোলাপী এখন ট্রেনে ছবিগুলো ছিল গ্রামকেন্দ্রিক। কনকনে শীতে মানিকগঞ্জে নদীর পাড়ে শুটিং করেছি, সে কথা মনে আছে। আমজাদ ভাইয়ের সেই ছবিগুলোয় আমি ছাড়াও কাজ করেছিলেন রওশন জামিল, আনোয়ারা ও ফারুক। আমাদের ছবিগুলো সুপারহিট হয়েছিল। এই কজন যে ছবিতে থাকবে, ওই ছবি সুপারহিট হবেই হবে।

ববিতা

আমজাদ ভাইয়ের সঙ্গে সর্বশেষ যে ছবিটি করেছি, সেটি হলো গোলাপী এখন ঢাকায়। তবে তিনি সব সময় বলতেন, আরও একটা ছবি করবেন। সেটা আর করা হলো না। আমজাদ ভাই অন্য অনেক পরিচালকের মতো ছিলেন না। তাঁর ছবির শুটিং হলেই আমরা কেমন সিরিয়াস থাকতাম। এখন তো শুটিংয়ে সমস্যা কম, শিল্পীরা শুটিংয়ে গিয়ে আরামেই থাকে। সে সময় আউটডোর শুটিংয়ে আমরা কোনোরকমে থাকতাম। মানিকগঞ্জে একবার শুটিংয়ে গিয়ে দেখি, আমাদের রুম ঠিক নেই, রুমের ভেতরে লাইট নেই। আমাদের রাতের খাবারেরও কোনো ব্যবস্থা নেই। কিন্তু এটা কোনো ব্যাপার ছিল না। আমরা বলতাম, এই দোকান থেকে বাল্ব নিয়ে এস। পাশের ছাপরা হোটেল থেকে ভর্তা–টর্তা, মাছ কিনে নিয়ে এসো। আমরা নিজেরা কিনে এনে খেতাম। যেহেতু কাজটা আমজাদ হোসেনের।

একটা কথা মনে পড়ছে। আমরা রাত দুইটা–তিনটা পর্যন্ত বসে আছি। কনকনে শীত। অপেক্ষায় আছি কখন শুটিং আরম্ভ হবে। যেই ডাক আসত, আমরা খুশিতে ছুটে যেতাম। আমজাদ ভাই আমাদের শট নেবেন, মনভরে অভিনয় করতে পারব। এই জিনিস আর কোনো পরিচালকের মধ্যে আমি পাইনি। মাঝেমধ্যে তাঁর ওপর বিরক্ত হওয়ার ঘটনা ঘটত। পরে অবশ্য জেনেছি, এটা তাঁর দোষ ছিল না। আমরা সবাই সকালবেলা যার যার পোশাক পরে তৈরি হয়ে আছি, অথচ আমজাদ ভাই তৈরি হননি। তিনি দেরি করে এসেছেন। পরে জানতে পারলাম, গ্যাস্ট্রিকের কারণে সারা রাত তাঁর পেটে ব্যথা করেছে। আরেকটা কথা বলি, এমনও হয়েছে, সব প্রস্তুত কিন্তু সিকোয়েন্স লেখা নেই। তিনি দ্রুত লিখে ফেললেন এবং কাজটা এত ভালো হলো যে আমাদের চোখে পানি এসে গেল! সবাই আমরা পাল্লা দিয়ে অভিনয় করতাম।

আমজাদ ভাই নেই, এ কথা ভাবতে কষ্ট হচ্ছে। মনে পড়ে যাচ্ছে অনেক স্মৃতি। শুধু এখন একটা কথাই বলব, যেখানে থাকুন, ভালো থাকুন আমজাদ ভাই।