গোপন বিয়ে থাকেনি গোপন

সাইমন-দীপা সাদিক। ছবি: সংগৃহীত
সাইমন-দীপা সাদিক। ছবি: সংগৃহীত

‘এখই বিয়ের কথা ভাবছি না’, ‘আমার বিয়ে অথচ আমিই জানি না!’, ‘আমরা তো আসলে খুবই ভালো বন্ধু’—বিয়ে করে দিব্যি সংসার করে ঘুরে বেড়ানো দেশের অনেক তারকাই এমন কথা বলে বেড়ান। নানা অজুহাতে এসব তারকা তাঁদের বিয়ের কথাটি গোপন রাখার চেষ্টা করেন। অথচ একটা সময় ব্যর্থ হন। বিয়ের কথাটি প্রকাশ্যে আনতে বাধ্য হন। গোপনে সেরে নেওয়া বিয়ে প্রকাশ্যে এলে বলে দেন, ‘আমরা একেবারে ঘরোয়াভাবে বিয়ের অনুষ্ঠান করছি, তাই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হোক, চাইনি।

এই তো কিছুদিন আগের ঘটনা। বিয়ের ছয় বছর পার করে স্ত্রী ও সন্তানদের কথা জানান চিত্রনায়ক সাইমন সাদিক। ঢালিউডের এই সময়ের জনপ্রিয় নায়ক যখন বিয়ের কাজটি সেরে নেন, তত দিনে দেশের প্রেক্ষাগৃহে তাঁর একাধিক ছবি মুক্তি পায়। স্ত্রী ও পরিবারের অন্য সদস্যদের পরামর্শে জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ার আশঙ্কায় বিয়ের খবরটি চেপে যান সাইমন।

জাকিয়া বারী মম-শিহাব শাহীন। ছবি: সংগৃহীত

২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর একেবারে ঘরোয়া আয়োজনে বিয়ের কাজ সেরে নিলেও সম্প্রতি তা প্রকাশ্যে আনেন সাইমন। বিয়ের বিষয়টি গোপন রাখার কারণ প্রসঙ্গে সাইমন বলেন, ‘আমাদের দেশে সবার ধারণা, বিয়ের খবর ভক্ত ও দর্শকেরা জানতে পারলে জনপ্রিয়তা কমে যাবে। এটা ভেবে পরিবার থেকে আমার স্ত্রী আর অন্যরা বিয়ের বিষয়টি সামনে আনতে চাইছিলেন না। কিন্তু আমার অভিজ্ঞতায় বলতে হচ্ছে, এটা ভুল ধারণা। দর্শক ভালো অভিনয় দেখতে চান। ভালো গল্পের সিনেমা দেখতে পারলে নায়ক-নায়িকা বিবাহিত নাকি অবিবাহিত, তা মোটেও তাঁদের কাছে ম্যাটার করে না। আমি এ-ও মনে করি, বিয়ে অনেক বড় একটা আশীর্বাদ। আমি দুই সন্তানের বাবা, এটা অনেক সৌভাগ্যের ব্যাপার।’

 চার বছর পর নিজেদের মতো করে সংসারজীবন করে গেলেও বিয়ের কথাটি কিউকে জানাতে চাননি মম ও শিহাব শাহীন। গত বছরের নভেম্বরে মমর জন্মদিন প্রকাশ্যে আসে তাঁদের বিয়ের খবর। চতুর্থ বিয়ে বার্ষিকী উপলক্ষে কেক কাটার ছবি ফেসবুকে আপলোড করার পর বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।

সিয়াম-অবন্তী। ছবি: সংগৃহীত

মম ও শিহাব শাহীনের প্রেম ও বিয়ের খবরটি অনেক দিন ধরে গুঞ্জন হিসেবে বিনোদন অঙ্গনের বাতাসে উড়ে বেড়াচ্ছিল। দুজনের কেউই অবশ্য তখন বিয়ের কথা স্বীকার করেননি। তবে বিনোদন অঙ্গনের বিভিন্ন ঘরোয়া অনুষ্ঠানে তাঁদের দুজনের একসঙ্গে উপস্থিতি বিয়ের বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ দানা বাঁধতে থাকে। অবশেষে গুঞ্জনই সত্যি হয়। প্রসঙ্গত, দুজনেরই ছিল এটি দ্বিতীয় বিয়ে।

‘‌সকাল থেকে ফোনের যন্ত্রণায় আছি। সবার একটাই প্রশ্ন, বিয়ে করলাম, কাউকে কিছুই জানালাম না।’ ২০১৮ সালের মে মাসে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ছোট ও বড় পর্দার জনপ্রিয় তারকা শবনম ফারিয়া। তবে বছর শেষে জানা যায়, তিনি ঠিকই বিয়ে করেছেন, একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় ছিল বলে বিয়ে করেও তা প্রকাশ করতে চাননি শবনম ফারিয়া ও তাঁর স্বামী হারুনুর রশীদ অপু। ২০১৫ সালে ফেসবুকের মাধ্যমে শবনম ফারিয়া ও অপুর বন্ধুত্ব হয়। ফেসবুকে দুজনেরই অনেক কমন বন্ধু ছিল। এরপর ফেসবুকে কথা বলতে বলতে দুজনের ভালো বন্ধুত্ব তৈরি হয়। একটা পর্যায়ে দুজনকে দুই পরিবারের সবার পছন্দ হয়। এরপর বিয়ের কাজটি সেরে নেন তাঁরা।

একেবারে নীরবে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন সিয়াম আহমেদ। দীর্ঘদিনের প্রেমিকা অবন্তীর বারিধারার বাড়িতে গোপনে গায়েহলুদ হয়েছে। কিন্তু অনুষ্ঠান শেষে কয়েকটি আলোকচিত্র প্রকাশ পায় ফেসবুকে। এরপরও এ সময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক তা স্বীকার করতে চাননি। বিয়ের খবর গণমাধ্যমে আসুক, এটা যেন মানতেই পারছিলেন না সিয়াম। তাঁর বক্তব্য ছিল, ‘আমরা একেবারে ঘরোয়াভাবে বিয়ের অনুষ্ঠান করছি, তাই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হোক, চাই না।’

শবনম ফারিয়া-হারুণ রশীদ অপু। ছবি: সংগৃহীত

ভিন্ন দিকে আসি। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে মাহফুজা খাতুন শিরিনের সঙ্গে বিয়ের ৫০ বছর পার করেছেন অভিনয়শিল্পী আবুল হায়াত। এই লম্বা সংসারজীবনের বিরতিহীন যাত্রাপথে কতশত আনন্দ-বেদনা, সুখ-দুঃখ, আশা-হতাশা, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, বাধা-বিপত্তি এসেছে—সবকিছু তাঁরা বিশ্বাস, আস্থা আর ভালোবাসায় হাসিমুখে ভাগ করে নিয়েছেন বলে জানান। আবুল হায়াতের মতে, সত্যি, জীবন কত চ্যালেঞ্জিং এবং মধুময়!

তারকারা সংসারজীবন শুরুর বিষয়টি গোপনে কেন করেন, জানতে চাইতে আবুল হায়াত আজ সোমবার সকালে প্রথম আলোকে বললেন, নিজের যেহেতু কোনো অভিজ্ঞতা নেই, বলাটা খুব ডিফিকাল্ট (হাসি)। তবে আমি যতটুকু পড়েছি, কলেজজীবন থেকেও দেখছি এসব কাহিনি, তাতে মনে হয়, এটা স্রেফ জনপ্রিয়তা ভঙ্গের ভয় ও আশঙ্কা। অনেকে তারকাই মনে করেন, বিয়ে করলে বুঝি কেউ আমাকে পছন্দ করবে না। কিন্তু এই আশঙ্কা তো সব ক্ষেত্রে সত্যি নয়। আমরা আগেও অনেককে দেখেছি, এখনো দেখছি। যদি বলিউডে এখনকার বিরাট-আনুশকা কিংবা রণবীর ও দীপিকার কথা বলি, তাঁরা তো বিয়ের পরও দিব্যি কাজ করে যাচ্ছেন। আসলে নিজের মনের ভয়টাকে তো আর কেউ লুকাতে পারে না। এই যে শাকিব ও অপু যদি সেই সময় বিয়ের খবরটি প্রকাশ করত, অন্য রকম হতেও পারত। বিয়ে গোপন করার বিষয়টি ব্যক্তিগত ভয়ের, এর বাইরে আর কোনো কারণ দেখি না।