দেশে এমন অনেক জাতিসত্তা ও জনগোষ্ঠী আছে যারা বংশপরম্পরায় শত শত বছর ধরে এমনকি হাজার বছর ধরে বৈষম্য, শোষণ এবং বিচ্ছিন্নতার শিকার। এর প্রধান কারণ বিশ্বাস-অবিশ্বাস, জাতিগত পরিচয়, দাসত্ব, পেশা, জাতিভেদ প্রথা, সংস্কৃতি, ঘৃণা, ভৌগোলিক অবস্থান। সামাজিকভাবে বাদ পড়া, পিছিয়ে পড়া মানুষদের নিয়ে রাজধানীর দৃক গ্যালারিতে আজ বুধবার থেকে শুরু হয়েছে আলোকচিত্র প্রদর্শনী ‘ব্রাত্যজন’। লেখক, গবেষক ফিলিপ গাইনের ছবিতে ধরা পড়েছে এই মানুষদের জীবন, দুঃখ, অপমান, সংগ্রাম এবং আনন্দের মুহূর্তগুলো। সেখান থেকে প্রায় ১৫০টি ছবি নিয়ে শুরু হয়েছে প্রদর্শনী। প্রদর্শনীতে উঠে এসেছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, চা শ্রমিক, বেদে, কায়পুত্র, যৌনকর্মী, ঋষি, হরিজন, জলদাস এবং বিহারি জনগোষ্ঠীর জীবন। আলোকচিত্রী ফিলিপ গাইনের ‘ব্রাত্যজন’ শীর্ষক এই প্রদর্শনীতে দেশের প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সমস্যা ও সম্ভাবনার নানান দিক তুলে ধরা হয়েছে। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও চা শ্রমিকদের ওপর কাজ করেছেন।
আজকের প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে দেশ থেকে দারিদ্র্য নির্মূল করতে চাই। দেশের প্রায় চার শতাংশ জনগোষ্ঠীকে অদৃশ্য রেখে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয়। তাই এখনই জরুরি তাদের বাস্তবতা দৃশ্যমান করা।’
সভাপতির বক্তব্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা পিপিআরসি’র নির্বাহী পরিচালক হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘নিজের মানবিক গুণাবলি কাজে লাগিয়ে দৃশ্যমান নয়, এমন জনগোষ্ঠীকে দৃশ্যমান করতে দীর্ঘদিন কাজ করছেন ফিলিপ গাইন। তার ছবিতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বঞ্চনা, শোষণ ও আত্মশক্তির বাস্তবতা ফুটে উঠেছে। ’ এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন গ্রাম বিকাশ কেন্দ্রের (জিবিকে) প্রধান নির্বাহী মোয়াজ্জেম হোসেন, বেদে সর্দার সৌদ খান, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক চিত্ত ঘোষ, গারো নারী সুলেখা ম্রং, দৃক গ্যালারির প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল আলম, সাহিত্যিক ড. হরিশংকর জলদাস, আদনান জিল্লুর মোর্শেদ ও চলচিত্র পরিচালক মসিহউদ্দিন শাকের।
স্বাগত বক্তব্যে ফিলিপ গাইন বলেন, ‘গবেষণা ও রিপোর্ট করতে গিয়ে ছবি তুলতে হয়েছে। চা বাগানের জাতিসত্তার সংখ্যা নিয়ে নানা বিতর্ক আছে। আমি তাদের সব সম্প্রদায়ের মানুষের ছবি তুলেছি। এখানে তাদের উপস্থাপন করা হয়েছে। মধুপুরের ২৪টি ছবির মাধ্যমে শালবন এলাকার মানুষের জীবন, সামাজিক বনায়নের নামে প্রকৃতি ধ্বংসসহ বিভিন্ন বাস্তবতা তুলে ধরেছি। মাত্র দুই দশকের মধ্যে সামাজিক বনায়নের নামে প্রাকৃতিক বনের অধিকাংশ ধ্বংস করা হয়েছে। এখানকার বাসিন্দাদের অধিকাংশের জমি মালিকানা দলিল নেই। যদি এর সমাধান না করা হয় তাহলে ভবিষ্যতে গারোদের জীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠবে।’
আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধনের পর অতিথিরা গ্যালারি ঘুরে দেখেন। এর আগে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের একটি দল তাদের ঐতিহ্যবাহী নৃত্যের মাধ্যমে অতিথিদের পুরো আয়োজনে স্বাগত জানান।