সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলনকে ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে প্রভাব পড়েছে দেশের শিক্ষা কার্যক্রমের ওপর। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছেন এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীরা। ইতিমধ্যে দুই দফায় চার দিনের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছিল। গতকাল বৃহস্পতিবার একসঙ্গে আগামী ১ আগস্ট পর্যন্ত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এই অনির্ধারিত বন্ধের প্রভাব পড়েছে শিক্ষার অন্যান্য স্তরেও।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় মনে করছে, এখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার মতো পরিবেশ তৈরি হয়নি। চলতি মাস বন্ধের মধ্য দিয়েই যেতে পারে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকেরা বলছেন, তাঁরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে কোনো ঝুঁকি নিতে চান না। এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলে আবার কোনো সমস্যা হয় কি না, সেটিই তাঁদের ভাবনার বিষয়।
এর ফলে বিদ্যালয়গুলোর চলমান মাধ্যমিক পর্যায়ের ষাণ্মাসিক পরীক্ষাও বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে এই মূল্যায়ন কার্যক্রম চলছিল। ঢাকার একটি বিদ্যালয়ের এক সহকারী প্রধান শিক্ষক বলেন, বিদ্যালয় খোলার পর এই পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
কোটা সংস্কারের আন্দোলনের পাশাপাশি সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় কর্মসূচি বাতিলের দাবিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টানা কর্মবিরতিতে চলতি মাসের শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অচলাবস্থা চলছিল। এর মধ্যে কোটা সংস্কার দাবির আন্দোলনকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংঘাত-সংঘর্ষ শুরু হয়। পরিস্থিতি এমন অবস্থায় পৌঁছায় যে একের পর এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়। ১৬ জুলাই সব সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এই সিদ্ধান্তের আলোকে পরদিন ১৭ জুলাই শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
অনির্ধারিত বন্ধের কারণে ক্লাসের পাশাপাশি পরীক্ষার ওপরও প্রভাব পড়ে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েছে যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সব পরীক্ষা পরবর্তী তারিখ ঘোষণা না করা পর্যন্ত স্থগিত থাকবে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কবে খুলবে, তা কেউ বলতে পারছেন না। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর গত বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছি। তবে এখনো বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি।’
শিক্ষা বিভাগের সূত্রগুলো বলছে, শিক্ষার্থীদের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা এই মুহূর্তে বিবেচনা করছে না সরকার। তাদের ভাবনায় অগ্রাধিকার পাচ্ছে এইচএসসি পরীক্ষা। তারপর স্কুল-কলেজ খোলা হতে পারে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত হতে পারে।
একই দিন অর্থাৎ ১৬ জুলাই রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠান) এবং পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোর শ্রেণি কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধের ঘোষণা দেয় মন্ত্রণালয়।
এর ফলে বিদ্যালয়গুলোর চলমান মাধ্যমিক পর্যায়ের ষাণ্মাসিক পরীক্ষাও বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে এই মূল্যায়ন কার্যক্রম চলছিল। ঢাকার একটি বিদ্যালয়ের এক সহকারী প্রধান শিক্ষক বলেন, বিদ্যালয় খোলার পর এই পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে স্কুল, কলেজ খুলে দেওয়া হবে।
সারা দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যালয়গুলো কবে খুলবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আগামী রোববার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
কোটা সংস্কারের আন্দোলনকে ঘিরে সংঘাত-সংঘর্ষের কারণে প্রথমে ১৯ জুলাইয়ের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছিল। কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় একসঙ্গে ২১, ২৩ ও ২৫ জুলাইয়ের সব শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।
এইচএসসিতে পরবর্তী পরীক্ষা শুরুর কথা ছিল আগামী রোববার (২৮ জুলাই)। কিন্তু গতকাল সিদ্ধান্ত হয়েছে যে ২৮ জুলাই থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত সব শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত থাকবে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. আবুল বাশার প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের সূত্রে জানা গেছে, প্রথমে আলোচনা হয়েছিল ৩১ জুলাই থেকে পূর্বঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে যে ৪ আগস্ট থেকে আবার যথারীতি পরীক্ষা নেওয়া হবে। আর স্থগিত হওয়া পরীক্ষাগুলোর সময়সূচি পরে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হবে।
শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, পূর্বঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী, ১১ আগস্ট লিখিত পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল। এখন ১১ আগস্টের পর স্থগিত পরীক্ষাগুলো নেওয়া হবে।
শিক্ষা বিভাগের সূত্রগুলো বলছে, শিক্ষার্থীদের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা এই মুহূর্তে বিবেচনা করছে না সরকার। তাদের ভাবনায় অগ্রাধিকার পাচ্ছে এইচএসসি পরীক্ষা। তারপর স্কুল-কলেজ খোলা হতে পারে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত হতে পারে।
জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়টি এখন কেবল তাঁদের ওপর নির্ভর করছে না। এখন সবার আগে জননিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আগে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য জেলা প্রশাসকদের কাছ থেকে পরিস্থিতির প্রতিবেদন আনা হচ্ছে। সেগুলো পর্যালোচনা করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তাঁর মতে, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এখনই যাঁরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার কথা বলছেন, তাঁরা অবিবেচকের মতো বলছেন।