অভিনেতা সোহেল চৌধুরী মারা যাওয়ার পরে তাঁর ব্যবহৃত একটি টি-শার্ট, কয়েকটি ভাঙা পুতুল রেখেছিলেন মেয়ে লামিয়া চৌধুরী। সেগুলো মধ্যে যেন ২৩ বছর ধরে প্রয়াত বাবাকে খুঁজে পান তিনি। লামিয়ার কাছে বাবার স্মৃতিগুলো অস্পষ্ট। কল্পনাতেই বাবাকে খোঁজেন, বাবার সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
লামিয়া যখন খুব ছোট, তখন বাবা ও মায়ের বিচ্ছেদ হয়। পরে বেশির ভাগ সময় লামিয়া মা অভিনেত্রী দিতির কাছেই বড় হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার মা–বাবার বিচ্ছেদের পরে বাবার কাছে খুব একটা থাকা হতো না। কিন্তু বাবার প্রতি অনেক ভালোবাসা ছিল। মাঝেমধ্যে বাবার সঙ্গে দেখা হলেও সামনে মুখ ফুটে বলতে পারিনি, বাবা, তোমাকে অনেক ভালোবাসি। হয়তো বাবা মারা যাওয়ার সময়েও জেনে গেলেন তাঁকে ভালোবাসি না। বাবা, তোমাকে ভালোবাসি কথাটা না বলতে পেরে এখনো কষ্ট পাই।’
লামিয়া এখন কেক তৈরি করেন। বিশেষ দিবসগুলোতে তাঁর কেকের চাহিদা বেড়ে যায়। বেশ আগ্রহ–উদ্দীপনা নিয়ে কেক বানিয়ে সরবরাহ করেন তিনি।
কিন্তু বাবা দিবস এলে তাঁর মনটা খারাপ হয়ে যায়। তিনি নীরব থাকতে চান। বাবা হারানোর কষ্টটা এ সময় তাঁকে বেশি করে ঘিরে ধরে। বাবা দিবস উপলক্ষে অনেক কেকের অর্ডার পান। প্রতিটি কেকে তাঁকে লিখতে হয়, ‘বাবা, তোমাকে অনেক ভালোবাসি বা বাবাকে নিয়ে আবেগঘন কিছু কথা। লামিয়া বলেন, ‘কেকে বারবার “বাবা” লিখতে গিয়ে খারাপ লাগে। আবার ভাবি, আমার বাবা নেই। অন্যদের বাবা আছে। তাঁরা বাবাকে নিয়ে সুখে থাকুন। তাঁদের মনের কথাগুলো বাবাকে বলুক। বাবাহীন দিনটা অদ্ভুত এই অনুভূতির মধ্যে দিয়ে কেটে যায়।’
বাবার পছন্দের খাবার খেতে গেলেই বাবার কথা মনে পড়ে। বাবা বেঁচে থাকলে হয়তো বাবাকে পছন্দের খাবার বানিয়ে খাওয়াতেন। কিন্তু বাবা নেই, এখন দেখতে কেমন হতেন—সেসব ভাবেন লামিয়া।
খাবার সময়, বন্ধুদের আড্ডায় এখনো নিয়মিত বাবাকে অনুভব করেন লামিয়া। তাঁর বাবা মুরগির রোস্ট, কাটলেটসহ বিভিন্ন খাবার খেতে পছন্দ করতেন। বাবার পছন্দের খাবার খেতে গেলেই বাবার কথা মনে পড়ে। বাবা বেঁচে থাকলে হয়তো বাবাকে পছন্দের খাবার বানিয়ে খাওয়াতেন। কিন্তু বাবা নেই, বাবা প্রবীণ হলে বা এখন দেখতে কেমন হতেন—সেসব ভাবেন তিনি। ‘আমি নিশ্চিত, বাবা বেঁচে থাকলে আমার বন্ধু হতো।’ বলেন লামিয়া।
আড্ডায় বন্ধুরা গাড়ি নিয়ে আলোচনা করে। এসব লামিয়ার ভালো লাগে না। কিন্তু বাবা সোহেল চৌধুরী সব সময় নতুন মডেলের কেনার শখ ছিল। লামিয়া ভাবেন, বাবা থাকলে নিশ্চয় এসব আলোচনা জমে উঠত। লামিয়া বলেন, ‘মাঝেমধ্যে খুব ভেঙে পড়ি, হতাশ লাগে। কোনো বিপদে পড়লে কাছের অভিভাবক খুঁজে পাই না। বাবা নেই, মা নেই—অন্য রকম একটি পৃথিবীতে নিজেকেই সবকিছুর জন্য প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। বাবা থাকলে তাঁর পছন্দের কত কিছু করতে পারতাম। দুঃখ, কিছু বুঝে ওঠার আগে মাথার ওপর থেকে ছায়াটাই সরে গেল।’
লামিয়ার আফসোস, বাবা–মায়ের বিচ্ছেদের সময় বাবার সঙ্গে তাঁরও কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। বাবা সোহেল চৌধুরী মায়ের যাওয়ার পরে তাঁর ব্যবহার করা কিছু জিনিস নিয়ে এসেছিলেন, সেগুলোই তাঁর কাছে অমূল্য সম্পদ
লামিয়ার আফসোস, বাবা–মায়ের বিচ্ছেদের সময় বাবার সঙ্গে তাঁরও কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। বাবা সোহেল চৌধুরী মায়ের যাওয়ার পরে তাঁর ব্যবহার করা কিছু জিনিস নিয়ে এসেছিলেন, সেগুলোই তাঁর কাছে অমূল্য সম্পদ। লামিয়া বলেন, ‘বাবা অনেক শৌখিন ছিলেন। বাবা মারা যাওয়ার পরে তাঁর ব্যবহার করা শার্ট, টি-শাট, বাবার কেনা পছন্দের শোপিসগুলো নিয়ে এসেছিলাম। এগুলোর মধ্য দিয়েই বাবাকে খুঁজি।’
(লেখাটি পুনঃপ্রকাশিত। ২০২১ সালের ২০ জুন লেখাটি প্রথমবার প্রকাশিত হয়। আজ চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীর জন্মদিন উপলক্ষে লেখাটি আবার প্রকাশ করা হলো)