সরকারের চলতি মেয়াদেও হচ্ছে না শিক্ষা আইন

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

এক যুগের বেশি সময় ধরে শিক্ষা আইনের খসড়া নিয়ে কেবল আলোচনাই হয়েছে। কখনো বলা হয়েছে আইনের খসড়া চূড়ান্ত, কখনো আবার তা পিছিয়ে গেছে। বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদও শেষ হতে যাচ্ছে। কিন্তু এখনো শিক্ষা আইন চূড়ান্ত হয়নি। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মন্ত্রী জানালেন, এই মেয়াদেও শিক্ষা আইন আলোর মুখ দেখছে না।
আজ সোমবার রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে অপপ্রচার প্রসঙ্গে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা আইন নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এ তথ্য জানান।

শিক্ষামন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন ছিল, প্রস্তাবিত শিক্ষা আইন নিয়ে অনেক দিন ধরে আলোচনা হচ্ছে, সরকারের বর্তমান মেয়াদও (পাঁচ বছর) প্রায় শেষ হতে চলল। শিক্ষা আইন কি আসলেই আলোর মুখ দেখবে? প্রস্তাবিত আইনেও শিক্ষকদের কোচিং-প্রাইভেট নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছে।

এ প্রশ্নের জবাবে চলতি মেয়াদে জাতীয় সংসদের সর্বশেষ অধিবেশন ২ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, কাজেই এই মেয়াদে শিক্ষা আইন তো আর আলোর মুখ দেখছে না। আগামী মেয়াদে যদি দেখে।

২০১০ সালে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন হয়। শিক্ষাসংক্রান্ত সব আইন, বিধিবিধান, আদেশগুলো একত্র করে জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে এবং সেটি বাস্তবায়নের জন্য সমন্বিত শিক্ষা আইন প্রবর্তনের পদক্ষেপ গ্রহণের কথা ছিল। এ লক্ষ্যে ২০১১ সালের জানুয়ারিতে শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে ২৪টি উপকমিটি গঠন করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। যার মধ্যে অন্যতম ছিল শিক্ষা আইনের খসড়া প্রণয়ন করা। এরপর এ আইনের খসড়া নিয়ে অসংখ্যবার সভা হয়েছে, খসড়া কাটাছেঁড়া হয়েছে। নানাজনের মতামত নিয়ে আইনের খসড়া প্রণয়ন করে সেটি একাধিকবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগেও পাঠিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু বিভিন্ন রকমের ‘ত্রুটি ও প্রশ্ন’ থাকায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ খসড়াটি ফেরত পাঠায়। আলোচনার পর আলোচনা হয়েছে, কিন্তু আলোর মুখ দেখেনি আলোচিত শিক্ষা আইন।

শিক্ষাবিদ ও জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি বলে আসছেন জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে শিক্ষা আইনটি করা জরুরি ছিল। কারণ, আইনটি না হওয়ায় শিক্ষা ও শিক্ষানীতির অনেক কিছুই বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। ফলে শিক্ষা খাতের বিভিন্ন বিষয় চলছে জোড়াতালি দিয়ে নির্বাহী আদেশে বা বিচ্ছিন্ন নানা আইনের মাধ্যমে।

২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ‘ছায়া শিক্ষার’ নামে কোচিং ও প্রাইভেট টিউশনকে বৈধতা দিয়ে করা আইনের খসড়াটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু বিতর্কের মুখে সেটি ফেরত এনে আবার সংশোধনের উদ্যোগ নেয় মন্ত্রণালয়। পরের বছর আবার কোচিং, প্রাইভেট ও সব ধরনের নোট-গাইড, অনুশীলন বা সহায়ক বই নিষিদ্ধের বিধান রেখে আইনের খসড়া করে মন্ত্রণালয়। কিন্তু শেষমেশ সেটিও চূড়ান্ত হয়নি। এরপর আবার পরামর্শক নিয়োগ করে খসড়াটি চূড়ান্ত করলেও সেটিও আলোর মুখ আর দেখেনি।

প্রস্তাবিত আইনের সর্বশেষ খসড়ায় নোট-গাইড বন্ধ করা হলেও সরকারের অনুমোদন নিয়ে সহায়ক পুস্তক, বাঁধাই, প্রকাশ বা বাজারজাত করার সুযোগ রাখা হয়। অবশ্য, কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা কোনো শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সহায়ক পুস্তক কিনতে বা পাঠে বাধ্য করতে পারবেন না। এসব বই কিনতে বা পাঠে বাধ্য বা উৎসাহ দিলে, তা অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে। নিবন্ধন নিয়ে কোচিং চালানোর সুযোগও রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত এই আইনের খসড়ায়। তবে কোচিং সেন্টারে কোনো শিক্ষক তাঁর নিজ প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থীকে পাঠদান করাতে পারবেন না। এ ছাড়া কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষক নিজ প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াতে পারবেন না।

এখন সরকারি পর্যায়ে আলোচনা হচ্ছে, যেহেতু জাতীয় শিক্ষানীতি হয়েছিল এক যুগের বেশি সময় আগে, তাই শুধু সেই নীতির বিষয়কে প্রেক্ষাপট ধরে আইন করলে তা বাস্তবসম্মত হবে না। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটের বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নিয়ে আইনটি করতে হবে।