দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে নগরের জীবনধারা। ধীরে ধীরে খুলে দেওয়া হচ্ছে সবকিছু। বাকি কেবল বিনোদনকেন্দ্রগুলো। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে গত মার্চ মাসে বন্ধ হয়ে যায় এসব কেন্দ্র। পাঁচ মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরও চালু না হওয়ায় হতাশ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে নগরের জীবনধারা। ধীরে ধীরে খুলে দেওয়া হচ্ছে সবকিছু। বাকি কেবল বিনোদনকেন্দ্রগুলো। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে গত মার্চ মাসে বন্ধ হয়ে যায় এসব কেন্দ্র। পাঁচ মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরও চালু না হওয়ায় হতাশ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এতে একদিকে অর্থনৈতিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা, অন্যদিকে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড। বেশ কিছু সংগঠন প্রথম আলোকে জানিয়েছে, সরকারের অনুমতি পেলে সব রকম সতর্কতা বজায় রেখে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পুনরায় শুরু করবে তারা।
বন্ধ নাটকপাড়া। এতে পিছিয়ে পড়ছে মঞ্চনাটকের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড। অনলাইনে মোটামুটি সক্রিয় থাকলেও বন্ধের তালিকায় আছে শিল্পকলা একাডেমি, ফিল্ম ফেডারেশন অব বাংলাদেশ, শর্টফিল্ম ফোরাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ, মুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটি, আলিয়ঁস ফ্রঁসেস ও গ্যেটে ইনস্টিটিউটের মতো অনেক সংগঠন। এসব সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছেন, বন্ধ থাকার কারণে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তৈরি হতে পারে এক ধরনের অনিশ্চয়তা। এ ছাড়া দীর্ঘ বিরতির পর নতুন করে সবকিছু শুরু করা নিয়ে তৈরি হতে পারে নানা জটিলতা।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে নিয়মিত নাটক মঞ্চায়িত হতো। প্রতিদিন প্রায় ৮ থেকে ১০টি নাটকের মহড়া বসত, সেসব বন্ধ। অনেকেই ভাবছেন, শিল্পকলা একাডেমি দ্রুত খুলে দেওয়া না হলে অনেক নাটকের মহড়া নতুন করে শুরু করতে হবে। নাট্যকার মাসুম রেজা বলেন, ‘অনতিবিলম্বে শিল্পকলা একাডেমি খুলে না দিলে আমাদের সব মহড়া নতুন করে শুরু করতে হবে।’ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী জানিয়েছেন, মিলনায়তনগুলো খুলে দেওয়ার ব্যাপারে তাঁরা আলোচনা করেছেন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও কথাবার্তা চালিয়েছেন।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী জানিয়েছেন, মিলনায়তনগুলো খুলে দেওয়ার ব্যাপারে তাঁরা আলোচনা করেছেন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও কথাবার্তা চালিয়েছেন।
তরুণ নির্মাতাদের আনাগোনায় মুখর থাকত চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর কার্যালয়। চলচ্চিত্র সংসদগুলোতে নিয়মিত আয়োজন করা হতো প্রদর্শনীর। নবীন–প্রবীণদের এসব মিলনমেলা বসত জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তন, কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তন, সরকারি গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তন, টিএসসি মিলনায়তনসহ আরও বেশ কিছু জায়গায়। এসব জায়গায় নাটক, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, সংগীত পরিবেশনার পাশাপাশি বসত আলোচনা অনুষ্ঠান।
বহু বছর ধরে নিয়মিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সাংস্কৃতিক সংগঠন আমরা সূর্যমুখী। সংগঠনটির সভাপতি শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ইতিমধ্যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডও শুরু হয়ে গেছে। সেখানে তো মানুষের সমাগমও দেখি। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডগুলো করার অনুমতি দিলে আমরা যথাযথ স্বাথ্যবিধি মেনে অনুষ্ঠান আয়োজন করব। প্রয়োজনে ১০০ আসনের মিলনায়তনে ৫০ জন দর্শক বসবেন।’
খোলার নির্দেশ না পেয়ে প্রায় পাঁচ মাস পর বাধ্য হয়ে অনলাইনে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল সিনেক্লাব বিস্তার। ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজের সাধারণ সম্পাদক বেলায়াত হোসেন বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারি নির্দেশনা মেনে অডিটোরিয়ামগুলো অনিদিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকতে পারে না। এভাবে বিচ্ছিন্ন করে রাখলে আমাদের মধ্যে নানা অনিশ্চয়তা তৈরি হবে।’
সংস্কৃতিচর্চা ও বিনোদনকেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়ার জন্য গত দুই মাস নানা রকম চেষ্টাচরিত করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে। তবে বেশি দূর অগ্রসর হতে পারেননি কেউই। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রত্যাশা, সংস্কৃতির চর্চা ও বিকাশে দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে সাংস্কৃতিক চর্চার জায়গাগুলোও খুলে দেওয়া প্রয়োজন।
তবে ভিন্নমত পোষণ করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। তিনি বলেন, ‘মানুষের জীবন আগে। অফিস–আদালতের সঙ্গে বিনোদনকেন্দ্রের তুলনা হতে পারে না। কেননা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে না করা যাবে মহড়া, না করা যাবে মঞ্চের পরিবেশন। তাই আমি মনে করি, এখনই খুলে দেওয়ার সময় আসেনি।’,