ইঞ্জিনিয়ার থেকে নায়ক হলেন যেভাবে...

>গত বছরটা খুবই ভালো কেটেছে বলিউড অভিনেতা ভিকি কুশলের। রাজি, সঞ্জু, মনমর্জিয়া—এই তিন ধারার ছবিতে তাঁকে তিন ভিন্ন চরিত্রে দেখা গেছে। আর সব চরিত্রেই তিনি দর্শকের মন জয় করেছেন। আগামীকাল মুক্তি পাচ্ছে ভিকির এ বছরের প্রথম ছবি উরি। ভারতের মুম্বাইয়ের এক পাঁচতারা হোটেলে এ ছবির জের ধরেই গণমাধ্যমের সঙ্গে আড্ডায় বসেছিলেন তিনি। প্রথম আলোর সঙ্গেও আলাপ হয় ভিকির।
বাংলাদেশি ভক্তদের বার্তাও প্রতিনিয়ত পান ভিকি কুশল
বাংলাদেশি ভক্তদের বার্তাও প্রতিনিয়ত পান ভিকি কুশল

সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের ওপর উরি ছবিটি। সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হওয়ার আগে এই সম্বন্ধে কতটা অবহিত ছিলেন?

একদমই জানতাম না। আমার জন্য নতুন একটা শব্দ ছিল। আমি জানতাম দুই দেশের সেনাদের মধ্যে যুদ্ধ হয়। সার্জিক্যাল স্ট্রাইক বলে যে কিছু হয় তার ধারণাই ছিল না। নিউজে প্রথম পড়লাম সার্জিক্যাল স্ট্রাইক সম্পর্কে। জানলাম যে সেনাসদস্যদের ছোট একটা দল অন্যের ডেরায় গিয়ে তাদের মিশন করে আসে। এটা অঘোষিত একটা যুদ্ধ।

শোনা গেছে, শুটিংয়ের সময় আপনি আহত হয়েছিলেন...

হ্যাঁ, আমি হাতে চোট পেয়েছিলাম। ২৫ দিন ধরে ফিজিওথেরাপি চলে। তবে এর মধ্যেও শুটিং চালু ছিল।

পর্দায় সেনা অফিসার হয়ে ওঠার জন্য কী কী প্রস্তুতি নিতে হয়েছিল?

প্রথম কাজ ছিল ওজন বাড়াতে হবে। কিন্তু আমার সুন্দর একটা সমস্যা আছে যে কিছুতেই আমার ওজন বাড়ে না! তাই আমি খুবই চিন্তায় ছিলাম। ওজন না বাড়ালে আমার সেনা কর্মকর্তা হওয়া মুশকিল। একজন ট্রেইনার রাখা হয়েছিল শুধু আমার জন্য, যিনি আমার ডায়েট দেখতেন, আমাকে ট্রেনিং দিতেন। আগে জিমে যেতাম শুধু ফিট থাকার জন্য। এই ছবির জন্য আমাকে পাগলের মতো জিম করতে হয়েছে। এরপর মিলিটারি ট্রেনিংও নিতে হয়েছে। দম বাড়ানোর জন্য রোজ ২৫ পাক দৌড়াতে হতো। অন্য একজন মানুষকে কাঁধে চাপিয়ে দৌড়াতে হতো, তিন ঘণ্টা পানি ছাড়া ট্রেনিং, বন্দুক চালানো—আরও অনেক কিছু করতে হয়েছে। এমনকি ৪০ ফুট উঁচুতে থাকা হেলিকপ্টার থেকে দড়ি বেয়ে নামতাম। প্রথম ছয় মাস ছিল ওজন বাড়ানোর প্রস্তুতি। এরপর তিন মাস মিলিটারি ট্রেনিং হয়। এই ট্রেনিংয়ে শুধু শারীরিকভাবে নয়, মানসিকভাবেও একজন আর্মি অফিসার করে গড়ে তোলা হয়েছিল আমাকে।

আপনি আপনার অভিনীত চরিত্র থেকে কী কী শিখলেন?

সবার আগে শিখেছি ডিসিপ্লিন। অন্যকে কীভাবে সম্মান দিয়ে কথা বলতে হয় তা শিখেছি। মনের জোর কীভাবে বাড়াতে হয় উরি–তে অভিনয় করতে গিয়ে সেটাও জানতে পেরেছি।

আপনার বাবা শ্যাম কুশল বলিউডের একজন নামকরা অ্যাকশন ডিরেক্টর। প্রথমবার আপনি কোনো অ্যাকশননির্ভর ছবিতে কাজ করলেন। বাবার কাছ থেকে কোনো টিপস নিয়েছিলেন কি?

বলতে পারেন এই ছবিতে আমি একটা সুপারহিরোর চরিত্রে অভিনয় করেছি। বাবা আমাকে বলতেন, ‘জোশে না, হুঁশে কাজ কোরো’। কারণ জোশের (আবেগ) সঙ্গে করলে চোট লাগার আশঙ্কা থেকে যায়। সাবধানতার সঙ্গে সবকিছু করতে বলতেন।

আপনি ইঞ্জিনিয়ার হতে হতে কী করে অভিনেতা হলেন?

ছোটবেলা থেকে আমি মঞ্চে অভিনয় করি। কিন্তু কখনো ভাবিনি অভিনেতা হব। অভিনয় একটা শখ ছিল মাত্র। পড়াশোনা মন দিয়ে করতাম। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ফার্স্টক্লাস পেয়ে পাস করি। কলেজ থেকে একবার ইন্ডাস্ট্রিয়াল সফরে নিয়ে গিয়েছিল। ওখানে যখন আমি অফিসে ঢুকি তখন বুঝতে পারি এটা আমার দুনিয়া নয়। এই দুনিয়ায় আমি বাঁচতে পারব না।

উরি ছবিতে ভিকি কুশল

আপনি চিত্রনাট্য পড়ার সময় কোন বিষয়ের ওপর জোর দেন?

আমি দর্শক হিসেবে চিত্রনাট্য পড়ি। একজন দর্শক যেমন টিকিট কেটে ছবি দেখে, আমি সেইভাবে নিজেকে দেখি তখন। আর দেখি চিত্রনাট্যটা পড়ার প্রতি আমার আগ্রহ ক্রমে বাড়ছে কি না। তারপর দেখি একদিন পর্যন্ত ছবির গল্পটা আমার সঙ্গে আছে কি না। তবেই আমি সেই ছবিতে কাজ করি।

গত বছর একের পর এক সফল ছবিতে পাওয়া গেছে আপনাকে। এত সফলতার পর কি কোথাও নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন?

সফলতা বা ব্যর্থতা—কোনোটাকেই আমি বেশি গুরুত্ব দিই না। দুটোই জীবনের অঙ্গ। আমার লক্ষ্য হলো শুধুই কাজ করা। আর কাজের মধ্যেই সফলতা আসে।

নতুন এই বছরে নতুন কিছু কি শিখতে চান?

অনেক কিছু শিখতে চাই। কিন্তু সময় কোথায়। আমার ড্রাম আর সেতার শেখার খুব ইচ্ছা আছে।

আপনার প্রেমিকা হারলিন আপনাদের সম্পর্কের ব্যাপারে স্বীকার করেছেন। এ ব্যাপারে আপনি কী বলবেন?

(একটু লাজুক হেসে) আমি আর কী বলব। আমরা একসঙ্গে খুব ভালো সময় কাটাই। আমরা একে অপরের সঙ্গ খুব উপভোগ করি। ‘ব্রোকেন’ ওয়েব সিরিজে ওর অভিনয় দেখেছি। প্রথমবার ওর কাজ দেখলাম। দারুণ লেগেছে আমার।

‘নেটফ্লিক্স’-এর হাত ধরে আপনি বাংলাদেশেও বেশ জনপ্রিয় হচ্ছেন। কখনো বাংলাদেশের ভক্তদের কোনো প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন কি?

ওখান থেকে আমি অনেক মেসেজ পেয়েছি। বাংলাদেশে একবার যাওয়ার ইচ্ছাও আছে।

 সাক্ষাৎকার নিয়েছেন: দেবারতি ভট্টাচার্য, মুম্বাই