আগামী ২৩ ডিসেম্বর ক্যাডেট কলেজ ভর্তি পরীক্ষা ২০২৪। তোমরা যারা এই পরীক্ষায় অংশ নিতে যাচ্ছ তোমাদের জন্য শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির বিষয়ে কিছু পরামর্শ দেওয়া হলো।
প্রিয় ক্যাডেট কলেজে ভর্তি–ইচ্ছুক শিক্ষার্থী, দুদিন পর লিখিত ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষা হবে মোট ৩০০ নম্বরের।
সব মিলিয়ে বিষয় থাকবে গণিত ১০০, ইংরেজি ১০০, বাংলা ৬০ ও সাধারণ জ্ঞান ৪০।
তোমরা বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও সাধারণ জ্ঞানে অনেক পড়াশোনা করেছ। ৩০০ নম্বরের পরীক্ষার জন্য সময় থাকবে ৩ ঘণ্টা বা ১৮০ মিনিট। অর্থাৎ ১ নম্বরের জন্য মাত্র ৩৬ সেকেন্ড সময় পাবে। প্রশ্নপত্রে নৈর্ব্যক্তিক, শূন্যস্থান পূরণ, এককথায় উত্তর ও রচনামূলকসহ কয়েক ধরনের প্রশ্ন থাকবে। পরীক্ষায় তোমার জ্ঞান, অনুধাবন ও সৃজনশীলতার পরিচয় দিতে হবে। বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ের রচনামূলক অংশ খুব গুরুত্ব বহন করে। সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর করার পর ব্রেইন স্ট্রর্মিং ও মাইন্ড ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে বিষয়টি ভালোভাবে চিন্তা করে লেখা শুরু করবে।
পরীক্ষার আগের রাতে অর্থাৎ শুক্রবার রাত ১০টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়বে। অনেকেই পরীক্ষার আগের রাতে অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকে। এটা করা ঠিক নয়। ঘুমানোর আগে ক্যাডেট কলেজে ভতি৴ পরীক্ষার প্রবেশপত্র, জ্যামিতি বক্স, কলম-পেনসিল নির্ধারিত স্থানে গুছিয়ে রাখবে, সকালে উঠে যেন খোঁজাখুঁজি করতে না হয়।
পরীক্ষার নির্ধারিত কেন্দ্রে ৮টা ৩০ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যাবে। কেন্দ্রে গিয়ে পরিচিত বন্ধুবান্ধব পেয়ে উল্লসিত হয়ে দৌড়াদৌড়ি করবে না। তোমাকে লাইনে দাঁড়াতে হবে। সারিবদ্ধভাবে হলরুমে প্রবেশ করবে। তোমার কেন্দ্রের অবস্থান যদি তোমার অভিভাবকের জানা না থাকে, তাহলে পরীক্ষার আগের দিন গিয়ে দেখে আসা ভালো।
প্রশ্ন যে ধরনেরই হোক না কেন, ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। পরীক্ষার প্রশ্ন শুধু তোমার একার জন্যই সহজ বা কঠিন হবে না, সবার জন্যই হবে। তাই সহজ হলেও যা, কঠিন হলেও তা। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় যারা সবচেয়ে বেশি নম্বর পাবে, তারাই ভালো করবে।
তোমার চেষ্টা থাকবে দ্রুততার সঙ্গে উত্তর শেষ করা। মনে রাখবে, পরীক্ষায় ভালো করতে হলে দ্রুত লেখা, নির্ভুল লেখা ও সুন্দর হাতের লেখার কোনো বিকল্প নেই।
প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অনেক কৌশলী হতে হয়। আইনস্টাইন বলেছিলেন, ‘জ্ঞানের চেয়ে কল্পনা বেশি প্রয়োজন।’ বইয়ে সবকিছু লেখা থাকে না, উপস্থিত বুদ্ধি খাটিয়ে কাজ করতে হয়।
শিষ্টাচার অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ একটি গুণ। মানুষের অন্তর জয় করার মাধ্যম হলো সৌজন্যবোধ ও শিষ্টাচার। তোমার পোশাক হবে শালীন, আচরণ হবে ভদ্র। শুধু পরীক্ষা হলেই নয়, জীবনের প্রতিটি পরতে পরতেই সৌজন্যবোধের পরিচয় দিতে হবে। সৌজন্যমূলক আচরণে কোনো খরচ নেই, কিন্তু অনেক লাভ আছে।
পরীক্ষার হলে মাথা রাখতে হবে ঠান্ডা। অস্থিরতা শুধু ক্ষতিই করে। তাই ঠান্ডা মাথায় প্রশ্ন ভালোভাবে পড়ে উত্তর লিখতে হবে।
৩০০ নম্বরের পরীক্ষার জন্য সময় ১৮০ মিনিট অর্থাৎ প্রতি ১ নম্বরের জন্য সময় মাত্র ৩৬ সেকেন্ড। ওই পরীক্ষায় ভালো করার জন্য সবচেয়ে কার্যকরী পরামর্শ হলো প্রশ্ন পড়ো ও সঠিক উত্তরে টিক চিহ্ন দাও বা উত্তর লিখে ফেল। কঠিন মনে হলে বাদ দাও এবং পরের প্রশ্নে এগিয়ে যাও। এমনকি প্রশ্নটা সাইজে বড় হলে বা অপরিচিত মনে হলেও বাদ দিয়ে এগিয়ে যাও। এভাবে যদি প্রশ্নের উত্তর করতে পারো, তবে তোমার টেনশনও অনেক কমে যাবে। রচনামূলক প্রশ্নের উত্তরের জন্য যথেষ্ট সময় পাবে। এভাবে এগিয়ে গেলে অবশ্যই তুমি সফল হবে।
শুধু এক বিষয় নিয়ে সময় নষ্ট করলে হবে না, তোমাকে সব বিষয়ে কমপক্ষে ৪০% নম্বর পেতে হবে। তুমি ইংরেজি বা গণিতে ৯০% নম্বর পেলেও কাজ হবে না, যদি তুমি সাধারণ জ্ঞান বা বাংলায় ৪০%–এর কম নম্বর পাও। তাই প্রতিটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে উত্তর লিখতে হবে। প্রতিটি বিষয়ে আলাদাভাবে পাস করলে এবং মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে তোমার অবস্থান যদি প্রথম দিকে থাকে, তবেই তোমাকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত করা হবে। পরীক্ষায় পাস-ফেল বড় কথা নয়, অংশগ্রহণই আসল কথা। সবচেয়ে বড় কথা হলো, ক্যাডেট কলেজের ভর্তি পরীক্ষার জন্য তুমি যে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছ, তা তোমার ভবিষ্যতের শিক্ষাজীবনকে সুগম করবে।
মো. আফলাতুন, সহযোগী অধ্যাপক, ফেনী সরকারি কলেজ, ফেনী