ঢাকা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ঘরে থাকা নৃত্যশিল্পীরা এক হলেন একটি গানের সঙ্গে। তাঁদের মধ্যে একজন যুক্ত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। ঘরে বসে ‘আমরা করব জয়’ গানের সঙ্গে নেচেছেন তাঁরা। করোনার এই সময়টায় ঘরবন্দী মানুষ যেন হতাশ না হয়ে আশাবাদী থাকতে পারেন, এই সংকট জয় তাঁরা করবেন—সে কারণে এমন একটি গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশনায় অংশ নিয়েছেন শিল্পীরা। এমনটাই জানিয়েছেন নাচের আয়োজনের উদ্যোক্তা ইভান শাহরিয়ার।
বরেণ্য শিল্পী লায়লা হাসান যেমন এই নৃত্যে অংশ নিয়েছেন, তেমনি আছেন তারিন, ঈশিতা, মোনালিসা, নাদিয়া, সোহানা সাবা, ভাবনা, শানু, তুষ্টি, আঁচল, নিশা, হিমি, সিনথিয়া, লাবণ্য, তোরসা, পারসা ইভানা মিম চৌধুরী, বারিষ, ইভান শাহরিয়ারসহ মোট ১৯ জন নৃত্যশিল্পী।
এমন সংকটের সময়ে এমন একটি নাচের উদ্যেগকে দায়িত্ববোধের সঙ্গে তুলনা করতে চাইছেন লায়লা হাসান। তিনি বলেন, ‘যেকোনো সংকটে সংস্কৃতিকর্মীরা কখনোই বসে থাকেন না। দুর্যোগে তাঁরা তাঁদের মতো করে মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেন। এখন যেহেতু সবাই ঘরবন্দী, লম্বা সময় ধরে ঘরে থাকা মানুষগুলো একঘেঁয়েমিতে ভুগতে পারেন। তাঁদের কথা চিন্তা করে গান, অভিনয়, নাচের অঙ্গনের শিল্পীরা যাঁর যাঁর অবস্থান থেকে নানা কিছু করে যাচ্ছেন। সাহস ও অনুপ্রেরণা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। সেই ধারাবাহিকতায় এই নাচ। এটা শুধু একটা নাচ নয়, এটা একটা দায়িত্ব। ঘরবন্দী সবাইকে আমরা বলতে চেয়েছি, আমরা করব জয়। সবাই মনে সাহস রাখুন, সতর্ক থাকুন। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নাই।’
এই গানের ভিডিওতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অংশ নিয়েছেন মোনালিসা। আজ রোববার সকালে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সোহাগের (ইভান শাহরিয়ার) অনুরোধে আমি এই নাচে অংশ নিয়েছি। এটাকে শুধু একটি নৃত্য হিসেবে দেখার কিছু নাই, এটি ঘরে থাকা সবাইকে সাহস কিংবা অনুপ্রেরণা জোগানোর বার্তা। আমি নিজেই ভিডিও করে পাঠিয়েছি।’
এ আয়োজনের উদ্যোক্তা ইভান বলেন, ‘পুরো পৃথিবী এখন থমকে আছে। এই থমকে থাকা পৃথিবীতে বিশ্বের সব শিল্পী নানাভাবে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রাণের সঞ্চার করতে চাইছেন। গৃহবন্দী মানুষের সাহস, অনুপ্রেরণা ও সচেতনতা তৈরি করতে শিল্পীদের কেউ গাইছেন গান। কেউবা ঘরে বসে ভিন্ন রকম চিত্রনাট্যে নাটক উপহার দিচ্ছেন। নৃত্যশিল্পীরাও থেমে নেই। সেই ধারাবাহিকতায় “আমরা করব জয়” গানটিকে বেছে নিয়ে নাচের একটি নতুন কম্পোজিশন তৈরি করার চেষ্টা। সবাই যার যার বাসা থেকে ভিডিও করে পাঠিয়েছে।’
ইভান আরও বলেন, ‘আমি নৃত্যশিল্পী। ছোটবেলা থেকে নিজে নাচ করেছি, প্রতিযোগিতা করেছি, অন্যান্য শিল্পীদের নৃত্যনির্দেশনা দিয়েছি। আমার সহস্রাধিক শিক্ষার্থী আছে। রোজ আমার বাসায় নৃত্যের ক্লাস হয়, মহড়াকক্ষে নাচ হয়, নৃত্যই আমার জগৎ। কিন্তু হঠাৎ থেমে গেছি। তাই এই বন্ধন দিনে নৃত্যই আমার মুক্তি। আমরা কৃতজ্ঞ এ উদ্যোগে আমার প্রিয় নৃত্যশিল্পীরা আমার অনুরোধে তাঁদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে আমাকে এই দারুণ অভিজ্ঞতা দিলেন। আমি কিংবদন্তি ও দেশবরেণ্য শিল্পীদের সঙ্গে নতুন প্রতিভাবান শিল্পীদেরও অংশগ্রহণ রেখেছি। বলতে চেয়েছি, একতাই শক্তি।’