পাত্রীর বয়স ৪৯, পাত্রের ৭৫। অভিনেতা দীপঙ্কর দে ও দোলন রায়ের বয়সের ব্যবধান ২৬ বছর। তাতে কী? বাস্তব জীবনে বয়স কেবলই ‘সংখ্যা’। তাঁদের নতুন সংসার হলো শুরু। জানুয়ারি মাসে কলকাতায় যখন হাড়কাঁপানো শীত, তখন হঠাৎ করেই মালাবদল করেছিলেন তাঁরা। সাত পাকে বেঁধে দক্ষিণ কলকাতায় শুরু হলো একটি নতুন সংসার। একসঙ্গে ভালোই তো ছিলেন তাঁরা। তবে কেন বিয়ে করলেন?
শুরুটা খুব একটা ভালো কাটেনি। বিয়ের পরদিনই একটু হাসপাতালে যেতে হয়েছিল দীপের। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা। নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকতে হয়েছে চার দিন। এরপর বাড়ি ফিরেও থাকতে হয়েছে নিয়মের মধ্যে। আপাতত শঙ্কামুক্ত। আর এখন তাঁরা বেড়াতে যাওয়ার কথা ভাবছেন।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ঘটা করে ভালোবাসা দিবস উদ্যাপন করেছেন নবদম্পতি। সঙ্গে লাগোয়া দোলন রায়ের জন্মদিন। বিয়ের পর প্রথম ভালোবাসা দিবস, প্রথম জন্মদিন বলে কথা, যে–সে কথা নয়। ভালোবাসা দিবসে স্বামীকে এক ঝুড়ি গোলাপ দিয়েছিলেন দোলন। যদিও পরিকল্পনা ছিল অনেক রকম। ভেবেছিলেন, সন্ধ্যায় একসঙ্গে কোথাও খেতে যাবেন, একটু লং ড্রাইভ, হাইওয়ের ধারে চা...কিন্ত বাদ সাধল শুটিং। সেদিন সারা দিন ছুটি নিয়েছিলেন দোলন। কিন্তু দুপুর ১২টার সময় জানতে পারলেন, যেতেই হবে। কী আর করা! বললেন, ‘ওর জন্য খাবারের অর্ডার দিয়েছি। বলেছি, মনে করো আমি আর তুমি বাইরে কোথাও খেতে গিয়েছি...।’
বর দীপঙ্করের শারীর এখন ভালো। যদিও শ্বাসকষ্ট নেই, কিন্তু পানি খেতে হচ্ছে মেপে। আগেরবার যখন হাসপাতালে যেতে হয়েছিল, তখনো চিকিৎসকদের একই নির্দেশ ছিল। যেহেতু ফুসফুসে পানি জমে যাওয়ার ভয় আছে, তাই দিনে এক লিটারের বেশি কোনো রকম তরল খাওয়া চলবে না। তবে শক্ত খাবারে মানা নেই। বাড়ির খাবারই খাচ্ছেন দীপঙ্কর। দুর্বলতা আছে বটে, তবে একটু বিশ্রাম নিলে দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবেন, আশাবাদী দোলন।
তাঁদের সংসার একটি অ্যাপার্টমেন্টের আঠারো তলায়। ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট। দোলন রায় ১৯৯৭ সালে ‘সংঘাত’-এর জন্য জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন। মঞ্চনাটক থেকেই অভিনয়জীবনের শুরু। এখন মঞ্চে কম সময় দিচ্ছেন। একসঙ্গে একাধিক ধারাবাহিক করার কি খুব দরকার তাঁর? এমন প্রশ্নে দোলন বলেন, ‘টাকাপয়সার জন্য এ বছরটা করতেই হবে। এরপর যা মন চাইবে, তাই করব। এত পরিশ্রম করতে পারি, শুধু ভালো পারিশ্রমিক পাই বলে নয়, আত্মতুষ্টিও দরকার। যেটা পাই ভালো নাটক, সিনেমা থেকে।’
দুজনের প্রথম দেখা ‘ছদ্মবেশী’ করতে গিয়ে। সাক্ষী ছিলেন সেটার নির্দেশক রবি ঘোষ। নাটকটি প্রচুর কল শো পেত। দোলন রায় তখন নবাগত। দুজনই অনেক শো করেছেন একসঙ্গে। এভাবেই ২৬ বছরের বড় সহশিল্পী হয়ে ওঠেন প্রেমিক। বিয়ের কথায় দোলন রায় বলেন, ‘বিয়ে করেই একসঙ্গে থেকেছি। আর সমস্যা? আমি যা পাপারাজ্জির মুখোমুখি হয়েছি, তা বোধ হয় কোনো প্রথম সারির নায়িকাও হননি। ইট মেরে গাড়ির কাচ ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। তখন ভেতরে আমি!’ দীপঙ্কর দে বলেন, ‘আমরা যা করেছি, বেশ করেছি। কয়টা বাপের ব্যাটা আছে এত বছর বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখে!’
দীপবাবুর ডাকনাম টিটো, দোলন প্রথম থেকেই ডাকতেন ‘টিটোদা’। এখনো এ নামেই ডাকেন। রান্না করতে ভালোবাসেন তিনি। আর ভালোবাসেন মায়ের সঙ্গে গল্প করতে। একটু অবসর পেলে মজে থাকেন বাগান বা বই নিয়ে। লেখেন ভ্রমণকাহিনি, প্রবন্ধ। বিয়ের আরেকটু জানতে চাইলে দোলন বলেন, ‘সবকিছুর একটা আইনি দিক থাকে। যেহেতু আমরা একসঙ্গে থাকি, এর একটি আইনগত স্বীকৃতি দরকার ছিল। সেটা নিশ্চিত করতেই বিয়ে।’