>সিনেমা, ওয়েব সিরিজ, নিজের ইউটিউব চ্যানেল—নতুন নতুন কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে অর্চিতা স্পর্শিয়া নিজেকে প্রাসঙ্গিক করে তুলেছেন। কাজ দিয়ে তিনি ব্যক্তি স্পর্শিয়াকে ছাপিয়ে যেতে চান। আর হ্যাঁ, প্রেম-টেম নয়, আপাতত একা থাকতে চান। ২৪ ঘণ্টাই বসবাস করতে চান অভিনয়ের সঙ্গে। সিনেমা থেকে শুরু করে স্পর্শিয়ার ব্যক্তিজীবন উঠে এল এই প্রতিবেদনে। লিখেছেন শফিক আল মামুন
নায়িকা স্পর্শিয়ার নতুন ছবি
১০ ডিসেম্বর সেন্সর ছাড়পত্র পেয়েছে। ডিসেম্বরেই মুক্তি পাচ্ছে কাঠবিড়ালি। আপাতত ছোট পরিসরেই চলছে ছবিটির প্রচার। তবে শুরুতেই স্পর্শিয়া জানিয়ে দিলেন, শিগগিরই বড় আকারে প্রচারে নামবেন তিনি ও তাঁর কাঠবিড়ালির দল। এই ছবিতে শুধু নায়িকা নন স্পর্শিয়া, কাজ করেছেন সহকারী পরিচালক হিসেবেও। তিনি জানালেন, এই ছবির কোনো প্রযোজক নেই। শিল্পী, চিত্রগ্রাহক, সম্পাদক, সংগীত পরিচালক কিংবা সহকারী পরিচালকেরাও এই ছবিতে কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক নেননি। সুতরাং ছবিটি তাঁদের সবার। তাই একে ঘিরে আবেগটাও সবার একটু বেশি। স্পর্শিয়া বলেন, ‘যেহেতু আমরা কোনো পারিশ্রমিক নিইনি। তাই একটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে এখানে কাজ করেছি। প্রায় তিন বছর ধরে কাজটি শেষ করে এনেছি। এখন দর্শকের কাছে ছবিটি পৌঁছে দেওয়ার জন্য শেষ শ্রমটা দেব।’
বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে নিয়ামুল মুক্তা পরিচালিত কাঠবিড়ালি একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। ঢাকার চলচ্চিত্রে একটি সিনেমা কোনো বাজেট ছাড়াই শেষ হবে, ভাবা যায়? স্পর্শিয়া কীভাবে দেখছেন বিষয়টিকে?—তিনি বলেন, ‘শুটিংয়ের আগে ছবিসংশ্লিষ্ট সবার কাছেই পরিচালক নিয়ামুল মুক্তা গিয়েছেন। বাজেট না থাকার বিষয়টি সবাইকে জানান তিনি। এরপর গল্পটা সবার এতই ভালো লাগে যে পারিশ্রমিক ছাড়াই সবাই যোগ দেয় কাঠবিড়ালিতে।’
ছবিতে স্পর্শিয়ার চরিত্রের নাম ‘কাজল’। গ্রামের এই মেয়েটি কখনো শান্ত, কখনো চঞ্চল। তাঁর চরিত্র ও গল্পটি নিয়ে স্পর্শিয়া বলেন, ‘নতুন একটি চরিত্র। নতুন একটি চ্যালেঞ্জ। ছবির গল্পটা এমনই যে যত দিন নারী-পুরুষ থাকবে, মানুষের মধ্যে বোঝাপড়ার জায়গা থাকবে, তত দিন এই গল্প পুরোনো হবে না।’
অনেক চরিত্র, একজন স্পর্শিয়া
ইতি তোমারই ঢাকা, আবার বসন্ত, মানুষের বাগান, এরপর কাঠবিড়ালি। স্পর্শিয়া জানালেন, প্রতিটি ছবিতেই তাঁর একটা থেকে আরেকটা চরিত্র ছিল আলাদা। তবে এই সব চরিত্রের একটা জায়গায় খুব মিল, এদের প্রতিটিই ছিল স্বাধীন, ঠিক যেমন স্পর্শিয়া। তিনি বলেন, ‘আমার চরিত্রগুলো কোনো না কোনোভাবে আমার ব্যক্তিজীবনের সঙ্গে মিলে যায়। আর এ ধরনের চরিত্র নিয়ে কাজ করাটা আমি উপভোগ করি।’
কচ্ছপ ও স্বপ্ন শুরু
ছোটবেলা থেকে ইচ্ছা ছিল চলচ্চিত্র নির্মাতা হবেন। ২০১১ সালে বিজ্ঞাপনী সংস্থা অ্যাপেলবক্স ও ২০১২ সালে রানআউট-এর সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। সর্বশেষ সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন কাঠবিড়ালি-তে। পড়াশোনার বিষয় হিসেবে বেছে নিয়েছেন গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতাকে। এখনই শেষ নয়, বছরখানেক হলো ‘কচ্ছপ’ নামের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান খুলেছেন এই অভিনেত্রী। স্পর্শিয়া বলেন, ‘সিনেমা নির্মাতা হওয়ার জন্যই সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছি, করছি। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানও খুলেছি। সেখান থেকে টুকটাক প্রামাণ্যচিত্র বানাচ্ছি। ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা, একদিন সিনেমা বানাব। নিজের একটা টিম থাকবে। বলতে পারেন কচ্ছপ দিয়ে সেই স্বপ্নের শুরুটা করতে পেরেছি।’
নাটক নয়, সিনেমা
সিনেমাতে কাজ করবেন বলেই এখন আর নাটকে অভিনয় করেন না স্পর্শিয়া। তাঁর মতে, ভালো একটা কিছু করতে হলে আরেকটা তো ছাড়তেই হবে। তিনি বলেন, ‘সিনেমাটাই এখন লক্ষ্য। এ জন্য আড়াই বছর ধরে নাটকে অভিনয় করছি না। একসঙ্গে সব মাধ্যমে কাজ করতে গেলে কোনোটাই ভালো হবে না। এ জন্য উপস্থাপনাও এখন আর করি না।’
আছেন ওয়েব সিরিজে
সিনেমা করছেন কিন্তু নাটকে নেই। তবে সম্প্রতি একটি ওয়েব সিরিজে অভিনয় করলেন অর্চিতা স্পর্শিয়া। আলফা আই প্রযোজিত এই ওয়েব সিরিজের নাম নো কাপল এন্ট্রি। কলকাতার সায়ান দাশগুপ্ত এটি পরিচালনা করেছেন। পুরো শুটিং হয়েছে ভারতের কলকাতায়। এটাই স্পর্শিয়া অভিনীত প্রথম ওয়েব সিরিজ। এ কাজটি নিয়ে স্পর্শিয়া বলেন, ‘দুটি কারণে এই কাজটা করেছি আমি। প্রথমত গল্প ভালো, বড় পরিসরে এর কাজ করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত আমার সহশিল্পী ছিলেন আফসানা মিমি।’
কথায় কথায় ওয়েব সিরিজে কাজের অভিজ্ঞতাও জানালেন স্পর্শিয়া। বললেন, ‘এর গল্প ছিল একটি কফিশপকে ঘিরে। কোনো সেট ব্যবহার করা হয়নি। একটি সত্যিকারের কফিশপে কাজ হয়েছে। পরিকল্পনা করে, রাত-দিন ভাগাভাগি করে কাজটি হয়েছে।’
ইতি তোমারই ঢাকা
১১ জন নির্মাতার ১১টি গল্প নিয়ে তৈরি হয়েছে চলচ্চিত্র ইতি তোমারই ঢাকা। গত মাসে ছবিটি বাংলাদেশে মুক্তি পেয়েছে। তার আগে ২৭টি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবে প্রদর্শিত হয়েছে এটি। দুটি উত্সবে পেয়েছে পুরস্কার। এ ছবির ১১টি গল্পের মধ্যে একটির নাম ‘চিয়ার্স’। সেই গল্পে জুঁই নামের একটি চরিত্রে কাজ করেছেন স্পর্শিয়া। এই ছবিটি নিয়ে স্পর্শিয়া বললেন, ‘এতগুলো উত্সবে ছবিটি প্রদর্শিত হয়েছে। এটা কোনো সহজ কথা নয়। এই ছবির মধ্য দিয়ে বিশ্বমঞ্চে নিজেকে তুলে ধরার সুযোগ পেয়েছি। গর্বিত আমি।’
প্রেম ছিল, নেই
ঝলমলে বিনোদনজগতের বাসিন্দাদের জীবনে সম্পর্কের ভাঙা-গড়া নতুন কিছু নয়। অভিনেত্রী স্পর্শিয়ার জীবনেও প্রেম এসেছিল, কিন্তু এখন নেই। বছরখানেক হলো জীবনের প্রেমপর্বকে বিদায় জানিয়েছেন স্পর্শিয়া। আফসোসের সুরে বললেন এই অভিনেত্রী, ‘প্রেমের সম্পর্কটা না হওয়াই ভালো ছিল।’ স্পর্শিয়া বলেন, ‘এক বছর হলো প্রেমের সম্পর্ক ভেঙে গেছে। এখন আর কোনো প্যারা নেই। ভালো আছি। আগামী পাঁচ বছরেও কোনো সম্পর্কে জড়াতে চাই না। একা থাকব।’