এফডিসিতে নতুন কমপ্লেক্সের বিষয়টি জানেন না অনেক সিনিয়র শিল্পী

ভেঙে ফেলা হচ্ছে চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (এফডিসি) ৩ ও ৪ নম্বর ফ্লোর। ছবি: মনজুর কাদের
ভেঙে ফেলা হচ্ছে চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (এফডিসি) ৩ ও ৪ নম্বর ফ্লোর। ছবি: মনজুর কাদের

ভেঙে ফেলা হচ্ছে চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (এফডিসি) ৩ ও ৪ নম্বর ফ্লোর। ওই জায়গায় তৈরি হচ্ছে ১৫ তলা বিএফডিসি কমপ্লেক্স। পুরোনো দুটি ভবনের মেয়াদ প্রায় শেষ, এফডিসির আয় বাড়ানো এবং আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে এই কমপ্লেক্স নির্মাণ দরকার বলে মনে করছে বিএফডিসি কর্তৃপক্ষ। তবে এই কথার সঙ্গে একমত নন চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁদের বক্তব্য, এফডিসির মধ্যে বাণিজ্যিক ভবন তৈরি করলে এফডিসি স্বকীয়তা হারাবে।

বুধবার এফডিসিতে গিয়ে জানা যায়, অর্ধশতাধিক শ্রমিক সপ্তাহখানেক ধরে দুটি ফ্লোর ভাঙার কাজ করছেন। এফডিসির পরিচালক (কারিগরি ও প্রকৌশল) কে এম আইয়ুব আলী জানান, ৩২০ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি হচ্ছে এটি। এফডিসিকে আধুনিকভাবে গড়ে তুলতে ২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর প্রকল্পটি অনুমোদন করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৫ তলা ভবনের বেসমেন্টের তিনটি তলায় থাকবে গাড়ি পার্কিং। বাকি ১২ তলার তিনটি তলায় আবাসিক হোটেল, দুটি তলায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও বিমা কার্যালয়, একটি তলায় চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়, দুটো তলায় বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের কার্যালয়, দুটো তলায় শুটিং স্পট এবং ওপরের দুটো তলায় সিনেপ্লেক্স থাকবে। এমনই পরিকল্পনা আছে বলে জানান আইয়ুব আলী। তিনি বলেন, দু-তিনটি কারণে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, বিল্ডিং দুটির মেয়াদ শেষ হয়ে এসেছে। যেকোনো সময় ভেঙে বা ধসে পড়ার ঝুঁকি আছে। তা ছাড়া কমপ্লেক্স নির্মাণ করে আয় বাড়ানোর উপায়ও আছে। পর্যাপ্ত সিনেমা হল নেই, ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে সিনেপ্লেক্সও হলো। শুটিং ফ্লোরও থাকছে। শুধু আয়ই একমাত্র উদ্দেশ্য নয়।

এফডিসির দুটো ফ্লোর ভাঙা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট লোকজনের মধ্যে। ছবি: মনজুর কাদের

এফডিসির দুটো ফ্লোর ভাঙা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট লোকজনের মধ্যে। এই দুই জায়গায় শিল্পীদের নানা স্মৃতি রয়েছে। জ্যেষ্ঠ শিল্পী সারাহ্ বেগম কবরী, আলমগীর ও সোহেল রানা জানান, নতুন কমপ্লেক্স নির্মাণের খবর তাঁরা জানেন না। এত অল্প সময়ে ভবনের মেয়াদ শেষ হওয়ার বিষয়টিতে আপত্তি জানিয়ে আলমগীর বলেন, ‘এই ধরনের বিল্ডিং ১০০ বছরের আগে ভাঙা হয়, তা আমার জানা নেই। যদি কোনো সমস্যা থাকে, সংস্কার করুক। খুব কষ্ট লাগছে। এটা যদি শুধু এফডিসির কর্মকর্তা-কর্মচারী ভাইবোনদের বেতনের নিশ্চয়তার জন্য হয়, এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিছু নেই। চলচ্চিত্রকে ধ্বংসেরও একটা পদক্ষেপ বলা যায়।’ কবরী বলেন, ‘এই এফডিসি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া। এখানে লাভ-লস দুই-ই হবে। সরকারকে প্রণোদনা দিয়ে চালাতে হবে। কোনো কিছু না করা গেলে জাদুঘর করে রাখবে। এটা আমাদের এফডিসি, এফডিসিকে তার মতোই রাখতে হবে।’

সপ্তাহখানেক ধরে দুটি ফ্লোর ভাঙার কাজ করছেন শ্রমিকেরা। ছবি: মনজুর কাদের

এত দিন এ কথা বলেননি কেন, এমন প্রশ্নে কবরী বলেন, ‘এই ধরনের কিছু একটা যে হচ্ছে, তা আমাদের জানানো হয়নি। এখানে কোনো অবস্থায় বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ ঠিক হবে না। সরকার একদিকে অনুদানের মধ্য দিয়ে সিনেমা তৈরির পৃষ্ঠপোষকতা করছে, অন্যদিকে সিনেমা তৈরির কারখানায় ফ্লোর ভেঙে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করছে! বিষয়টা পরস্পরবিরোধী।’
শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর বলেন, ‘এটা কোনো অজুহাতই হতে পারে না। আমার এখন সন্দেহ লাগছে, না জানি একসময় এফডিসিই এখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।’
তবে চিত্রনায়ক রিয়াজ মনে করেন, সময়ের সঙ্গে এমন পরিবর্তন ইতিবাচক। তিনি বলেন, ‘বিল্ডিংয়ের যদি মেয়াদ শেষ হয়ে যায়, তাহলে শুটিংয়ের জন্য তা ঝুঁকিপূর্ণ। স্মৃতি থাকতেই পারে, কিন্তু এই জায়গাটা খুবই দামি। যদি ১৫ তলা বিল্ডিং করে চলচ্চিত্রের জন্য ভালো কিছু করা হয়, তাহলে ভালো হয়, তা মন্দ নয়। এফডিসি অনেক বছর ধরে ভর্তুকি দিয়ে চলছে। এখন নিজস্ব আয়ের রাস্তা তৈরি হওয়াটাকে ইতিবাচকভাবে দেখি।’
যদিও পরিচালক সমিতির মহাসচিব বদিউল আলমের কাছে এটি অঙ্গহানির মতো। তিনি বলেন, এই ধরনের কমপ্লেক্সে এফডিসির স্বকীয়তা নষ্ট হবে। তবে এ-ও সত্য, এফডিসি কর্তৃপক্ষ স্বাবলম্বী হবে।