নতুন শিক্ষাক্রম সঠিকভাবে বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব

যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম আছে, এমন অনেক দেশের চেয়ে বাংলাদেশে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাত বেশি। শিক্ষকের সংখ্যা ও দক্ষতা বাড়ানোর পরামর্শ শিক্ষাবিদদের। 

যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রমে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে স্বতন্ত্রভাবে বিবেচনায় নিয়ে সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাতে ফারাক রেখে এটি বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব, সেই প্রশ্ন উঠেছে

শিক্ষার্থীদের জন্য সর্বোচ্চ মানসম্মত শিখনের সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে শিক্ষাক্রমের মূল লক্ষ্য। বিষয়টি মাথায় রেখে চলতি বছর দেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শুরু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। এটিকে বলা হচ্ছে ‘যোগ্যতাভিত্তিক’ শিক্ষাক্রম। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন শ্রেণিতে নতুন এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। তবে এটি বাস্তবায়নে শিক্ষকদের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই পর্যাপ্ত শিক্ষক যেমন দরকার, তেমনি শিক্ষকদের দক্ষতাও দরকার।

এখন পর্যন্ত এই দুই ক্ষেত্রেই ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে শ্রেণিভেদে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাত অনেক বেশি। অথচ যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম থাকা অন্যান্য দেশে এ অনুপাত অনেক কম। এ পরিস্থিতিতে নতুন শিক্ষাক্রম যথাযথভাবে কতটা বাস্তবায়ন সম্ভব, সেই প্রশ্ন উঠেছে। 

শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন শিক্ষাক্রম পদ্ধতিগতভাবে ভালো। কিন্তু যোগ্যতাভিত্তিক নতুন শিক্ষাক্রম সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। পাশাপাশি তাঁদের পেশাগত দক্ষতা বাড়াতে হবে। বাংলাদেশের বাস্তবতায় হয়তো খুব তাড়াতাড়ি এ সমস্যার সমাধান সম্ভব না। তাই বিকল্প কিছু পদক্ষেপ নিয়ে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের কাজটি করতে হবে। তবে চূড়ান্ত লক্ষ্য হতে হবে পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া। 

নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শিক্ষকদের বেতন ও পদমর্যাদা যেমন বাড়াতে হবে, তেমনি পদোন্নতির ব্যবস্থাও রাখতে হবে। অবশ্য এ ক্ষেত্রে শিক্ষকদেরও মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে। ঢালাও কোচিং-প্রাইভেট পড়ানো থেকে সরে আসতে হবে।

২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশে মাধ্যমিক স্তরে শিখনফলভিত্তিক শিক্ষাক্রম বাস্তবায়িত হয়েছে। তবে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে যোগ্যতাভিত্তিক নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হয়েছে। এতে পড়ানোর ধরন, মূল্যায়ন ও পাঠ্যবইয়ে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে। শিক্ষাবিদদের অনেকেই নতুন শিক্ষাক্রমকে ভালো বলছেন। আগামী বছর দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সালে চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। এরপর চালু হবে উচ্চমাধ্যমিকে।

নতুন শিক্ষাক্রমে প্রথাগত পরীক্ষা কমে যাচ্ছে, জিপিএর পরিবর্তে ফলাফল হবে তিন স্তরে। আগামী বছর থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে অভিন্ন বিষয় পড়ানো হবে। বিভাগ বিভাজন হবে উচ্চমাধ্যমিকে। এত দিন একজন শিক্ষার্থী বিজ্ঞান, মানবিক নাকি ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পড়বে, সেটি ঠিক হতো নবম শ্রেণিতে। 

নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে ২০২৬ সালে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তখন শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচিতে হবে এসএসসি পরীক্ষা। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে বোর্ডের অধীনে দুটি পরীক্ষা হবে। আর নতুন শিক্ষাক্রমে প্রায় সব শ্রেণিতেই বড় অংশের মূল্যায়ন হবে শিখনকালীনের ভিত্তিতে। এ জন্য শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের রেকর্ড সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

নতুন এই শিক্ষাক্রম চালুর আগে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাক্রম পর্যালোচনা, বাস্তবায়নের বাস্তব অবস্থা যাচাই ও চাহিদা নিরূপণ সমীক্ষা করেছিল জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। ২০১৯ সালের ওই সমীক্ষা প্রতিবেদনে যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম চালু আছে, বিশ্বের এমন বেশ কিছু দেশের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর তুলনামূলক চিত্রসহ বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়। 

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, প্রতিবেদনে উল্লেখ করা ১১টি দেশের মধ্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত বাংলাদেশে বেশি। ওই সমীক্ষা প্রতিবেদন করার সময় দেশে যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম চালু হয়নি। তখন মাধ্যমিক স্তরে গড়ে ৪২ শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন শিক্ষক ছিলেন। 

নতুন শিক্ষাক্রম চালুর পর দেখা যাচ্ছে, মাধ্যমিকে এখন গড়ে ৩৮ শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন শিক্ষক রয়েছেন। তবে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এই অনুপাত আরও বেশি। সেখানে গড়ে ৫২ শিক্ষার্থীকে পড়ান একজন শিক্ষক। শুধু তা-ই নয়, কোনো কোনো বিদ্যালয়ে একেকটি শ্রেণিকক্ষে ৬০ থেকে ৭০ শিক্ষার্থী নিয়েও শিক্ষকদের ক্লাস করতে হয়।

অথচ ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী, ২০১৮ সালের মধ্যে মাধ্যমিকে গড়ে প্রতি ৩০ শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষকের ব্যবস্থা করার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। প্রাথমিকেও গড়ে ৩৮ শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক রয়েছেন। প্রাথমিকে এখনো শিক্ষকের ৩৮ হাজার পদ শূন্য। 

এনসিটিবি সমীক্ষায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের যে চিত্র তুলে ধরেছে, তাতে দেখা যায়, যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম থাকা সিঙ্গাপুরে গড়ে ১২ শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক রয়েছেন। মালয়েশিয়ায়ও একই চিত্র। থাইল্যান্ডে গড়ে ২৪ শিক্ষার্থীর জন্য একজন, ইন্দোনেশিয়ায় ১৫ শিক্ষার্থীর জন্য একজন, কম্বোডিয়ায় ২৯ শিক্ষার্থীর জন্য একজন, অস্ট্রেলিয়ায় ৯ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন, ফিনল্যান্ডে গড়ে ১৩ শিক্ষার্থীর জন্য একজন এবং ডেনমার্কে ১১ শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক রয়েছেন। 

অন্যদিকে ভারতে গড়ে ২৮ শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক রয়েছেন (ভারতে প্রবেশভেদে শিখনফলভিত্তিক ও যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম চালু আছে)। অবশ্য সমীক্ষা প্রতিবেদনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাতের তথ্যগুলো কয়েক বছর আগের। হালনাগাদ তথ্য কিছুটা হেরফের হতে পারে। 

ফিনল্যান্ড ও সিঙ্গাপুর শিক্ষায় বিশ্বসেরা হিসেবে স্বীকৃত। সিঙ্গাপুরের শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষকদের পেশাগত উন্নয়নকে খুবই গুরুত্ব দেওয়া হয়। স্কটল্যান্ডে শিখন পরিবেশকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। ফিনল্যান্ডে শিখনের ক্ষেত্রে গঠনকালীন মূল্যায়নকে গুরুত্ব দেয়। শিক্ষার্থীদের ওপর থেকে পরীক্ষাভীতি বা মানসিক চাপ কমাতে পাবলিক পরীক্ষার গুরুত্ব কম। উচ্চশিক্ষায় প্রবেশ করতে হলে মাধ্যমিক শিক্ষা শেষে একটি পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়।

যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রমে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে স্বতন্ত্রভাবে বিবেচনায় নিয়ে সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়। অর্থাৎ কম শিক্ষার্থীকেই শিখিয়ে ওপরের ক্লাসে পাঠানোর কথা। কিন্তু শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাতে এত ফারাক রেখে এটি বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব, সেই প্রশ্ন উঠেছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনসিটিবির এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম নিঃসন্দেহে ভালো। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের জন্য যেসব সুযোগ-সুবিধা দরকার, তাতে এখনো ঘাটতি রয়েছে। তাই নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষকের ব্যবস্থা যেমন করতে হবে, তেমনি তাঁদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। একই সঙ্গে পর্যাপ্ত উপকরণের ব্যবস্থাও নিতে হবে। নইলে সমস্যাটি থেকে যাবে।

এনসিটিবির কর্মকর্তাদের মূল্যায়ন হচ্ছে, এ পর্যন্ত নতুন শিক্ষাক্রমকে শিক্ষার্থীরা খুব ভালোভাবে নিয়েছে। তারা অভ্যস্ত হচ্ছে। অধিকাংশ শিক্ষকও ইতিবাচক। কিন্তু তাঁরা মনে করেন, কাঙ্ক্ষিত ফল পেতে হলে সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। 

সমন্বয়ে জোর

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা মূলত শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলে। এই দুই মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এই দায়িত্ব পালন করে। এনসিটিবির ওই সমীক্ষা প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নিজস্ব নীতি, কৌশল ও পরিকল্পনা অনুযায়ী পরিচালিত হয়। বাস্তবায়নকারী এসব সংস্থার মধ্যে সমন্বয় অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু তাদের মধ্যে কার্যকর সমন্বয়ের অভাবে অনেক ক্ষেত্রেই চাহিদা অনুযায়ী নানা উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে অবশ্যই উদ্ভাবনী ও কার্যকর পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।

সমীক্ষা প্রতিবেদনে পুরোনো শিক্ষাক্রমের আলোকে এসব কথা বলা হলেও নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও সমন্বয়ের অভাব দেখা গেছে। প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে নতুন শিক্ষাক্রম সমন্বিতভাবে বাস্তবায়নের কথা থাকলেও শুরুতেই এ নিয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব দেখা দেয়। এ কারণে গত বছর মাধ্যমিকে নির্ধারিত কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরীক্ষামূলকভাবে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হলেও প্রাথমিকে তা হয়নি। চলতি বছর প্রাথমিকের প্রথম শ্রেণিতে সরাসরি তা চালু হয়েছে। 

নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, বাস্তবতা হচ্ছে, এখনো প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের মধ্যে কিছু সমন্বয়ের অভাব আছে। বিশেষ করে মূল্যায়নের ক্ষেত্রে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের মধ্যে সমন্বয়হীনতা রয়ে গেছে। সর্বশেষ প্রশিক্ষণ ও মূল্যায়ন নির্দেশিকা নিয়েও এ সমস্যা দেখে গেছে।

পুরোনো শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের চিত্র

২০১২ সালে চালু হওয়া পুরোনো শিক্ষাক্রম এখনো বিভিন্ন শ্রেণিতে বাস্তবায়িত হচ্ছে। ওই সমীক্ষায় ২০১২ সালের শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন কেমন এবং সামনে কী করার উচিত—তার ওপর মূলত জোর দেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের অধীন ৯টি অঞ্চলের ১৮টি জেলা থেকে ২০৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (সাধারণ, মাদ্রাসা ও কারিগরি) শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও পরিচালনার কমিটির সদস্যদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে প্রতিবেদনটি করা হয়েছে। শিক্ষাক্রমের অবস্থা জানতে শ্রেণি কার্যক্রমও পর্যবেক্ষণ করা হয়। পাশাপাশি মাঠপর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তা, শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদেরও মতামত নেওয়া হয়। 

জাতীয় শিক্ষাক্রমের নির্দেশনামতো শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে শিক্ষকেরা কোনো সমস্যার মুখে পড়েন কি না, সেই প্রশ্নের উত্তরে ২৭ শতাংশ উত্তরদাতা সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। এই ২৭ শতাংশ শিক্ষক যেসব সমস্যার কথা বলেছেন, তার মধ্যে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাত বেশি (৭৭ শতাংশ) হওয়ার কথা রয়েছে। ভৌত অবকাঠামো অনুকূল নয় বলে মন্তব্য করেছেন ৪৪ শতাংশ শিক্ষক-শিক্ষার্থী। আবার ২৬ শতাংশ বলেছেন, শ্রেণি কার্যক্রমে বরাদ্দ করা সময় কম। অনেক শিক্ষক শিখন উপকরণের অপর্যাপ্ততার কথাও বলেছেন।

এ বছর চালু হওয়া নতুন শিক্ষাক্রমে উপকরণ বেশি লাগছে। এতে খরচও বেশি হবে। তবে পর্যাপ্ত উপকরণের ঘাটতি আছে। যেমন সম্প্রতি সেগুনবাগিচা হাইস্কুলে একদিন ডিজিটাল প্রযুক্তি বিষয়ের মূল্যায়ন কার্যক্রমে দেখা যায়, একটি ল্যাপটপে কয়েকজন শিক্ষার্থী সুযোগ পেয়েছিল। ফলে বিকল্প হিসেবে অনেকেই পোস্টারে কাজটি করেছে, যা ডিজিটাল প্রযুক্তির ধারণার সঙ্গে কিছুটা বেমানান। তাই পুরোনো শিক্ষাক্রমের বাস্তবতা মাথায় রেখে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

করণীয় কী

জাতীয় শিক্ষাক্রম উন্নয়ন ও পরিমার্জন কোর কমিটির সদস্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক
এম তারিক আহসান প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষকের তুলনায় শিক্ষার্থী বেশি হলে স্বাভাবিকভাবেই তা সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা কঠিন হয়। কিন্তু দেশে এখনো অনেক শ্রেণিকক্ষে ৭০ জনের বেশি শিক্ষার্থী আছে। এতে সব শিক্ষার্থীর শিখন সম্ভব হয় না। অনেক শিক্ষার্থী শিখন অর্জনে চ্যালেঞ্জে পড়ে। আবার বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে হয়তো হুট করেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত বিদেশের মতো নামিয়ে আনা যাবে না। নতুন শিক্ষাক্রমে সব শিক্ষার্থীর শিখন অর্জনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, সুতরাং তাদের কয়েকটি পদক্ষেপ নিতে হবে। 

তারিক আহসান বলেন, এসব পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে শিক্ষকের সংখ্যা বাড়াতে হবে। আর এই সংখ্যা যত দিন পর্যাপ্ত না হবে, তত দিন পর্যন্ত বিকল্প উপায়ে কাজ চালিয়ে যেতে হবে। যেমন আন্তবিষয়ের সম্পর্কের কথা মাথায় রেখে শিক্ষার্থীর শিখন-অভিজ্ঞতা সাজিয়ে কাজটি করা যায়। তবে এ জন্য শিক্ষকদের দক্ষতা বাড়ানো জরুরি। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষকদের সংখ্যা ও মান যেমন বাড়াতে হবে, তেমনি শিক্ষকদের ভালো বেতন-মর্যাদা ও পদোন্নতির বিষয়টিও ভাবতে হবে।