আমার ভুলের দায়ভার আমারই: শ্রুতি হাসান

>
শ্রুতি হাসান। ছবি: সংগৃহীত
শ্রুতি হাসান। ছবি: সংগৃহীত
বাবা অভিনেতা কমল হাসান, মা অভিনেত্রী সারিকা। তাই চলচ্চিত্র জগতে পা রাখা খুব একটা কষ্টকর ছিল না শ্রুতির জন্য। তবে গায়িকা হতে চেয়েছিলেন এই তারকা–কন্যা। মাত্র ছয় বছর বয়সে গায়িকা হিসেবে অভিষেক হয় তাঁর। অভিনয় জগতেও শ্রুতির হাতেখড়ি হয় ছোটবেলায়। থিতু হন অভিনয়েই। এই মুহূর্তে দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্রে শ্রুতি প্রথম সারির নায়িকাদের একজন। বলিউডেও অভিনেত্রী হিসেবে তাঁর নাম আছে। সম্প্রতি শ্রুতিকে দেখা গেল আরও আট অভিনেত্রীর সঙ্গে, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র দেবী-তে। ভারতের মুম্বাইয়ের এক পাঁচতারা হোটেলে এই ছবির জের ধরেই শ্রুতি হাসানের মুখোমুখি দেবারতি ভট্টাচার্য
শ্রুতি হাসান। ছবি: সংগৃহীত

দেবীতে কাজ করতে আগ্রহী হলেন কেন?
শ্রুতি হাসান: ছবির বিষয়বস্তু শোনার পর আমার দুর্দান্ত লাগে। আমরা সব সময়ই সমাজে নারীর অবস্থান নিয়ে নানান কথা বলি। একজন নারীকে আরেকজনের পাশে দাঁড়ানো উচিত বলে মন্তব্য করি। দেবী-তে এই বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে খুব সুন্দরভাবে। একটা শক্তিশালী বার্তাও আছে এতে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে এই ছবি দিয়ে আমার অভিষেক হলো। ডিজিটাল মাধ্যমে অভিষেকের জন্য এর চেয়ে উপযুক্ত ছবি আর হতে পারে না। আমাদের দেশেই (ভারতে) একদিকে ঘরে ঘরে একাধিক দেবীর পূজা করা হয়, দেবীর ছবি সাজিয়ে রাখা হয়; আবার আমরাই পূজার ঘরের দেবীর মতো করে ঘরের মেয়েদের সম্মান করি না।

আপনার জীবনে ‘দেবী’ কে?
শ্রুতি: প্রত্যেক নারীই নানানভাবে আমাকে অনুপ্রাণিত করেন। প্রত্যেকের মধ্যেই কোনো না কোনো শক্তি লুকিয়ে থাকে। বিশেষত, আজকের নারীরা আমাকে অবাক করেন। তাঁরা নিজের ক্যারিয়ার, সংসার, সন্তান সবকিছু সুন্দরভাবে ভারসাম্য করে চলেন। তাই তাঁদের নানান গুণ আমাকে ভীষণভাবে উদ্বুদ্ধ করে। আমার পরিবারের মেয়েরা, আমার বান্ধবীরা প্রত্যেকেই আমার চোখে নানান রূপে দেবী।

আপনি কি নিজেকে নারীবাদী বলে মনে করেন?

শ্রুতি: আমি কখনোই নিজেকে নারীবাদী বলে দাবি করি না। তবে কেউ যদি আমাকে নারীবাদী মনে করেন, তাহলে তো খুব ভালো কথা। আমার সম্পর্কে কে কী ভাবল, তা নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথ্যা নেই। আমি সব সময় গর্ববোধ করি যে আমি একজন নারী।

আপনার এই চারিত্রিক দৃঢ়তা কোথা থেকে পেয়েছেন?

শ্রুতি: আমার মা অত্যন্ত ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ও স্বাধীনচেতা নারী। আমার বাবাও আমাকে সব রকম স্বাধীনতা দিয়ে বড় করেছেন। কন্যাসন্তান বলে কোনো কিছু থেকে আমাকে দূরে রাখেননি। একজন বাবা তাঁর মেয়েকে কীভাবে বড় করেন, সেটার ওপর কিন্তু অনেক কিছু নির্ভর করে। আমি মা–বাবা দুজনের থেকেই আমার এই দৃঢ়তা পেয়েছি।

কমল হাসান ও সারিকার মেয়ে হওয়া আপনার অভিনয়জীবনের জন্য কতটা সুবিধাজনক ছিল?

শ্রুতি: অবশ্যই তাঁদের কন্যা হওয়ার কারণে আমি কিছু ক্ষেত্রে লাভবান হয়েছি। আমার ক্যারিয়ারের দরজা তাঁদের কারণেই সহজে খুলে গেছে। এখন স্বজনপ্রীতি নিয়ে নানা কথাবার্তা হচ্ছে। আমি মানছি যে আমার পিতৃ ও মাতৃ পরিচয় আমাকে আমার সিনেমাজগতে নাম লেখাতে সাহায্য করেছে। কিন্তু এরপরের সফরটা ছিল একান্ত আমার নিজের। এই সফরে সফলতা–ব্যর্থতা যা পেয়েছি, তা সবই আমার একার। শুরু থেকেই আমাকে আমার বাবা-মায়ের সঙ্গে তুলনা করা হয়। কিন্তু আমি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে আমি নিজের কাজটা নিজের মতো করে যাব, অন্যের কথায় কান দেব না। আমার সফলতা আমার নিজের, আমার ভুলের দায়ভার আমারই।

এখন কি আপনি অভিনয়ে বেশি মনোযোগ দিতে চান?

শ্রুতি: আমি অভিনয় ও সংগীত দুটোতেই জোর দিচ্ছি। যুক্তরাজ্যে একটা মিউজিক প্রজেক্ট (গানের প্রকল্প) নিয়ে ব্যস্ত আছি। শিগগিরই ভারতে কিছু করব। এ ছাড়া সিনেমার কাজ তো আছেই। তামিল–তেলেগুতে একাধিক ছবি করছি।

নারী হিসেবে অন্যদের কী বার্তা দিতে চান?

শ্রুতি: আমি বলতে চাই আপনার অনুভূতি, আপনার আওয়াজ এবং আপনার গল্প খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একজন নারীর সোচ্চার হওয়া খুব জরুরি। তাই প্রত্যেককে আমি বলব, নিজের জন্য আওয়াজ তুলতে এবং নিজের মনের কথা বলতে। সবাই যদি নিজের আওয়াজ তোলেন তবেই সমাজের বুকে পরিবর্তন আসবে।

বলিউডে নারীরা কতটা নিরাপদ?

শ্রুতি: দেখুন, ‘মি টু’ বলিউডের বুকে এক বড় ধাক্কা। তখনই এই ইন্ডাস্ট্রির অনেক কঠিন রূঢ় রূপ আমরা দেখেছি। যদিও আমাকে সে রকম
কোনো অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি কখনো হতে হয়নি।