এই ইন্ডাস্ট্রিতে লজ্জা থাকলে চলবে না: কৃতি

কৃতি শ্যানন
কৃতি শ্যানন
>নতুন একঝাঁক সুন্দরীর মধ্যে কৃতি শ্যানন এরই মধ্যে বলিউডে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন। পাঁচ বছরের ছোট্ট অভিনয়জীবন নিয়ে বেশ তৃপ্ত এই অভিনেত্রী। মুক্তি পেতে চলেছে তাঁর অভিনীত কমেডি ছবি অর্জুন পাটিয়ালা। মুম্বাইয়ের এক পাঁচতারা হোটেলে কৃতির মুখোমুখি প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি দেবারতি ভট্টাচার্য

অর্জুন পাটিয়ালা ছবিতে আপনি সাংবাদিকের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। এ জন্য কি বিশেষ কোনো প্রস্তুতি নিতে হয়েছে?

কৃতি শ্যানন: এটি একটি নিছক মজার ছবি। তাই জোরদার প্রস্তুতি নিতে হয়নি। তবে চরিত্রের প্রয়োজনে একটু হোমওয়ার্ক করতে হয়েছে। আগে আমি টিভিতে খবর দেখতাম না। চরিত্রের প্রয়োজনে খবর দেখা শুরু করি। দেখি কীভাবে সাংবাদিকেরা খবর পরিবেশন করেন। ছবিতে আমি ফিরোজপুর নামের একটা ছোট শহরের সাংবাদিক। বড় শহরের থেকে ছোট শহরের স্থানীয় সাংবাদিকদের অভিব্যক্তি আর ব্যক্তিত্ব অন্য রকম হয়। তাই লোকাল চ্যানেল বেশি দেখতাম আমি।

এই ছবিতে আপনার অভিনীত চরিত্র ‘রিতু রন্ধওয়া’ নারী হিসেবে খুব শক্তিশালী। ব্যক্তি কৃতি কতটা শক্তিশালী?

কৃতি: আমি মানসিকভাবে খুবই শক্ত। আমার মতামত, চিন্তাভাবনা—সবকিছুর মধ্যে এর প্রতিফলন পাওয়া যায়। অন্যায় দেখলে আমি প্রতিবাদ করি। কোনো কিছু চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করি না। যুক্তি ছাড়া আমি সহজে কিছু মেনে নিতে পারি না। আমাকে সে ধরনের চরিত্রগুলোই টানে, যেগুলো কিছুটা আমার মতো। আমি ধীরস্থির, শান্ত প্রকৃতির নারীর চরিত্রে নিজেকে মেলাতে পারি না। তাই অর্জুন পাটিয়ালার রিতু আমাকে আকৃষ্ট করেছে।

পরপর আপনাকে কমেডি ছবিতে দেখা যাচ্ছে। এর পেছনে বিশেষ কোনো কারণ?

কৃতি: বারেলি কি বরফি, লুকা ছুপ্পি, অর্জুন পাটিয়ালা—এগুলো কমেডি ছবি আমি মানছি। তবে আমার চরিত্রগুলো কিন্তু প্রতিটাই একটা থেকে আরেকটা আলাদা ছিল। বারেলি কি বরফির ‘বিট্টি’ অনেকটা পুরুষালি ছিল। আবার লুকা ছুপ্পির ‘রেশমি’ দিল্লিতে পড়াশোনা করা অনেক খোলা মনের একটা মেয়ে। আবার ‘রীতু’ ছোট শহরের সাংবাদিক। এদের প্রত্যকের শহর আলাদা। আর প্রতিটা শহরের আলাদা রং, আলাদা আদবকায়দা থাকে। সেগুলো চরিত্রের মধ্যে ফুটিয়ে তুলতে হয়। আর সত্যি বলতে আমি কমেডি ছবি দেখতে ভালোবাসি। কমেডির নানা ধরন আছে, নানা রং আছে। কমেডিতে সময়জ্ঞান থাকা খুব জরুরি। এ ধরনের চরিত্রে সংলাপ ছাড়াও শুধু অভিব্যক্তি দিয়ে অভিনয় করা যায়।

পানিপথ-এর মতো ইতিহাসনির্ভর ছবিতে অভিনয় করছেন। নিশ্চয় নতুন অভিজ্ঞতা হচ্ছে?

কৃতি: জানেন, এই ছবিতেও আমার অভিনীত চরিত্রের মধ্যে হাস্যরস লুকিয়ে আছে। এটা সম্পূর্ণ যুদ্ধভিত্তিক ছবি। তবে আমার অভিনীত চরিত্র পার্বতী বাঈ কোথাও দর্শকের মুখের একচিলতে হাসির কারণ হয়ে উঠবে। আমাকে পরিচালক আশুতোষ গোয়ারিকর বলেছিলেন যে আমার চরিত্রের মধ্যে একটু হাস্যরস মেশাতে। শুরুতে আমি নিজেকে এই চরিত্রের সঙ্গে কিছুতেই মেলাতে পারছিলাম না। কারণ, আমি দিল্লিতে বেড়ে ওঠা পাঞ্জাবি মেয়ে আর আমার চরিত্রটি মারাঠি। তবে পরে যখন পার্বতী বাঈয়ের সাজে নিজেকে আয়নায় দেখি, তখন অবাক হয়ে যাই। সত্যি তখন নিজেকে পার্বতী বাঈ লাগছিল। সাজ আর পোশাকের যে কী মাহাত্ম্য, তা তখন বোঝা গেল!

অর্জুন পাটিয়ালা ছবির দৃশ্যে কৃতি, দিলজিৎ ও বরুণ

চিত্রনাট্য নির্বাচনের সময় কোন কোন বিষয় মাথায় রাখেন?

কৃতি: আমি নিজেকে দর্শকের আসনে রেখে চিত্রনাট্য শুনি। যখন মনে হয় যে এই ছবি দেখতে আমি সিনেমা হলে যাব, তখন আমি তাতে সম্মতি দিই।

বলিউডের কোন কোন অভিনেত্রীকে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেন?

কৃতি: আমি কখনোই এভাবে দেখি না। বরং আমি অন্য অভিনেত্রীদের কাজ দেখে শিখতে চেষ্টা করি। দীপিকা পাড়ুকোন, আলিয়া ভাট, কঙ্গনা রনৌত, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া—তাঁদের প্রত্যেকের কাজ আমাকে অনুপ্রাণিত করে। বিশেষ করে প্রিয়াঙ্কাকে আমি খুব সম্মান করি। সত্যি বলতে প্রতিযোগিতার ভূত মাথায় চাপলে নিজের কাজে মনঃসংযোগ করতে পারব না।

আপনার অভিনয়জীবনের বয়স পাঁচ বছর। আপনি এখন বলিউডের প্রতিষ্ঠিত নায়িকাদের একজন। আপনার এই এগিয়ে যাওয়াতে কি আপনি সন্তুষ্ট?

কৃতি: আমি কখনো সন্তুষ্ট হই না। আর আমি মনে করি, একজন শিল্পী একবার সন্তুষ্ট হয়ে গেলে তাঁর এগিয়ে যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়। তাই আমি আমার মধ্যে খিদেটা ধরে রাখি। তবে আজ আমার ক্যারিয়ারে যে উত্তরণ হয়েছে, তার জন্য নিশ্চয় খুশি। আমি বা আমার পরিবারের কেউ ভাবতেও পারেনি যে আমি অভিনেত্রী হব। কারণ, ছোটবেলা থেকে আমি অসম্ভব লাজুক ছিলাম। মায়ের আঁচলের পেছনে লুকিয়ে থাকতাম। আমি যে দুনিয়ায় এখন বসবাস করি, সেখানে এসবের কোনো জায়গা নেই। এই ইন্ডাস্ট্রিতে লজ্জা থাকলে চলবে না। আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। আমি সব সময় কাজের মধ্যে থাকতে চাই। আরও ভালো ভালো ছবি করতে চাই। কিছু ছবি আমার চলেনি, তার জন্য অনুতপ্ত নই।

তারকাখ্যাতি কতটা উপভোগ করছেন?

কৃতি: আমি নিজেকে তারকা হিসেবে দেখি না। একজন ভালো অভিনেত্রী হিসেবে আমি সবার মনে বেঁচে থাকতে চাই। আজ কেউ যখন আমাকে আমার অভিনীত চরিত্রের নামে চেনে বা আমার নির্দিষ্ট কোনো সংলাপ কেউ আউড়ে যায়, অথবা আমার অভিনীত কোনো দৃশ্য ভালো লাগার কথা বলেন, একজন অভিনেত্রী হিসেবে সেটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি বলে মনে হয়।

এখন পর্যন্ত কোনো আক্ষেপ আছে কি?

কৃতি: একটা আক্ষেপ তো আছেই (সশব্দে হেসে)। ‘কিং অব রোমান্স’ শাহরুখ খানের সঙ্গে এক ছবিতে কাজ করেও তাঁর সঙ্গে রোমান্স করতে পারিনি। আমি খুবই আশীর্বাদধন্য যে দিলওয়ালে ছবিতে শাহরুখের সঙ্গে অভিনয় করেছি। এবার আমি শাহরুখের সঙ্গে পর্দায় প্রেম করতে চাই। তাঁর নায়িকা হয়ে কাজ করতে চাই।