‘আমাকে কেউ ছবির কাজ দেয় না।’ বললেন ভারতের বাংলা গানের কিংবদন্তি শিল্পী, গীতিকার ও সুরকার কবীর সুমন। ২০১৪ সালে সৃজিত মুখার্জির ‘জাতিস্মর’ ছবির সব কটি গানের সুর ও সংগীত পরিচালনা করেছেন তিনি। পুরো কাজ এতটাই ভালো হয়েছিল যে ভারতের ৬১তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা সংগীত পরিচালকের পুরস্কার পান তিনি। সাংবাদিকেরা তাঁকে সেই কথা মনে করিয়ে দেন। এ সময় তিনি বললেন, ‘একজন দিয়েছিল, কারণ ওই ছবির আমার চেয়ে ভালো কাজ ভারতে আর কেউ করতে পারত না। বাংলা কবিদের লেখা গানে আর কেউ সুর দিতে পারত না বলে আমাকে দিয়েছিল। নয়তো দিত না। আমাকে কেউ এমনিই ছবি দেয়? দেয় না তো!’
কবীর সুমন আরও একটি ছবির গানের কথা লিখেছেন, সুর ও সংগীত পরিচালনা করেছেন। ছবির নাম ‘শঙ্কর মুদি’। পরিচালনা করেছেন অনিকেত চট্টোপাধ্যায়। কবীর সুমন বললেন, ‘এই ছবিতে অনিকেত আমাকে কেন নিয়েছে, তা ওদের জিজ্ঞাসা করুন।’
গত বুধবার কলকাতার সায়েন্স সিটির কাছে একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত হলো ‘শঙ্কর মুদি’ ছবি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন। এখানে জানানো হয়, ১৫ মার্চ বড় পর্দায় মুক্তি পাচ্ছে ‘শঙ্কর মুদি’। ছবির নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। আরও অভিনয় করেছেন শ্রীলা মজুমদার, কাঞ্চন মল্লিক প্রমুখ।
অনিকেত চট্টোপাধ্যায় বছর চারেক আগে ‘শঙ্কর মুদি’ ছবির কাজ শুরু করেন। কিন্তু কেন ছবিটি মুক্তি দিতে এতটা সময় লেগেছে, এ ব্যাপারে অনিকেত চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘একটা ছবি মুক্তি দিতে অনেক খরচ। প্রযোজক মাঝখানে অর্থসংকটের মুখোমুখি হন। এখন সমস্যা মিটেছে, তাই মুক্তি পাচ্ছে।’ ‘শঙ্কর মুদি’ ছবির ট্রেলারে লেখা আছে, ‘একটি রাজনৈতিক ছবি।’ এ ব্যাপারে পরিচালক বললেন, ‘ভুলভাল চুটকি দেওয়াকে রাজনৈতিক ছবি বলে চালানো হচ্ছে। কিন্তু সবার বোঝা উচিত, রাজনৈতিক ছবি মানে রাজনৈতিক তত্ত্ব বা সিদ্ধান্ত নিয়ে তৈরি করা সিনেমা। কারও বিরুদ্ধে চারটি চুটকি লিখে দেওয়াকে রাজনৈতিক ছবি বলে আমি মনে করি না।’
এ ব্যাপারে তিনি আরও বলেন, ‘এটা রাজনৈতিক ছবি। কারণ আমাদের দেশে উন্নয়নের নামে কতগুলো মল আর ব্রিজ তৈরি করা হচ্ছে। সেটা উন্নয়ন নয়। কারও জমি চলে যাচ্ছে, ছোট্ট মুদির দোকান যে চালাচ্ছিল, সে বড় দোকানের সঙ্গে কীভাবে পেরে উঠবে? তারা তো সুখে-দুঃখে আমার পাশে দাঁড়ায়। এই সামাজিক সম্পর্কের বুননটা নষ্ট হয়ে গেছে।’
‘শঙ্কর মুদি’ ছবির ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘কোন কোন জায়গা থেকে কী ধরনের আঘাত আসতে পারে, তা ধারণা করছি। সেই লড়াইয়ের জন্য আমি প্রস্তুত। একটা রাজনৈতিক পরিবেশে বিকল্প রাজনীতির কথা বলছি। সুতরাং জানি, কী হতে পারে, সেভাবেই লড়ব!’
কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘এ ছবি বর্তমান সময়ের সঙ্গে ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক। একটি বিষয়কে তুলে ধরা হয়েছে এই ছবিতে। অর্থাৎ এটি একটি বিষয়ভিত্তিক ছবি, যা নিয়ে বাংলা সিনেমায় তেমন কাজ হয়নি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ছবিটি মানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করবে।’
সবশেষে কবীর সুমন বললেন, ‘এ ছবি দেখতেই হবে। এ ছবি এক হেরে যাওয়ার গল্প। কান্নার গল্প, বুকের ভেতর যে কান্না নিয়ে আমরা যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকি।’