কথায় আছে, বলিউড যা আজকে ভাবে মালায়ালাম ভাষায় নির্মিত সিনেমার পরিচালকেরা তা অন্তত কয়েক দিন আগেই ভেবে থাকেন। সে ভাবনায় অতিরিক্ত রং-ঢং তো থাকেই না, বরং খুবই সাদামাটা কোনো গল্পকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়, যা দেখার পর দর্শকেরা ভাবতে বাধ্য হন।
জটিল কোনো ভাবনা নয়। সম্পর্কের টানাপোড়েন কিংবা বৈশ্বিক ষড়যন্ত্র তত্ত্ব তো নয়ই। এই ভাবনা জীবনকে সহজ করে দেখার। উচ্চাকাঙ্ক্ষা, করপোরেট সংস্কৃতি—মোটাদাগে ইন্টেলেকচ্যুয়ালিটির ধারেকাছে না গিয়ে জীবনকে উপভোগের ভাবনা।
এই তালিকায় শুরুতেই আসে ‘ওত্তাল’ নামের সিনেমাটি। জয়রাজের পরিচালনায় ২০১৪ সালে মুক্তি পাওয়া সিনেমাটি কেরালার কারনার গ্রামের এক দাদা আর নাতির গল্প। কোনো নাটকীয়তা ছাড়াই ২ ঘণ্টা ৭ মিনিটের সিনেমাটি বলেছে গ্রামীণ পরিবেশে প্রতিদিনকার সহজ-সরল জীবনের গল্প। যে গল্প যান্ত্রিক জীবন থেকে চোখ, মন দুটিকেই মুক্তি দেয়।
আগেই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, আজকের তালিকায় থাকা সিনেমাগুলো ইনটেলেকচ্যুয়ালিটিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখায়। এই যেমন ২০১৯ সালে মুক্তি পাওয়া ‘জালিকাতু’ সিনেমাটির গল্প গড়ে উঠেছে শুধু একটা মহিষকে খুঁজে বের করা নিয়ে। পাহাড়ি গ্রামে হারিয়ে যাওয়া একটি মহিষকে খুঁজে বের করতে গ্রামবাসীর নানা চেষ্টার চিত্র ফুটে উঠেছে সিনেমায়। সঙ্গে এটিও বোঝানো হয়েছে, একসঙ্গে থাকাটা অনেক কিছু।
কিন্তু করোনার দিনগুলোতে আপনি অন্তত একা থাকার চেষ্টা করুন। ঘরে একসঙ্গে থাকা ভালো কিন্তু বাকি সদস্যদের থেকে অন্তত ছয় ফুট দূরত্ব বজায় রাখা আরও ভালো। পরিচালক সামির তাহির প্রিয়জনের মাঝে থাকা দূরত্বের গল্প নিয়েই বানিয়ে ফেলেছেন ‘নেলাকাশাম পাচাকারাল ছুভারনা ভূমি’ (ব্লু স্কাই, গ্রিন সি, রেড আর্থ)। দূরত্ব মানেই যে জটিলতা, এই সিনেমা অন্তত সে কথা বলে না। বরং প্রিয়জনের কাছে যেতে নায়ক দুলকার সালমান কেরালা থেকে শত মাইল পাড়ি দিয়ে পৌঁছান সিকিমে। মাঝে ঘুরে বেড়ান কর্ণাটক, অন্ধ্র প্রদেশ, ওডিশা, পশ্চিম বাংলা ও নাগাল্যান্ড। সিনেমার শেষ দিকে যখন নায়ক প্রিয়জনের কাছে পৌঁছান, ততক্ষণে উপলব্ধি করেন মাঝের সময়টা জীবনকে অনেক কিছুর স্বাদ দিয়েছে।
জীবন একটাই, তাই উচিত প্রতি মুহূর্তের স্বাদ নেওয়া—এমনই ভাবনা থেকে পরিচালক মার্টিন প্রাক্কার ২০১৫ সালে বানিয়েছেন ‘চার্লি’। তুলনামূলক কম ভাগ্যবান মানুষের ভালোবাসা, অন্যের মুখে হাসি ফোটানোর টোটকা বলে দেয় ‘চার্লি’।
ভিন্ন প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এমন আরও গল্প বলে ‘ব্যাঙ্গালোর ডেইজ’, ‘কুম্বালাঞ্জি নাইটস’, ‘প্রেমাম’। আবহ সংগীত, চিত্রনাট্য, লোকেশন আর সুন্দর গল্পে যদি ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট কাটাতে চান, তাহলে দেখতে পারেন ফাহাদ ফাসিল অভিনীত মাহেশির্তে প্রাথিকারাম। আগে দেখে থাকলেও করোনার দিনগুলোতে আবার দেখতে পারেন ‘দৃশ্যায়ম’, ‘উস্তাদ হোটেল’, ‘কালি’।
আপাতত লম্বা হতে যাওয়া এই ঘরবন্দী দিনগুলোতে সিনেমা দেখেই না হয় জীবনের স্বাদ নিলেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে জীবন নিয়ে নতুন করে ভাববেন কি না সে প্রশ্নটা না হয় তোলা থাক।