সাত দিন ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালের মর্গে থাকার পর অবশেষে আসছে অভিনয়শিল্পী ও বরেণ্য পরিচালক আমজাদ হোসেন। শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় আমজাদ হোসেনকে বহনকারী বিমানটি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছানোর কথা। প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর।
এদিকে আমজাদ হোসেনের বড় ছেলে পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন দোদুল জানান, তাঁর বাবার মরদেহ বিমানবন্দর থেকে সরাসরি নেওয়া হবে মোহাম্মদপুরের আদাবরের বাড়িতে। সেখানে যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে মরদেহ রাখা হবে বারডেম হাসপাতালের হিমঘরে। পরদিন শনিবার বেলা ১১টায় সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বাদ জোহর মরদেহ নেওয়া হবে দীর্ঘদিনের কর্মস্থল বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএফডিসি)। সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন ও জানাজা শেষে বেলা আড়াইটায় তেজগাঁওয়ের চ্যানেল আই কার্যালয়ে নেওয়া হবে। সেখানে আরেকটি জানাজা শেষে আমজাদ হোসেনের মরদেহ সমাহিত করা হবে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আমজাদ হোসেনের ইচ্ছা ছিল তাঁর মরদেহ যেন জামালপুরের নিজ গ্রামে দাফন করা হয়। কিন্তু স্ত্রী সুরাইয়া আকতারের ইচ্ছা, তাঁর স্বামীকে যেন মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। বৃহস্পতিবার রাত অথবা শুক্রবার সকালের মধ্যে দাফনের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে যাবে বলে জানা গেছে।
ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালের সব ধরনের প্রশাসনিক কাজ চার দিন আগে শেষ হলেও আমজাদ হোসেনের মরদেহ দেশে আনার ব্যাপারে আর্থিক জটিলতা তৈরি হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে পাওয়া ৪২ লাখ টাকার অনুদানের বাইরে বরেণ্য নির্মাতার চিকিৎসা বাবদ খরচ হয় আরও ৬১ লাখ টাকা। সেই অর্থের জোগান হওয়ায় বরেণ্য এই নির্মাতাকে দেশে আনা হচ্ছে।
জানা গেছে, চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগরের উদ্যোগে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এই অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে। আমজাদ হোসেনের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চ্যানেল আই কার্যালয়ে এক জরুরি বৈঠকের আয়োজন করা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম, নাট্যজন মামুনর রশীদ, পরিচালক এস এ হক অলীক, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার, সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম খোকন ও আমজাদ হোসেনের বড় ছেলে সাজ্জাদ হোসেন দোদুল।
বৃহস্পতিবার ফরিদুর রেজা সাগর প্রথম আলোকে বলেন, ‘মরদেহ দেশে আনা নিয়ে যেসব জটিলতা ছিল তার সমাধান হয়ে গেছে। বাংলাদেশ বিমান কর্তৃপক্ষ আমজাদ হোসেনের মরদেহ বিনা খরচে দেশে নিয়ে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।’
ঢাকার পর ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে টানা ১৬ দিন চিকিৎসার পর গত শুক্রবার বাংলাদেশ সময় বেলা ২টা ৫৭ মিনিটে মারা যান কিংবদন্তি চলচ্চিত্র নির্মাতা, গীতিকার, চিত্রনাট্যকার, অভিনয়শিল্পী ও লেখক আমজাদ হোসেন। পরদিন শনিবার প্রথম আলোকে সোহেল আরমান ব্যাংকক থেকে জানান, সাপ্তাহিক ছুটির কারণে প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ আছে। তাই প্রশাসনিক কার্যক্রম শেষ করে বাবার মরদেহ নিয়ে সোমবার সকালে ঢাকায় ফিরতে পারবেন। পরে কথা হলে তিনি জানালেন, অর্থের জোগাড় না হওয়ায় বাবাকে নিয়ে দেশে ফিরতে পারছেন না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরেণ্য পরিচালক আমজাদ হোসেনকে ২৭ নভেম্বর রাতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সে সময় আমজাদ হোসেনের পরিবারের হাতে প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসার খরচ বাবদ ৪২ লাখ (এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া ২২ লাখ ও চিকিৎসায় ২০ লাখ) টাকা অনুদান দেন। সোহেল আরমানের তথ্যমতে, প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া অনুদানের বাইরেও ১৬ দিনে তাঁর বাবার চিকিৎসা বাবদ খরচ হয়েছে বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৬১ লাখ টাকা।
মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হওয়ায় গত ১৮ নভেম্বর রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ইমপালস হাসপাতালে ভর্তি করা হয় আমজাদ হোসেনকে। হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। শুরু থেকেই তাঁকে কৃত্রিম উপায়ে শ্বাসপ্রশ্বাস দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়। বাংলাদেশের বরেণ্য এই নির্মাতার শারীরিক অসুস্থতার খবর শুনে হাসপাতালে ভর্তির তিন দিনের মাথায় তাঁর চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ার আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমজাদ হোসেনের উন্নত চিকিৎসার খরচ বাবদ ২০ লাখ টাকা এবং এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া বাবদ ২২ লাখ টাকা পরিবারের হাতে তুলে দেন তিনি।