>কোরিয়ান পপ বা কে–পপের ভক্তের সংখ্যা এ দেশে বেড়েই চলেছে। গান, সুর, কথা, পরিবেশনা, শিল্পীদের বেশভুষা, ব্যক্তিত্ব—সবকিছুতেই পশ্চিমা পপ গানের জগৎ থেকে আলাদা দক্ষিণ কোরিয়ার এই ঘরানা। জনপ্রিয় কে–পপ ব্যান্ডগুলো নিয়ে আমাদের এই ধারাবাহিক আয়োজন। কে–পপ ব্যান্ড ‘এক্সো’ নিয়েই আজকের এই লেখা।
২৩টি টিজার, দুটি একক শো ও দুটি মিউজিক ভিডিও প্রকাশ করে এসএম এন্টারটেইনমেন্ট। আনুষ্ঠানিক অভিষেকের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক্সো এভাবেই ঝড় তোলে। সালটা ২০১২। তখন ১২ সদস্যবিশিষ্ট ব্যান্ড এক্সো! সংখ্যাটা অনেক বড়। অন্য ব্যান্ডগুলোয় সাধারণত চার থেকে ছয়জন সদস্য থাকে। কিন্তু এক্সো যাত্রা করে এক ডজন সদস্য নিয়ে। বিশাল এক পরিবার তাদের।
অভিষেক
‘মাই লেডি’ গানটি নিয়ে এক্সোর প্রথম টিজার মুক্তি পায় ২০১১ সালের ডিসেম্বরে। এভাবে একটি একটি করে ২০১২ সালের মার্চ পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে টিজার প্রকাশ করতে থাকে এক্সো। ভিডিওগুলো থেকে ব্যান্ড সদস্য ও গানগুলোর কনসেপ্ট সম্পর্কে আংশিক ধারণা পাওয়া যাচ্ছিল। এক্সোর প্রথম প্রাক্–অভিষেক একক (প্রি-ডেব্যু সিঙ্গল) গান ছিল ‘হোয়াট ইজ লাভ’। ২০১২ সালের জানুয়ারিতে সেটি মুক্তি পায়। মার্চে ‘হিস্টোরি’ নামে মুক্তি পায় এক্সোর আরেকটি প্রাক্–অভিষেক একক। এই গানের আবার কোরিয়ান ও মান্দারিন ভার্সনও ছিল। সবশেষে ৯ এপ্রিল এক্সোর আনুষ্ঠানিক অভিষেক হয় ‘মামা’ গানটি দিয়ে।
সদস্য
২০১৪ সাল পর্যন্ত ১২ সদস্য নিয়ে দুটি সাব গ্রুপে এগিয়েছে এক্সো—একটি গ্রুপ এক্সো-কে, অন্যটি এক্সো-এম নামে বিভক্ত ছিল। দুটি সাব গ্রুপই কোরিয়ান ও মান্দারিন ভাষায় পারফর্ম করত। কিন্তু তিন সদস্যের প্রস্থানের পর বদলে যায় দলটি। ৯ সদস্য নিয়ে চলমান থাকে। এক্সোর প্রতিটি সদস্যেরই একক ক্যারিয়ার আছে। কেউ দলের বাইরে একা গান করেন, কেউ অভিনয় করেন সিনেমায়, কেউ আবার নাটকে।
কোরিয়ার পুরুষদের ১৮ থেকে ২৮ বছর বয়স থাকাকালে বাধ্যতামূলক সেনা প্রশিক্ষণে যোগ দিতে হয়। ২১ থেকে ১৪ মাসের এই প্রশিক্ষণে বর্তমানে এক্সোর দুই সদস্য শিউমিন ও ডিও কিয়ংসু যোগ দিয়েছেন। এ জন্য এক্সো এখন ৯ থেকে ৭ সদস্যের দল হয়ে গেছে।
অ্যালবাম
দক্ষিণ কোরীয়-চীনা বয়ব্যান্ড এক্সোর প্রথম অ্যালবাম এক্সওএক্সও মুক্তি পায় ২০১৩ সালের ৩ জুন। অ্যালবামটি দুটি সংস্করণে মুক্তি পায়—কোরিয়ান সংস্করণের নাম কিস এবং চীনা সংস্করণের নাম ছিল হাগ। অ্যালবামটি বিক্রি হয় ১ মিলিয়ন কপিরও বেশি। এক্সোর এই সাফল্যের ধারা অব্যাহত আছে বাকি অ্যালবামগুলোতেও।
স্বীকৃতি
২০১৭ সালে এক্সো ‘কোরিয়ান পপুলার কালচার অ্যান্ড আর্টস অ্যাওয়ার্ড’-এ পুরস্কৃত হয়। অনুষ্ঠানে ব্যান্ডপ্রধান সুহো বলেন, ‘এটা এক বিরাট সম্মানের ব্যাপার। আমরা এক্সো, সেই দল হব যারা বিশ্বকে শুধু কে–পপ সম্পর্কেই না, কোরিয়া সম্পর্কেও জানাবে।’
২০১৮ সালে কোরিয়ান সরকার এক্সোকে ‘ন্যাশনস পিক’ বলে ঘোষণা দেয়। ২০১৮ সালে শীতকালীন অলিম্পিকের সমাপনী অনুষ্ঠানে গান ও নাচ পরিবেশন করে দলটি। গত জুনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ‘কোরিয়ান পপুলার কালচার’–এর প্রতিনিধি হিসেবে দেখা করেন তাঁরা। এই দলে মুক্তি পাওয়া ৪টি শীতকালীন অ্যালবামের লভ্যাংশ ইউনিসেফের সেবামূলক কাজে দেওয়া হয়।
বিশেষত্ব
এক্সোর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে ব্যক্তিসাফল্য। প্রত্যেক সদস্যই আলাদাভাবে নিজ নিজ অবস্থানে পরিচিত। ডিও কিয়ংসু অভিনয়ে সক্রিয়, লে ঝাংয়ের অভিনয়ের পাশাপাশি একক অ্যালবামও রয়েছে, সুহো পরপর দুটি মিউজিক্যালে অভিনয় করেছেন, চেন ও বেকহিয়নেরও আছে একক অ্যালবাম ও অভিনয়জগতে পদচারণ, র্যাপার চানইয়োল করছেন সংগীত পরিচালনা।
এক্সোর গানগুলোর বিশেষ এক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন ঘরানার সম্মিলন। একটা গানেই র্যাপ, হিপহপ, আরঅ্যান্ডবি—সব পাওয়া যাবে। যেমন ‘পাওয়ার’ গানটিই ধরা যাক। এতে বিভিন্ন ঘরানার সম্মিলন আপনার মাথায় ঘুরতেই থাকবে। এ ছাড়া এক্সোর প্রতিটি অ্যালবামই ভিন্ন ভিন্ন ভাবনা থেকে সাজানো হয়। যেমন ২০১৮ সালে মুক্তি পাওয়া ডোন্ট মেস আপ মাই টেম্পো অ্যালবামটির মূল ভাবনায় শুধুই ‘বাইকার’। এক্সোর ভক্তকুলকে বলা হয় এক্সো-এল।