রাজনীতি বন্ধে এমপিও শিক্ষকদের জন্য বিধিমালার প্রস্তাবকে ভালো বললেন শিক্ষামন্ত্রী

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি
ফাইল ছবি

এমপিওভুক্ত (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীরা এখন সরাসরি রাজনীতি করার সুযোগ পান। এই সুযোগ বন্ধে সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালার মতো এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্যও সুনির্দিষ্ট বিধিমালা করার প্রস্তাব দিয়েছেন ডিসিরা। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন ‘আমরা মনে করি এটি একটি ভালো প্রস্তাব। তাঁরা এটি নিয়ে কাজ করব।’

জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের প্রথম দিনে আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ওসমানি স্মৃতি মিলনায়তনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে শিক্ষামন্ত্রী এসব কথা বলেন।

জানা গেছে, এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য সরকারি কর্মচারীর মতো একটি বিধিমালা করার প্রস্তাবটি দিয়েছিলেন ঝিনাইদহের ডিসি মনিরা বেগম। প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলা হয়, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সরাসরি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এতে পাঠদান কার্যক্রমে তাঁদের দায়সারা আচরণ দেখা যায়। বিধিমালা হলে শিক্ষকতার পাশাপাশি ঠিকাদারি, সাংবাদিকতাসহ একাধিক পেশায় যুক্ত থাকার প্রবণতা ঠেকিয়ে শিক্ষকদের পাঠদানে আন্তরিক করা যাবে। বিধিমালা বা নীতিমালা থাকলে শিক্ষকতা পেশায় থেকে রাজনৈতিক সুবিধা গ্রহণে নিরুৎসাহিত করাও সম্ভব।

২৪ ঘণ্টার জন্য ‘শিক্ষা চ্যানেল’ এর প্রস্তাব দিয়েছিলেন ঝালকাঠির ডিসি। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন ‘আমরাও মনে করি এটি যৌক্তিক দাবি। প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকারের বদন্যতায় আমরা সংসদ টেলিভিশনটি ব্যবহার করি। যদি আরেকটি পূর্ণাঙ্গ টেলিভিশন পাওয়া যায় তাহলে হয়তো খুব ভালো হয়। এটি নিয়ে তাঁরাও কাজ করছেন, এটি ডিসিদের জানানো হয়েছে।’

বর্তমানে মাধ্যমিক থেকে উচ্চশিক্ষার বিভিন্ন বিষয় দেখভাল করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। আগে মাদ্রাসাও এই মাউশির অধীন ছিল। তবে এখন আলাদা অধিদপ্তর হয়েছে। নওগাঁর জেলা প্রশাসক মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর নামে স্বতন্ত্র একটি অধিদপ্তর করার প্রস্তাব দিয়েছেন। এ প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছে, বর্তমানে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের সব কার্যক্রম মাউশির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। তাই মাউশির কাজের চাপ বেশি থাকে। কাজের পরিমাণ বেশি হওয়ায় মাউশির সব কার্যক্রম বাস্তবায়নে সমস্যা হয়। পৃথক অধিদপ্তর হলে সেবা প্রদান ও মাঠপর্যায়ের কার্যক্রম পরিবীক্ষণ করা সহজ হবে।

তবে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে একমত হননি শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন ‘আমরা মনে হয় অনেক বেশি ভাগ করলে সমন্বয়টা বরং কমতে পারে। কাজেই এ বিষয়ে আরও ভেবেচিন্তে দেখার বিষয় রয়েছে।’

এর আগে আজ সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তিন দিনব্যাপী ডিসি সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে প্রধানমন্ত্রী জেলা প্রশাসকদের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ে ব্যবস্থা গ্রহণসহ ২৫টি নির্দেশনা বাস্তবায়নের পাশাপাশি শুধু প্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ করতে বলেছেন।

উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন ডিসিরা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুষ্ঠানের পরে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মন্ত্রণালয় ও বিভাগভিত্তিক কার্য-অধিবেশন শুরু হয়। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে আগামীকাল বুধবার (২৫ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ও প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর সঙ্গে এবং তৃতীয় দিনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে ডিসিরা সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।