যে বয়সটা কোমলমতি শিশুদের পড়াশোনা করার কথা, বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা কিংবা দুষ্টুমিতে সারা বাড়ি মাতিয়ে রাখার কথা, সেই বয়সেই তাদের ধরতে হয় পরিবারের হাল। ভাগ্যবঞ্চিত এসব শিশু ছবির গল্পে হয়ে ওঠে পরিবারের নায়ক। ছবির সেই নায়কদের নিয়ে আজকের আয়োজন।
২০০০ সালে নির্মিত ছবি আ টাইম ফর ড্রাংকেন হর্স। ছবিটি নির্মাণ করেন ইরানি পরিচালক বহমান ঘোবাদি। ছবির গল্পের জন্য তিনি বেছে নেন কুর্দিস্তানের ভাষা। এটি ইরানে নির্মিত প্রথম কোনো কুর্দিস্তানি ছবি। ছবির গল্পে দেখা যায়, আইয়ুবের বয়স ১২ বছর। তার বাবা ইরাক এবং কুর্দিস্তান সীমানায় ঘোড়া দিয়ে চোরাকারবারির জিনিসপত্র সীমান্ত পার করে দেয়। এই আয় দিয়েই চলে তাদের পাঁচজনের সংসার। হঠাৎ একদিন সীমান্তরক্ষীদের গুলিতে লাশ হয়ে ফেরে তার বাবা। আইয়ুবের ওপর দায়িত্ব পড়ে চার ভাইবোনের সংসারের। তাকেও বেছে নিতে হয় বাবার পেশা।
ছবিটি ২০০০ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে উদ্বোধনী প্রদর্শিত হয়। অসাধারণ নির্মাণ, গল্প বলার ঢং এবং কঠিন পরিস্থিতিতে তুষারের মধ্যে শুটিং করা হয় ছবিটির জন্য। সীমান্তবর্তী মানুষের বেঁচে থাকার বাস্তবতাকে ক্যামেরায় তুলে ধরার জন্য কানের বিচারকদের প্রশংসা পান নির্মাতা বহমান ঘোবাদি। তাঁর ভাগ্যে ধরা দেয় কান চলচ্চিত্র উৎসবের গোল্ডেন ক্যামেরা এবং ফিসপেরেস্কি শাখায় দুটি পুরস্কার।
আকিরার বয়স ১২ বছর। তারা চার ভাইবোন একসঙ্গে থাকে। সবাই ছোট। তাদের মা এক হলেও তাদের সবারই বাবা আলাদা ব্যক্তি। মায়ের সঙ্গেই তারা নতুন একটি বাসায় ওঠে। তাদের রেখে কিছুদিন পর তাদের মা বয়ফ্রেন্ডের কাছে চলে যায়। চার ভাইবোনকে নিয়ে বিপদে পড়ে যায় আকিরা। তাকে ভাবতে হয় ছোট ভাইবোনদের খাবারের কথা। জাপানে ১৮ বছর না হলে কাজের সুযোগ নেই। পরিবার নিয়ে চলতে বিকল্প পথ বেছে নিতে হয় ছোট আকিরাকে। দুই বোন এবং এক ভাইকে নিয়েই এগিয়ে চলে আকিরার গল্প।
নোবডি নোজ ছবিতে সবার অভিনয় ছিল অসাধারণ। বিশেষ করে বলতে হয় আকিরার কথা। তার অভিনয়, বাচনভঙ্গি, মুখের অভিব্যক্তি, কথা বলা এতটাই বাস্তবসম্মত ছিল যে ২০০৪ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে বাঘা বাঘা অভিনেতাকে পেছনে ফেলে সেরা অভিনেতার মুকুট ওঠে আকিরার মাথায়। ছবিটি নির্মাণ করেন জাপানি ঋষি চলচ্চিত্রকার হিরোকাজু কোরে এদা।
ওসামা ছবির গল্পটা একটু আলাদা। গল্পের পটভূমি আফগানিস্তান তখন তালেবানের দখলে। তাদের রাজত্বে কোনো নারীকে ঘরের বাইরে যাওয়া যাবে না। ওসামার মা হাসপাতালে নার্সের চাকরি করতেন। তালেবান সেই হাসপাতালের কাজ বন্ধ করে দিলে তাদের তিনজনের পরিবারে দিন দিন খাবারের কষ্ট বাড়তে থাকে। একসময় মা ও দাদির খাবারের জন্য এক কিশোরীকে পুরুষ সেজে বাইরে কাজ খুঁজতে বের হতে হয়। ছবিতে ওসামা চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেন মারিনা গুলবাহারি। নির্মাতা সিদ্দিক বারমাক এই কিশোরীকে রাস্তায় দেখে অভিনয়ের জন্য পছন্দ করেন। ২০০৩ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবি গোল্ডেন গ্লোবে বিদেশি ভাষার শাখায় সেরা ছবির পুরস্কার পায়। ছবিটি নির্মাণে যাবতীয় সহযোগিতা করেন ইরানের বিখ্যাত পরিচালক মোহসেন মাখমালবাফ। ছবিটির নির্বাহী প্রযোজকও ছিলেন এই ইরানি নির্মাতা।