এক নতুন অভিনেত্রী ভীষণ বাজে, অশ্লীল কথা বলছিল

কেউ আমার অভিনয়ের প্রশংসা করলে মনে হয় অনেক বড় পুরস্কার পেলাম। প্রশংসা পেলে ভালো কাজ করার আগ্রহ পাই।

অনেক কষ্ট ও সংগ্রাম করতে হয়েছে। অনেকের কথা শুনতে হয়েছে। অনেক ত্যাগ স্বীকার করে এটা অর্জন করতে হয়েছে। এখন নায়ক-নায়িকার বাইরে হাতে গোনা কয়েকজন কেন্দ্রীয় চরিত্রে কাজ করেন।

তখন আনন্দ নিয়ে কাজ করতাম। চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে অনেক বেশি সিরিয়াস থাকতাম। দুরুদুরু বুকে অভিনয় করে, কাজ শেষে আবার আমরা প্রচুর আড্ডা দিতাম। এখন শুধু আমরা নাটকের ফুটেজ নামাই। এই মাত্র পাঁচ ঘণ্টা টানা ছাদে শুটিং করে এলাম। পরের দৃশ্যের জন্য ডাকছে। একটুও বিশ্রাম নিতে পারছি না।

এই যুগে চরিত্রের জন্য কেউ সময় দেয় না।

ছাড় দিয়ে কাজ করতে খুব কষ্ট লাগে। নিজের মধ্যে দহন হয়। তখন মনে হয়, ইশ! যদি সুপার স্টার হতাম, তাহলে আমিও ক্ষমতা ব্যবহার করে বলতাম, পরের দৃশ্যের জন্য আমাকে প্রস্তুত হতে হবে। তারপর আমি করব। এখন আপাতত আমাকে আধা ঘণ্টা সময় দাও।

ঈদে ৯৫ ভাগ নাটকের শুটিং এক দিনে করেছি। প্রায় প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত টানা শুটিং করেছি। এ জন্য নির্মাতারা আমার ওপর নির্ভর করতে পারেন। তাঁরা জানেন, মিঠু আপাকে দিয়ে এক দিনে ২০টা দৃশ্য করানো যাবে। আমাকে যখন আসতে বলবে, তখনই আসব। যদিও ঈদে কাজ করতে গেলে কষ্টের মধ্যেও একটা তৃপ্তি থাকে। কিন্তু ধারাবাহিকে এই তৃপ্তিও থাকে না। নির্মাতার সঙ্গে এ নিয়ে কিছু বলতে গেলে মনোমালিন্য হয়।

আমার মনে কষ্ট আছে। পরিবারকে সময় দিতে পারি না। আত্মীয়স্বজনের কোনো অনুষ্ঠানে যেতে পারি না। দেশের বাইরে ঘুরে বেড়ানোর সময় হয় না। এখনো আমাকে কষ্ট করে চরিত্রের জন্য কস্টিউম কিনতে হয়। বহু বছর আমি কাজের চাপে চার ঘণ্টার বেশি ঘুমাতে পারি না।

আমার ১৮ বছরের ক্যারিয়ারের প্রথম ছয় বছর হুমায়ূন আহমেদ স্যারের সঙ্গে খুব আনন্দে কাজ করেছি। নুহাশ চলচ্চিত্রের বাইরে এসে টানা ১২ বছর আমাকে কষ্ট করতে হচ্ছে।

কখনো কখনো স্ক্রিপ্ট থাকে না, লাইনআপ দিয়ে একাধিক দৃশ্য করতে হয়। দিনের পর দিন শুটিংয়ে গিয়ে বসে থেকেছি। এটা খুবই কষ্টকর। অনেক নির্মাতা মুখে চার থেকে পাঁচ পাতা সংলাপ হরহর করে বলে যান। সেটাই আমাদের মনে রাখতে বলেন। অথচ পরে তাঁরা নিজেরাই ভুলে যান।

দুইটা ক্যামেরা দিয়ে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা টানা শুটিং করার পরও যখন নির্মাতারা বিরতি দিতে চান না, তখন প্রচণ্ড খারাপ লাগে। তখন মনে হয়, এটা অভিনয় নয়, একটা যুদ্ধক্ষেত্র। মনে হয় বলে দিই, আমি আপনাদের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যেতে পারছি না। কিন্তু সম্পর্কের খাতিরে আবার চুপ হয়ে যাই।

না। অনেক নির্মাতা আছেন, যাঁদের নাম শুনলে অনেকেই নাক সিঁটকান, কটাক্ষ করে বলেন, 'ও, অমুকের নাটকে কাজ করছেন!' আমি তাঁদের সঙ্গে কাজ করে আরাম পাই। তাঁরাই শিল্পীদের সম্মান দেন। তাঁরা আসমানের 'ভিউ' পাওয়া ডিরেক্টর না। তাঁদের মধ্যে মানবিকতা আছে। আর কিছু নির্মাতা আছেন, যাঁরা ফ্ল্যাট, বাড়ি, গাড়ি করার ডিরেক্টর। তাঁদের লক্ষ্য একটা ধারাবাহিক করবেন, দিনে ২০ থেকে ২৫টা দৃশ্য নামাবেন। শিল্পীদের রক্ত-মাংস ছেঁচে দিতে চান সেসব নির্মাতা।

না। আমার ক্যারিয়ার সব সময় তরতর করে ওপরেই উঠেছে। কারণ শুটিংয়ে যা-ই ঘটুক, সব সময় নিজের অভিনয়টা ভালো করার চেষ্টা করেছি। শিহাব শাহীন, মোস্তফা কামাল রাজ, মাবরুর রশিদ বান্না, কাজল আরেফিন অমির কাজও করি। আবার এমন কিছু নির্মাতার কাজও করি, যাঁদের নাম বলতে চাই না। আবার কারও কারও ষড়যন্ত্রের মধ্যেও পড়ি।

এই ঈদের একটি ঘটনা। এক নতুন অভিনেত্রী ভীষণ বাজে, অশ্লীল কথা বলছিল। তা আমি মেনে নিতে পারিনি। প্রতিবাদ করেছি। সে কারণে একজন বড় মাপের অভিনেতা আমাকে ভুল বুঝে কাজ থেকে বাদ দিয়েছিলেন। তাঁকে আমি ভীষণভাবে শ্রদ্ধা করি। আশা করছি তাঁর ভুলটা ভাঙবে। আরেকবার এক পরিচালক আমাকে শুটিং থেকে বাদ দিয়েছিল। তা-ও একজন অভিনেত্রীর ঈর্ষার কারণে ওই নির্মাতা আমাকে বাদ দিয়েছিলেন। ওই অভিনেত্রী ষড়যন্ত্র করে নির্মাতাকে বলেছিলেন, আমি নাকি অনেক সময় ধরে মেকআপ করেছি। এটা নিয়ে নির্মাতা আমার সঙ্গে বেশ বাজে ব্যবহার করে। তখন ভুল-বোঝাবুঝি হয়ে আমি বাদ পড়ে যাই।

অবশ্যই খারাপ লাগে। তবে দিন শেষে আমি বিজয়ী হয়েছি। তাঁরা আটকে আছে এক ঘরানায়। আর আমি সবার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। আমার মনে কোনো কূটচাল নাই। কে কী বলল, আমি পরোয়া করি না। আমাকে বাদ দিয়েছিলেন যাঁরা, তাঁদের একজন নির্মাতাকে ছয় বছর ব্যস্ততার কারণে শিডিউল দিতে পারিনি। সাত বছর পরে তাঁর সঙ্গে কাজ হয়েছিল। সেই নির্মাতা ভেবেছিলেন জেদ করেছি, কিন্তু আসলেই আমার শিডিউল ছিল না। আমার কারও ওপর রাগ, অভিমান, জেদ নেই।

মানুষকে সহায়তা করা। তিনি সব সময় মানুষকে সাহায্য করতেন। আর এই যে মাঝেমধ্যে এত সুন্দর সংলাপ দিয়ে ফেলি, এটা হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে কাজ করে শিখেছি।