বন্যার কারণে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় এসএসসি ও দাখিলের মোট ১১ হাজার ২৬৮ পরীক্ষার্থীর পাঠ্যবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; যাদের নতুন বই দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর ক্ষতিগ্রস্ত পরীক্ষার্থীদের হাতে বই দেওয়ার পর কমপক্ষে দুই সপ্তাহ সময় দিয়ে স্থগিত হওয়া এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি শিক্ষা বোর্ডের একজন চেয়ারম্যান গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেছেন, মধ্য আগস্টে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই পরীক্ষা নিয়ে ১৭ জুলাই সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। ওই সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে জানা যেতে পারে। আর আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। বই দেওয়ার কাজটি করছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
এ বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা গত ১৯ জুন শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সিলেট, সুনামগঞ্জসহ দেশের কয়েকটি এলাকায় ভয়াবহ বন্যার কারণে পরীক্ষা শুরুর দুই দিন আগে তা স্থগিত করা হয়। ফলে এসএসসি ও সমমানের প্রায় ২০ লাখ ২২ হাজার পরীক্ষার্থী অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি গত বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, পরীক্ষার কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয় এমন কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে আছে। কোথাও কোথাও শিক্ষার্থীরা এখনো বাড়ি ফিরতে পারেনি। কতজন পরীক্ষার্থীর বইপত্র বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেই তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। পরীক্ষার্থীদের হাতে বইগুলো পৌঁছানোর পর অন্তত দুই সপ্তাহ প্রস্তুতির জন্য সময় দিতে হবে। তারপর এসএসসি পরীক্ষা নেওয়া যাবে।
এনসিটিবির দুজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) সিলেট আঞ্চলিক উপপরিচালক সিলেট ও সুনামগঞ্জেই পরীক্ষার্থীদের পাঠ্যবই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার তথ্য দিয়েছেন। সুনামগঞ্জে পাঠ্যবই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এসএসসি পরীক্ষার্থী ৮ হাজার ১৬৩ জন এবং দাখিল পরীক্ষার্থী ২ হাজার ৪২৩ জন। আর সিলেটে পাঠ্যবই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এসএসসি পরীক্ষার্থী ৫৩৪ জন এবং ১৪৮ জন দাখিল পরীক্ষার্থী রয়েছে। তবে এই দুই জেলায় এসব পরীক্ষার্থীসহ মাধ্যমিকের অন্যান্য শ্রেণি মিলিয়ে পাঠ্যবই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া মোট শিক্ষার্থী এক লাখের কিছু বেশি। হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের পাঠ্যবইয়ের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
এনসিটিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় বেশ কিছুসংখ্যক বাড়তি বই রয়েছে। সেগুলোই ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের দেওয়া হবে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম অঞ্চলের বই যাবে সুনামগঞ্জে। আর কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বই দেওয়া হবে সিলেটে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের কাছে।
আগামী রোববারের মধ্যে এসব বই সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলায় পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম।
সুনামগঞ্জ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা আশা করছেন, ছুটি শেষে ২০ জুলাই বিদ্যালয় খুললে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে পারবেন।
এদিকে বন্যার কারণে এসএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে যাওয়ায় এ বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও পিছিয়ে যাচ্ছে। আগের ঘোষণা অনুযায়ী এ বছরের এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হওয়ার সম্ভাব্য তারিখ ছিল আগামী ২২ আগস্ট। তবে শিক্ষা বোর্ডগুলোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, প্রস্তুতির জন্য এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার মধ্যে দুই মাসের বিরতির দরকার হয়। তাই এসএসসি পরীক্ষা যদি মধ্য আগস্টে শুরু করা যায়, তাহলে এইচএসসি পরীক্ষা হবে অক্টোবর মাসে।