অষ্টম শ্রেণি – বিজ্ঞান | অধ্যায় ৩ : সৃজনশীল প্রশ্ন (৩)

অষ্টম শ্রেণির পড়াশোনা

অধ্যায় ৩

আরিফ বাজারে গিয়ে লক্ষ করল, বিক্রেতারা সবজিতে পানি ছিটাচ্ছেন। সে কিছু সবজি কিনে পলিথিন ব্যাগে বাসায় নিয়ে এসে দেখল, পলিথিন ব্যাগের ভেতরে পানি জমে আছে। ব্যাপারগুলো তাকে কৌতূহলী করে তুলল।

ক. ইমবাইবিশন কী?

খ. পলিথিনকে কেন অভেদ্য পর্দা বলা হয়?

গ. আরিফের পর্যবেক্ষণ করা প্রথম ঘটনাটির কারণ ব্যাখ্যা করো।

ঘ. আরিফের পর্যবেক্ষণ করা দ্বিতীয় ঘটনাটির সঙ্গে উদ্ভিদের জীবনে সংশ্লিষ্ট শারীরবৃত্তীয় ভূমিকার গুরুত্ব বিশ্লেষণ করো।

উত্তর

ক. ইমবাইবিশন: কলয়েডজাতীয় শুকনা বা অর্ধশুকনা পদার্থের তরল পদার্থ শোষণের বিশেষ প্রক্রিয়াকে ইমবাইবিশন বলা হয়।

খ. যে পর্দা দিয়ে দ্রাবক ও দ্রাব উভয় প্রকার পদার্থের অণুগুলো চলাচল করতে পারে না, তাকে অভেদ্য পর্দা বলে। পলিথিনের মধ্য দিয়ে দ্রাবক ও দ্রাব উভয় প্রকার পদার্থের অণুগুলো চলাচল করতে পারে না। এ জন্য পলিথিনকে অভেদ্য পর্দা বলা হয়।

গ. আরিফ সবজি বিক্রেতাকে সবজিতে পানি ছিটাতে দেখেছিল। অন্তঃ–অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় সবজির অভ্যন্তরে পানি প্রবেশ করে। যে প্রক্রিয়ায় একটি বৈষম্যভেদ্য ঝিল্লির মধ্য দিয়ে হালকা ঘনত্বের দ্রবণ হতে পানি (দ্রাবক) অধিক ঘন দ্রবণের দিকে প্রবাহিত হয়, তাকে অভিস্রবণ বলে। এখানে সবজির ভেতরের কোষগুলো বৈষম্যভেদ্য ঝিল্লি হিসেবে কাজ করে থাকে। সবজির ভেতরে থাকে ঘন কোষ রস, আর বিক্রেতা যে পানি ছিটান, সে পানির ঘনত্ব কম থাকে। তাই অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় সবজির ভেতরে পানি প্রবেশ করে। ফলে সবজির সজীবতা অক্ষুণ্ণ থাকে। এ জন্য বিক্রেতা সবজিতে পানি ছিটান।

ঘ. আরিফের পর্যবেক্ষণ করা দ্বিতীয় ঘটনাটি প্রস্বেদনের কারণে হয়েছে। যে প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ পাতা ও অন্যান্য বায়বীয় অঙ্গ থেকে বাষ্পাকারে পানি নির্গত করে, তাকে প্রস্বেদন বলে। নিচে প্রস্বেদন প্রক্রিয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

১. পানি ও খাদ্যরস ওপরে ওঠানো: প্রস্বেদনের ফলে জাইলেম টিস্যুর ভেসেল নালিকার পানিস্তম্ভে যে টান পড়ে, তার ফলেই মূল দিয়ে শোষিত পানি ও খাদ্যরস ওপরে উঠে আসে।

২. পাতায় পানি ও খনিজ লবণ পৌঁছানো: পাতায় সালোকসংশ্লেষণের জন্য প্রয়োজনীয় পানি, ক্লোরোফিল অণু গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় Mg পৌঁছানোর কাজটিও করে থাকে প্রস্বেদন প্রক্রিয়া।

৩. পাতায় উপযুক্ত তাপ নিয়ন্ত্রণ ও শক্তি নির্গমণ: পাতা সূর্য থেকে প্রতি মিনিটে প্রচুর শক্তি শোষণ করে। এর মাত্র শতকরা এক ভাগ বিভিন্ন বিক্রিয়ায় খরচ হয়। বাকি তাপশক্তি প্রস্বেদনের মাধ্যমে বের হয়ে যায়।

৪. কোষ বিভাজন ও দৈহিক বৃদ্ধি: প্রস্বেদন প্রক্রিয়া পরোক্ষভাবে অভিস্রবণ প্রক্রিয়া চালু রাখে এবং সব কোষকে স্ফীত অবস্থায় রাখে। ফলে কোষ বিভাজন এবং অঙ্গের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়।

৫. পাতায় ছত্রাক আক্রমণ রোধ: প্রস্বেদনের ফলে পাতার পৃষ্ঠে কিছু পানিগ্রাহী লবণ জমা হয়। ফলে পাতা বিভিন্ন ছত্রাক আক্রমণ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়।

৬. সালোকসংশ্লেষণের জন্য প্রয়োজনীয় CO শোষণ: প্রস্বেদনের মাধ্যমে সালোকসংশ্লেষণের জন্য প্রয়োজনীয় CO শোষিত হয়ে থাকে।

সুতরাং আরিফের পর্যবেক্ষণ করা দ্বিতীয় ঘটনাটি (প্রস্বেদন) উদ্ভিদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

মোহাম্মদ আক্তার উজ জামান খান, প্রভাষক, রূপনগর সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা

◀ সৃজনশীল প্রশ্ন (২)