সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ‘অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক’ কোটা বাতিল এবং সংবিধানে উল্লেখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষিত কোটাকে ন্যূনতম মাত্রায় এনে সংসদে আইন পাস করার দাবিতে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
আজ বুধবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে শিক্ষার্থীদের একটি দল শাহবাগ মোড়ের সড়ক অবরোধ করে। এ সময় এই মোড় হয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তৈরি হয় প্রচণ্ড যানজট।
এ ছাড়া কারওয়ান বাজার, বিজয় সরণী, আগারগাঁও, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, ফার্মগেটসহ রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অবরোধ করেছেন আন্দোলনকারীরা।
পরে বেলা ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে মিছিল নিয়ে অবরোধকারীদের সঙ্গে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী। এর আগে বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’–এর ব্যানারে মিছিল শুরু হয়। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে মিছিলটি শাহবাগ মোড়ে যায়। এ সময় মিছিলের সামনের অংশটি সড়ক অবরোধ করতে হোটেল ইন্টারকনটিনেন্টাল ও বাংলামোটর মোড়ের দিকে যায়। পেছনের অংশটি শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয়।
বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে এ প্রতিবেদন লেখার সময় শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেওয়া আন্দোলনকারীরা দাবির পক্ষে নানা স্লোগান ও বক্তব্য দিচ্ছিলেন। অবরোধের কারণে শাহবাগ মোড় দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে তীব্র যানজট তৈরি হয়েছে। সড়কের এক পাশে অবস্থান করছে পুলিশও। তবে তারা আন্দোলনকারীদের বাধা দেয়নি। প্রতিবেদনটি লেখা পর্যন্ত শাহবাগ ছাড়াও সায়েন্সল্যাব, হোটেল ইন্টারকনটিনেন্টাল, বাংলামোটর, জিরো পয়েন্টসহ বিভিন্ন জায়গায় সড়ক অবরোধ করেন কোটাবিরোধীরা।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার বিরতি দিয়ে আজ তৃতীয় দিনের মতো ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করছেন কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা। এর অংশ হিসেবে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সড়ক অবরোধ করা হচ্ছে। এ ছাড়া গত রোববার ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে আজও ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও ছাত্র ধর্মঘট পালন করছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ স্কিমের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবিতে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ও কোটা নিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনে প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষা কার্যক্রম পুরোপুরি অচল হয়ে পড়েছে।
গত ১ জুলাই থেকে টানা আন্দোলনে আছেন কোটা সংস্কারের দাবি জানানো শিক্ষার্থীরা। শুরু থেকে চার দফা দাবি জানিয়ে এলেও গত ৭ জুলাই থেকে তাঁরা এক দফা দাবির কথা বলছেন। দাবিটি হচ্ছে সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম মাত্রায় এনে সংসদে আইন পাস করা।
আজ সকাল থেকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডসহ বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আরেকটি কর্মসূচি পালিত হচ্ছে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখার দাবিতে।
জাদুঘরের সামনে অবস্থান ও সমাবেশের পর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের দিকে যান। মিছিলে ‘কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন, মানি না, মানব না’, ‘জামায়াত-শিবির রাজাকার, এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়’ ইত্যাদি স্লোগান দেওয়া হয়। পরে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে তাঁরা আবার মিছিল নিয়ে জাদুঘরের সামনে ফিরে এসে কর্মসূচি শেষ করেন।