এভাবেও ফিরে আসা যায়

অভিনয়শিল্পীদের ক্যারিয়ারের ওঠানামা নতুন কিছু নয়। দুর্দান্ত শুরুর পর অনেকেই প্রত্যাশামতো এগিয়ে যেতে পারেন না। কেউ হারিয়ে যান, কেউ ফিরে আসেন প্রবল বিক্রমে। তবে একবার পিছিয়ে যাওয়ার পার আবার ফিরে এসে চমকে দেওয়া—বাংলাদেশে এমন উদাহরণ কম। তবে ফিরে এসে মুগ্ধ করেছেন তিন অভিনয়শিল্পী। এই মহামারিকালে এমন উদাহরণ তৈরি করা তিনজন হলেন আজমেরী হক বাঁধন, ইন্তেখাব দিনার ও সমু চৌধুরী। প্রায় খাদের কিনারা থেকে ফিরে এসে তিনজনই চাঙা করেছেন নিজেদের ক্যারিয়ার।

যাঁদের মধ্যে প্রথমেই বলা যায় আজমেরী হক বাঁধনের কথা। অভিনয়ের শুরু ২০০৬ সালে। নিজের অভিনয় নিয়ে একটা সময় হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। ওজন ঝরিয়েও ব্যক্তিগত কারণে সরে দাঁড়িয়েছিলেন জাজ মাল্টিমিডিয়ার সিনেমা থেকে। বেশ কয়েকটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, কয়েক বছর আগেই নিজের জীবন নিয়ে সংশয়ে ভুগছিলেন।

বাঁধন

সেই বাঁধন রেহানা রূপে হাজির হতেই বদলে গেল দৃশ্যপট। ২০২১ সালে ৭৪তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশ থেকে প্রথমবার মনোনয়ন পায় ‘রেহানা মরিয়ম নূর’। আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের এই ছবির পর বলা যায় রাতারাতি তারকাখ্যাতি পেয়ে যান। রেহানা সূত্রে পাওয়া এই খ্যাতিকে নির্দ্বিধায় ‘দ্বিতীয় জীবন’ বলে স্বীকার করেন অভিনেত্রী নিজেও। তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে অনেক অন্যায়–অবিচার হয়েছে; যা আমি জেনেও না জানার ভান করছিলাম। এটা আমাকে দেখতে সাহায্য করেছে রেহানা। এটা আমি নিশ্চিত করতে চাই। রেহানা আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে।

রেহানা অবশ্যই আমাকে দ্বিতীয় জীবন দিয়েছে। কানে যাওয়াটা আমার জন্য অনেক গর্বের।’ এই প্রজেক্টের পর বাঁধন অভিনয় করেছেন প্রখ্যাত বলিউড পরিচালক বিশাল ভরদ্বাজের ছবিতে। বিস্ময় হলেও সত্য, রেহানার জন্য এবারের মেরিল-প্রথম পুরস্কারে সেরা অভিনেত্রীর (সমালোচক) পুরস্কার তাঁর জন্য বাংলাদেশে পাওয়া প্রথম কোনো স্বীকৃতি। পুরস্কার পাওয়ার পর তাই আবেগপ্রবণ বাঁধন বলেন, ‘২০০৬ সাল থেকে অভিনয় করছি। এত দিনে দেশে স্বীকৃতি পেলাম। একটা সময় ছিল যখন মানুষ বলত আমি অভিনয় করতে পারি না।’

ইন্তেখাব দিনার

বাঁধনের মতোই ফিরে এসে বাজিমাত করেছেন ইন্তেখাব দিনারও। টিভি নাটক বন্ধন-এর কল্যাণে ‘পাশের বাড়ির ছেলে’ হয়ে যাওয়া এই অভিনেতা অভিনয়ে অনিয়মিত হয়ে পড়েছিলেন। টিভি নাটক যখন তথাকথিত ‘ভিউ’-এর পেছনে ছুটছে, তখন তাঁর মতো অনেক অভিনেতার ক্ষেত্রেই এটা হয়েছে। তাঁর জন্য বড় সুযোগ হয়ে এসেছে চরকির ওয়েব সিরিজ ‘ঊনলৌকিক’। সিরিজের দ্বিখণ্ডিততে তাঁর অভিনয় দেখে প্রায় সবাই বলেছেন লা–জবাব। এরপরে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে ওয়েব সিরিজ দুনিয়ায় তাঁর বৃহস্পতি তুঙ্গে।

একে একে তাঁকে দেখা গেছে ‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি’, ‘দৌড়’সহ একাধিক ওটিটির কাজে। নতুন শুরু নিজেও দারুণ উপভোগ করছেন অভিনেতা, ‘চরকির দ্বিখণ্ডিত আমার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট। এটা আমাকে দ্বিতীয় জীবন দিয়েছে। মাঝে ফেরার মতো সুযোগ পাইনি। সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগেছি। কিন্তু অভিনয় ছাড়ব—এটা কখনোই ভাবিনি। হয়তো সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম। সেটা আমাকে দিয়েছে চরকি।’

সমু চৌধুরী

একসময়ের টেলিভিশনের পরিচিত মুখ সমু চৌধুরীও বছর কয়েক আগেও ছিলেন ভুলে যাওয়া এক নাম। অথচ সেই ১৯৯০-এর দশক থেকে টানা কাজ করেছেন। পাঁচ শতাধিক নাটক ও এক ডজনের বেশি চলচ্চিত্রে দেখা গেছে তাঁকে। প্রধান নায়ক থেকে খলনায়ক সমু মানিয়ে যেতেন অনায়াসে। কী এক অভিমানে সিনেমা থেকে দূরে সরে যান। এরপর দীর্ঘ বিরতি। মহামারির সময় আবারও ফিরেছেন। ‘মাশরাফি জুনিয়র’, ‘জয়েন্ট ফ্যামেলি’ ধারাবাহিক ছাড়া অভিনয় করেছেন ‘দামাল’, ‘নূর’, ‘মনলোক’সহ একাধিক সিনেমায়। সমু বলেন, ‘আগে হিরো ছিলাম। এখন নতুন প্রজন্মের দর্শক বাবার চরিত্রেই আমাকে বেশি দেখছেন। চেষ্টা করছি ভালো চিত্রনাট্যে কাজ করতে। তবে বেশির ভাগ কাজ গতানুগতিক মানের। তরুণ নির্মাতাদের কেউ কেউ ভালো করছেন। আমি আশাবাদী।’