কথা হচ্ছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী শুচিস্মিতার সঙ্গে। আমাদের আলাপের বিষয় ছিল বাংলাদেশ। ‘কখনো যাওয়া হয়নি। তবে আমাদের নেইবার কান্ট্রি। জানি একটু–আধটু। বাংলাদেশের ইলিশ ভীষণ প্রিয়। আর গান শোনা হয় খুব।’
পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন শুচির বন্ধু শার্লিন সরকার। কথা টেনে নিয়ে বললেন,‘বাংলাদেশের বেশ কজন অভিনয়শিল্পী আমাদের এখানে অভিনয় করছেন। আমি তো জয়া আহসানের দারুণ ফ্যান। তাঁর সব ছবি দেখেছি। এখন শাকিব খান তো আমাদের এখানে অভিনয় করছেন। কিন্তু তাঁর ছবি দেখা হয়নি।’
শার্লিন আরও একজনের নাম বললেন, এই সময়ের আলোচিত ব্যক্তি হিরো আলম। বললেন, ‘তাঁর সব ভিডিও দেখেছি। আমার ভীষণ পছন্দ তাঁকে। ভরপুর বিনোদন।’
কলকাতায় চলছে ২৪তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। বিশ্বের নানা দেশের চলচ্চিত্র এসেছে এখানে। বাংলা সিনেমার ১০০ বছর পালন করা হচ্ছে এবারের উৎসবে। উৎসবের মূল ভেন্যু নন্দন ও রবীন্দ্রসদনে তরুণদের ব্যাপক আনাগোনা। প্রতিদিনই তরুণেরা আসছেন, ছবি দেখছেন, আড্ডা মারছেন। এই তরুণদের সঙ্গেই আড্ডা হলো গতকাল। বাংলাদেশ সম্পর্কে ধারণা, বিশেষ করে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র, গান, নাটকসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বললেন কলকাতার তরুণেরা।
দুজনের সঙ্গে আড্ডা যখন তুঙ্গে, তখন পাশেই আরেক বন্ধুর ছবি তুলছিলেন শান্তনু বিশ্বাস। গুনগুন করে গাইছিলেন ‘ও টুনির মা’ গানটি। বললাম, ‘আপনি কি জানেন, এই গানের শিল্পীর বাড়ি বাংলাদেশে।’ শান্তনু অকপট, বললেন, ‘হ্যাঁ, জানি তো, প্রমিত কুমার। আপনাদের নরসিংদীতে বাড়ি। জানেন, এখন আমরা শুনি নোবেলের গান। ওই যে “সারেগামাপা” মাতিয়ে রেখেছে যে ছেলেটা।’ নোবেলকে পরিচয় করিয়ে দিলেন শান্তনু।
শান্তনু যাঁর ছবি তুলছিলেন, তাঁর নাম শায়ন। এগিয়ে এসে বললেন, ‘শুধু নোবেল না, আমরা আইয়ুব বাচ্চু, জেমসের গানও শুনি। ইদানীং মিনারের গান খুব ভালো লাগে।’
মিনারের গান পছন্দ করেন তরুণ সংগীতশিল্পী শায়ন্তনও। নন্দনের ঝরনার পাশের বেঞ্চিতে বসে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মারছিলেন তিনি। হাতে গিটার। গত কয়েক দিনই মনের আনন্দে গান করতে দেখা গেছে তাঁকে। বাংলাদেশের শিল্পীদের গান খুব সহজেই মানিয়ে যাচ্ছিল তাঁর গলায়। গত কয়েক দিন তাঁর গান শুনেছি বলতেই হেসে বললেন, ‘ওই আরকি, মনের আনন্দে গাই। যখন ভালো লাগে তখনই গাই। বাংলাদেশের মাইলস, হাসানের গান খুব পছন্দ। তবে সিনেমা বা নাটক ওভাবে দেখা হয়নি।’ জানালেন, বাংলাদেশের তরুণ কবি পিয়াস মজিদ তাঁর খুব ভালো বন্ধু। গত মাসেই দেখা হয়েছে তাঁদের।
শায়ন্তনের পাশে ছিলেন কাজল চক্রবর্তী। গড়গড় করে বলে দিলেন বাংলাদেশের অভিনেতাদের নাম—মোশাররফ করিম, মীর সাব্বির, চঞ্চল চৌধুরী, মম মোর্শেদসহ অনেকের নাটক দেখেন তিনি। এমনকি মোশাররফ করিমের স্ত্রী রোবেনা রেজা জুঁইয়ের নাটক দেখেন। কাজলের ভাষায়, ‘ফাটিয়ে অভিনয় করে ওরা।’ তাঁর সঙ্গে গলা মেলালেন পাশে থাকা চিন্ময় চিত্রকর ও প্রদীপ দে।
আজ শনিবার দেশপ্রিয় পার্কের সামনে কথা হলো তরুণ সংগীতশিল্পী হিল্লোল আচার্যর সঙ্গে। জলপাইগুড়ির ছেলে। জানালেন, কলকাতায় গান আর পিএইচডি একসঙ্গে করছেন। গানের শো করতে গেলে প্রায় বাংলাদেশের তরুণ শিল্পীদের গান গাওয়ার আবদার করেন কলকাতার দর্শক। এর জন্য বাংলাদেশের শিল্পীদের গান নিয়মিত শোনেন তিনি। বললেন, ‘গতকালও একটা শো করেছি। সেখানেও মিনারের “কারণে অকারণে” গানটা গেয়েছি। আপনাদের গানের কথায় আলাদা একটা প্রাণ আছে।’
আজ শেষ হচ্ছে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব। তবে তরুণদের এ মিলনমেলা ভাঙবে না। কারণ, নন্দন আসলে তরুণদেরই জায়গা। গান, আড্ডা আর কবিতায় মাতিয়ে রাখেন তাঁরা। সেখানে থাকে বাংলাদেশও।