উত্তম-সুচিত্রায় কাটতে পারে দিন

উত্তম-সুচিত্রার ছবি দেখে হারানো দিনে ফিরতে পারেন ।ছবি: সংগৃহীত
উত্তম-সুচিত্রার ছবি দেখে হারানো দিনে ফিরতে পারেন ।ছবি: সংগৃহীত

এমন কী আছে উত্তম কুমার আর সুচিত্রা সেন জুটির রসায়নে? যার জন্য কয়েক প্রজন্ম পেরিয়ে এ প্রজন্মের আলোচনায়ও উঠে আসে তাঁদের নাম! সরলীকরণের সুযোগ নিয়ে বলা যেতে পারে, সুচিত্রা হলেন তারাশঙ্কর, ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়, জীবনানন্দ, রবীন্দ্রনাথের গল্প, কবিতায় উঠে আসা সেই প্রেমিকাটির মতো। আর উত্তম? এই প্রশ্নের উত্তর সুচিত্রাই হয়তো দিয়েছিলেন হারানো সুর সিনেমার একটি গানে। উত্তম এমন, যাঁকে দেখে নারী হৃদয় বলে ওঠে, ‘তুমি যে আমার, ওগো তুমি যে আমার’।

সবাই বই পড়েই যে সিনেমায় উত্তম-সুচিত্রাকে দেখেছেন তা নয়। এই জুটির গল্প মুখে মুখে ভেসেছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। করোনাকাল যখন মোটামুটি এক-দুই প্রজন্মকে একসঙ্গে ঘরে থাকার সুযোগ করে দিয়েছে, তখন প্রজন্মের গণ্ডিতে আটকে না থাকা এই জুটির কিছু সিনেমা দেখা যাক। বাড়ি বসে এই সিনেমাগুলো দেখে কাটতে পারে আপনার সময়।

এই জুটির গল্প মুখে মুখে ভেসেছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। ছবি: সংগৃহীত

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের মহাশ্বেতা উপন্যাসটি যদি আপনার পড়া থাকে, তবে প্রথমেই দেখতে পারেন ১৯৭২ সালে নির্মিত হার মানা হার। নীরা নামের এক তরুণীর সংগ্রামমুখর জীবন। ছোটবেলায় মা–বাবাকে হারানো নীরা বড় হয়েছে জেঠা-জেঠিদের সঙ্গে। সিনেমার শুরু নীরার বিয়ের অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে। লগ্ন পেরোনোর ঠিক আগমুহূর্তে নীরা যখন জানতে পারে হবু বরের আগের পক্ষের স্ত্রী আছে, তখনই প্রতিবাদ করে এ বিয়ের। ঘর থেকে পালিয়ে আশ্রয় নেয় এক বৃদ্ধ চিত্রশিল্পীর বাড়িতে। যেখানে একসময় পরিচয় হয় বিনোদ সেনের সঙ্গে। বিনোদ ছবি আঁকার পাশাপাশি একটি অনাথ আশ্রম চালায়। শিক্ষক হিসেবে নীরার চাকরি জুটে যায় সেখানে। বিনোদের মতো সৎ আর সরল মানুষের প্রেমে পড়ে যায় নীরা। কিন্তু ভালোবাসার কথা জানাতে গিয়ে, জানতে গিয়ে বাধে দ্বন্দ্ব। ঠিক যে কারণে নীরা বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে ছিল, বিনোদকে ভালোবাসার কথা জানাতে গিয়ে জানতে পারে, এমনি এক ঘটনা। সিনেমার বাকি অংশ এগিয়েছে কাদম্বরী আখ্যায়িকার চরিত্র মহাশ্বেতার অনুপ্রেরণায়।

এমন কী আছে উত্তম কুমার আর সুচিত্রা সেন জুটির রসায়নে। ছবি: সংগৃহীত

উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত উত্তম-সুচিত্রা জুটির আরেকটি সিনেমা শাপমোচন। ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়ের শাপমোচন উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত সিনেমাটিও রোমান্টিক ঘরানার। কলেজজীবনে প্রেমের গল্প বলে ১৯৫৬ সালের সাগরিকা। ‘আমার স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা থাকে’ শিরোনামের যে গানটা বিভিন্ন সময় হয়তো শুনে থাকেন, তা এই সিনেমায় প্লে-ব্যাক করেছেন শ্যামল মিত্র। নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে মেডিকেল কলেজে পড়তে আসা অরুণ প্রেমে পড়ে ব্যক্তিত্বসম্পন্না সাগরিকার। নিজ থেকে কিছু বলার আগেই তৃতীয় মাধ্যম হয়ে একটি চিঠি পৌঁছায় সাগরিকার কাছে। রাগে অধ্যক্ষের কাছে সাগরিকা নালিশ দিলে কলেজ ছাড়তে হয় অরুণকে। প্রবীণ দর্শকদের এই সিনেমা করতে পারে স্মৃতিকাতর।

সাগরিকা মুক্তির দুই বছর আগে প্রথমবারের মতো উত্তম-সুচিত্রাকে একসঙ্গে দেখা যায় সাড়ে চুয়াত্তর–এ। আর প্রথমবারের মতো কেন্দ্রীয় চরিত্রে তাঁরা জুটি বাঁধেন অগ্নিপরীক্ষায়। এরপর একে একে উপহার দিয়েছেন মোট ৩০টি সিনেমা। জনপ্রিয় সিনেমাগুলোর মধ্যে দেখতে পারেন চাওয়া পাওয়া, সপ্তপদী, রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত, সবার উপরে ও জীবন তৃষ্ণা। সিনেমাগুলো প্রবীণদের যেমন স্মৃতিকাতর করবে, তেমনি এ প্রজন্মকেও শোনাবে বাংলা সিনেমার হারানো সুর।