স্মৃতিচারণ

ওপারে টেলি সামাদ

আলমগীর, চম্পা, শাকিব খান, পূর্ণিমা
আলমগীর, চম্পা, শাকিব খান, পূর্ণিমা
>

জনপ্রিয় কমেডিয়ান টেলি সামাদ মারা গেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। ১৯৭৩ সালে পরিচালক নজরুল ইসলামের কার বউ চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম অভিনয় করেন। চার দশকে প্রায় ৬০০ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। টেলি সামাদ শেষ কাজ করেছেন ২০১৫ সালে অনিমেষ আইচের ‘জিরো ডিগ্রি’ ছবিতে। দর্শকদের কাছে পায়ে চলার পথ ছবির মাধ্যমে সর্বাধিক জনপ্রিয়তা পান। তাঁকে স্মরণ করেছেন ঢাকাই ছবির চার অভিনয়শিল্পী।

আলমগীর


সহশিল্পী হিসেবে চমত্কার সম্পর্ক ছিল
আলমগীর
আমি যখন অভিনয় শুরু করি, তখন খান জয়নুল কমেডিয়ান চরিত্রে অভিনয় করতেন। সে সময় টেলি সামাদও অভিনয় করতেন। সত্তর থেকে নব্বইয়ের দশকে আমরা শতাধিক ছবিতে একসঙ্গে অভিনয় করেছি। তাঁর সঙ্গে বন্ধু হিসেবে না হলেও সহশিল্পী হিসেবে চমত্কার সম্পর্ক ছিল। কত দিন একসঙ্গে আড্ডা দিয়েছি। আড্ডায় মাতিয়ে রাখতেন সবাইকে। অনেক দিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। কাজও করেননি অনেক দিন।
সবশেষ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে ভোট দিতে এসেছিলেন। এরপরও কয়েকবার দেখা হয়েছে। বছর দেড়েক আগে হাসপাতালে
দেখতে গিয়েছিলাম। সত্যিই অসাধারণ একজন মানুষ ছিলেন টেলি সামাদ। অভিনয়ে তাঁর বড় গুণ ছিল, পর্দায় তিনি ভাঁড়ামি করতেন না, অভিনয় করতেন। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।

চম্পা


এককথায় তিনি ছিলেন চিরসবুজ অভিনেতা
চম্পা
কিছুক্ষণ আগে খবরটি শুনলাম। কষ্ট পেলাম। আমাদের সব গুণী, ভালো অভিনয়শিল্পী একে একে না-ফেরার দেশে চলে যাচ্ছেন। আমরা একসঙ্গে ৩০ টির বেশি ছবিতে কাজ করেছি।
আমার কাছে তাঁকে একজন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ মনে হতো। শুটিংয়ে হিরো-হিরোইনদের সঙ্গে সহজেই খাপ খাইয়ে নিতে পারতেন তিনি। শুটিংয়ের ফাঁকে তাঁর হাসিঠাট্টায় আমাদের সারা দিনের ক্লান্তি দূর হয়ে যেত। এককথায় তিনি ছিলেন চিরসবুজ অভিনেতা।
রাজ্জাক ভাই থেকে শুরু করে সব নায়কের সঙ্গেই টেলি সামাদ কাজ করেছেন। মাঝে আমাদের ছবির ঘরানা পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু এসব গুণী শিল্পীকে পরে আর কাজে লাগানো হয়নি। খুব আফসোস লাগে।

শাকিব খান


ওপারে শান্তিতে থাকুন
শাকিব খান
আমি টেলি সামাদকে শুধু জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী বলতে চাই না, মহা জনপ্রিয় শিল্পী বলতে চাই। কারণ, বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষই তাঁকে চেনেন। একটি ভিন্ন ধারার অভিনয়শিল্পী হিসেবে সবার কাছে নন্দিত তিনি। আমি যখন চলচ্চিত্রে আসি, এর আগেই তিনি চলচ্চিত্র থেকে অনেকটাই সরে দাঁড়িয়েছিলেন। শুরুর দিকের একটি-দুটি ছবিতে আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি। পরে আর তাঁর সঙ্গে আমার কাজের সুযোগ হয়নি। তবে তাঁর সঙ্গে কাজের সুযোগ হোক বা না হোক, এই মানুষটির অভিনয় আমার সারা জীবন মনে থাকবে। একসময় বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে কমেডিয়ান অভিনয়শিল্পীদের দারুণ কদর ছিল। অনেকেই এ ধরনের অভিনয়শিল্পী হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। কিন্তু তাঁর অভিনয়ের সময় কথা বলার ধরন, ভঙ্গি তাঁকে সব সময় আলাদা করে রেখেছে। ওপারে শান্তিতে থাকুন তিনি, এই কামনা করি।

পূর্ণিমা


একজন ভালো মানুষ
পূর্ণিমা
ছোটবেলা থেকেই তাঁর অভিনয় দেখেছি। আমি চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করার পর হিংসার পতন, কে আমিসহ বেশ কয়েকটি ছবিতে তাঁর সঙ্গে অভিনয় করেছি। পর্দায় মানুষকে যেমন হাসাতেন, ঠিক একইভাবে বাস্তব জীবনেও মানুষকে হাসাতেন, আনন্দ দিতেন। একজন ভালো মানুষ ছিলেন। তাঁর সঙ্গে শুটিংয়ের দিনগুলোর কথা মনে আছে। শুটিংয়ের ফাঁকে আমরা সবাই বসে গল্প করছি, হঠাৎই এমন সব কথা বলতেন, হাসতে হাসতে পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়ে যেত। তিনি যেদিন সেটে থাকতেন, সেদিন পুরো ইউনিট যেন সতেজ থাকত। কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, তিনি অনেক বড় মাপের একজন অভিনেতা ছিলেন। কিন্তু তাঁর কোনো অহংকার ছিল না। আমরা নতুন হিসেবে তাঁর সঙ্গে যাঁরা কাজ করেছি, তাঁর ব্যবহারে বোঝাই যেত না যে তিনি এত বড় মাপের অভিনেতা।