চলচ্চিত্রের আহ্বানে দর্শকের সাড়া

উৎসবে আগত দর্শকদের সঙ্গে নাবিলা (মাঝে)
উৎসবে আগত দর্শকদের সঙ্গে নাবিলা (মাঝে)

শিপ্রা রানী কর্মকার এসেছেন ঢাকার আগারগাঁও থেকে। হাতে আয়নাবাজির টিকিট। অপেক্ষা করছেন অনেকক্ষণ। ছবি শুরু হতে আরও আধা ঘণ্টা বাকি। কিন্তু বসছেন না কোথাও। কীসের অপেক্ষা তাঁর? শিপ্রা জানান, ছেলের জন্য অপেক্ষা করছেন তিনি। ছেলে আসছে মিরপুর থেকে। পত্রিকায় মেরিল–প্রথম আলো চলচ্চিত্র উৎসবের খবর পড়ে মা–ছেলে সিনেমা দেখার পরিকল্পনা করেছেন। তাই বেশ প্রস্তুতি নিয়ে আগেভাগেই প্রেক্ষাগৃহে চলে আসা। বাংলা সিনেমা দেখার এমন অনেক গল্প ১৯ ও ২০ এপ্রিল দেখা গেছে রাজধানীর ধানমন্ডির স্টার সিনেপ্লেক্স সীমান্ত সম্ভারে ‘মেরিল–প্রথম আলো চলচ্চিত্র উৎসব ২০১৯’–এ।

স্টার সিনেপ্লেক্স সীমান্ত সম্ভারে জয়া আহসান। ছবি: শুভ্র কান্তি দাস

মেরিল ও প্রথম আলো এ বছরই প্রথমবারের মতো আয়োজন করেছে চলচ্চিত্র উৎসব। দুই দিন ধরে উৎসবটি চলে। উৎসবের সহযোগী ছিল স্টার সিনেপ্লেক্স। দিনের আয়োজনে দর্শক যেমন অংশ নেন, তেমনই উৎসবে প্রদর্শিত ছবিগুলোর পরিচালক ও শিল্পীরাও উপস্থিত ছিলেন। অনলাইনে নিবন্ধনের মধ্য দিয়ে দর্শক এ উৎসবের অংশ হন। দুই দিনে দেখানো হয় আটটি বাংলা চলচ্চিত্র। এগুলো হলো গিয়াস উদ্দিন সেলিম পরিচালিত স্বপ্নজাল, আকরাম খানের খাঁচা, অনম বিশ্বাসের দেবী, মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর টেলিভিশন, নূর ইমরান মিঠু পরিচালিত কমলা রকেট, দীপঙ্কর দীপনের ঢাকা অ্যাটাক, অমিতাভ রেজার আয়নাবাজি ও তৌকীর আহমেদের অজ্ঞাতনামা

উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম, আকরাম খান ও দীপঙ্কর দীপন। এরপর বিকেলে নিজের অভিনীত খাঁচা ছবির প্রদর্শনীর পর ও দেবীর প্রদর্শনীর আগে সিনেমা হলে গিয়ে হাজির হন অভিনেত্রী ও প্রযোজক জয়া আহসান। ভক্তরা সিনেমা দেখার পাশাপাশি বোনাস হিসেবে প্রিয় অভিনেত্রীকে কাছে পেয়ে তো আনন্দে আটখানা। কেউ ছবি তোলার আবদার করেন, কেউ আবার অটোগ্রাফের। হাতে দেবীর টিকিট নিয়ে এসে জয়াকে দেখিয়ে বলেন, ‘দেখুন দেখুন, এখনই আপনার সিনেমা দেখতে ঢুকব। এর আগেও দেখেছি।’ এভাবেই কত কত ভালো লাগার কথা ভক্তরা শোনান শিল্পী ও পরিচালকদের।

নিবন্ধিত দর্শকদের মধ্যে যেমন ছিল তরুণ–তরুণীদের উপস্থিতি, তেমনই বয়োজ্যেষ্ঠরাও দেখিয়েছেন উচ্ছ্বাস। মধ্যবয়সী বাবা সোহেল তাঁর কিশোর ছেলেকে নিয়ে উৎসবের দ্বিতীয় দিনের প্রতিটি চলচ্চিত্র দেখেছেন। একইভাবে আরেকটি পরিবার কয়েকটি আলাদা আলাদা নম্বর থেকে তিনবার নিবন্ধন করে ছয়টি টিকিট কেটেছে। উৎসবটি যেন ছড়িয়ে পড়েছিল পরিবারে পরিবারে।

শুধু নিবন্ধিত দর্শকই নন, প্রথম দিনের সাড়া দেখে উৎসবের দ্বিতীয় দিন নিবন্ধনের নিয়মে কিঞ্চিৎ পরিবর্তন আনা হয়। পত্রিকায় ঘোষণা করা হয়, ছবির প্রদর্শনী শুরুর পর আসন খালি থাকা সাপেক্ষে টিকিট বুথে উপস্থিত অনিবন্ধিত দর্শকও সিনেমা দেখার সুযোগ পাবেন। ব্যস, তাতেই রীতিমতো হুল্লোড় পড়ে যায়। ধানমন্ডি এলাকার আশপাশের কর্মজীবীরা শনিবার উৎসবের শেষ দিন স্টার সিনেপ্লেক্সে এসে হাজির। বেশি দামে টিকিট কিনে মাল্টিপ্লেক্সে সিনেমা দেখার সাধ্য যাঁদের নেই, তাঁরা ছুটে আসেন স্টার সিনেপ্লেক্স সীমান্ত সম্ভারে। এমনকি সীমান্ত সম্ভার ফুড কোর্টের কয়েকজন কর্মীও আধা বেলা ছুটি নিয়ে শখের মাল্টিপ্লেক্সে ঢোকার সাধ মেটান, সিনেমা দেখেন।

উৎসবের শেষ দিন দর্শকদের সঙ্গে বসে নিজের অভিনীত আয়নাবাজি দেখেন মাসুমা রহমান নাবিলা। এক পরিবার তৃতীয়বারের মতো দেখতে এসেছে আয়নাবাজি। আরেক কিশোরী পরীক্ষার জন্য সিনেমা হলে বসে ছবিটি আগে দেখতে পারেনি। এবারই হলে বসে প্রথম দেখল ছবিটা। এমন নানা গল্প শুনে অভিভূত হন নাবিলা। একই দিনে ঢাকা অ্যাটাক ছবির তাসকিন রহমানও এসে চমকে দেন ভক্তদের। সবার সঙ্গে বসে দেখেন সিনেমা। তিনি প্রত্যাশা করেন, এটা যেন শেষ না হয়। প্রতিবছরই যেন মেরিল ও প্রথম আলো পাঠক ও দর্শকের কথা ভেবে এ উৎসবের আয়োজন করে যাক।