কথা ছিল আইনজীবী হওয়ার, হয়েছেনও তা–ই। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করে ছয় মাস ‘প্র্যাকটিস’ও করেছেন। তারপরই একদিন বইপত্র সব শিকেয় তুলে হয়ে গেলেন স্টার জলসার সিরিয়াল ঝাঁঝ লবঙ্গ ফুল-এর ‘লবঙ্গ’। অল্প সময়েই তুমুল জনপ্রিয়তা পাওয়া এই অভিনয়শিল্পীর নাম ইশা সাহা। চিনলেন না? তিনি প্রজাপতি বিস্কুট-এর শাওন, সোয়েটার ছবির টুকু, গুপ্তধনের সন্ধানে ও দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন-এর ঝিনুক। এই একেকটা চরিত্রই এখন হয়ে উঠেছে ইশার নেশা ও পেশা।
‘ডাব চিংড়ি’ নয়, পছন্দ ইলিশ
ভারতীয় বাঙালি অভিনেত্রী ইশা সাহার সঙ্গে প্রথম আলোর এই প্রতিবেদকের কথা হয় ফোনে, ১ অক্টোবর। তখন তিনি দুর্গাপূজা উদ্যাপনের জন্য মণ্ডপে যাওয়ার তাড়ায় ছিলেন। গাড়ি করে যতক্ষণে পূজামণ্ডপে পৌঁছালেন, ততক্ষণ কথা হলো। বললেন, আরও কিছু জানার থাকলে যেকোনো সময় পাওয়া যাবে তাঁকে। ইশা ঘোরাঘুরি শেষে বাড়ি ফিরলে এরপর মেসেঞ্জারে আবার চলে প্রশ্নোত্তর।
ডাব দিয়ে চিংড়ি মাছ রান্না খেয়েছেন কখনো? সেটা খাওয়া হোক বা না হোক, ডাব চিংড়ি নামে ইশা সাহার একটা সিনেমা কিন্তু এরই মধ্যে বেরিয়েছে অনলাইন স্ট্রিমিং সাইট জি–ফাইভে। এখানে চুপি চুপি বলে রাখি, চিংড়ি নয়, ইশার কিন্তু পছন্দ ইলিশ। পদ্মার ইলিশ।
ইশাকে পাওয়া যায় স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে
বড় পর্দায় ইশার কাজের সংখ্যা খুব একটা বেশি নয়। তবে ওয়েব প্ল্যাটফর্মগুলোয় বেশ সরব এই অভিনেত্রী। জি–ফাইভেই আছে এই অভিনেত্রীর আরেক কাজ ভালোবাসার শহর। সম্প্রতি শেষ করেছেন সহবাস ছবির শুটিং। তা ছাড়া আরেক স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম হইচইয়েও দেখতে পাওয়া যায় ইশার কাজ। আর কোন কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন সম্প্রতি? ইশা উত্তরটা দিলেন একটু কৌশলে। বললেন, ‘দুমদাম করে কাজে জড়িয়ে পড়তে চাই না। আমার কোনো তাড়াহুড়ো নেই। আস্তেধীরে, বুঝেশুনে কাজ করতে চাই। আপাতত একটা ছবির ডাবিং করছি। আর পূজা উপভোগ করছি।’ কাজের চাপে নাকি পূজার কেনাকাটাই করতে পারেননি। তবে যা উপহার পেয়েছেন, সেগুলো পরেই শেষ করতে পারছেন না!
অনলাইনে নানা দেশের গান-সিনেমার অবাধ বিচরণের কারণে ‘প্রেমে পড়া বারণ’ গানটি বাংলা ভাষাভাষী শ্রোতাদের কাছে এখন বেশ জনপ্রিয়। গানটি ইশা অভিনীত সোয়েটার ছবির। এর শেষ দৃশ্যে দেখা গিয়েছিল, ‘টুকু’রূপী ইশা শেষমেশ বিয়েটা আর করে না। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টায় লেগে পড়ে সে। তো ইশা কি বিয়ে করবে? উত্তর এল, ‘টুকু বিয়ে করে না কে বলল। করে নিশ্চয়ই, তবে পরে। সেটা আর আমরা দেখতে পাই না। আর ইশার কথা হলো, যাকে বিয়ে করে মন দিয়ে অভিনয়টা করা যাবে, নিজের সমস্ত স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন থাকবে, এমন ছেলেকেই বিয়ে করব।’
‘প্রিয়’দের তালিকা
মাত্র চার বছরের অভিনয় জীবনে ইশা সাহা অনেকের প্রিয় অভিনয়শিল্পী হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন। কিন্তু ইশা সাহার প্রিয় অভিনয়শিল্পী কে? ফোনের ওপাশ থেকে উত্তর এল, ‘জয়াদিকে (জয়া আহসান) তো আমরা আমাদের বলে দাবি করতে পারি, তাই না? তারপর সোহিনী সরকার আর পাওলি দাম।’ হৃত্বিক চক্রবর্তী আর আবির চট্টোপাধ্যায়েরও দারুণ ভক্ত তিনি। পছন্দের এই তালিকায় আছেন বাংলাদেশের দুজন অভিনয়শিল্পীও। কে তাঁরা? ভাবতে থাকুন। ততক্ষণে বলে দিই, বলিউডের নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকি, মনোজ বাজপেয়ি, ভিকি কৌশল, রাজকুমার রাও ও আয়ুষ্মান খুরানাকেও দারুণ লাগে ইশার।
কিছু বন্ধুবান্ধব আর দূরের আত্মীয়স্বজন থাকলেও কখনো সীমানা পেরিয়ে এই বাংলায় পা রাখা হয়নি ইশার। তবে জানালেন, শিগগিরই আসবেন বাংলাদেশে। কারণ, বাংলাদেশ থেকে যে ভালোবাসা আর সাড়া পেয়েছেন, তাতে তিনি আপ্লুত। জানালেন, বাংলাদেশের সিনেমা দেখা না হলেও এই দেশের নাটকের বড় ভক্ত তিনি। আরও জানালেন, আফরান নিশোর অভিনয় নাকি তাঁর খুবই ভালো লাগে। চুপি চুপি বললেন, ‘যদি কখনো আফরান নিশোর সাক্ষাৎকার নেন, তাহলে আমার কথা বলবেন, প্লিজ। আমার ছবি দেখেছে কি না, কেমন লেগেছে—জিজ্ঞেস করে আমাকে জানাবেন। আর না দেখলে একটু দেখতে বলবেন।’ আরেকজনের নাম বললেন ইশা, তিনি হলেন মেহ্জাবীন চৌধুরী। বললেন, ‘শি ইজ রিয়েলি গুড’। (তিনি আসলেই খুব ভালো)
‘দেবী’র অপেক্ষায়
অবসরে সিনেমা, নাটক, সিরিজ তো দেখেনই। প্রচুর বইও পড়েন। তাঁর প্রিয় লেখকদের মধ্যে প্রথম দিকেই রয়েছে হুমায়ূন আহমেদের নাম। বললেন, মিসির আলি তাঁর খুবই প্রিয় চরিত্র। ইশার তিন ‘প্রিয়’—হুমায়ূন আহমেদ, জয়া আহসান আর মিসির আলি—সবাইকে পাওয়া গেছে ‘দেবী’ সিনেমায়। কিন্তু ছবিটি এখনো কলকাতায় মুক্তি পায়নি বলে আফসোস করলেন ইশা। বললেন, অনলাইন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে এলেই দেখে নেবেন। বাংলাদেশের নাটকে বা ছবিতে কাজের প্রস্তাব পেলে করবেন? এক কথায় জবাব এল, ‘নিশ্চয়ই।’