পেশাদারি দক্ষতা, প্রবলেম সলভিং কিংবা বিজনেস টুলস—শেখা থাকলে যেকোনো জায়গায় অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকা যাবে বহুগুণে। চাকরিজীবনে শেখা বিষয়গুলো যদি বিশ্ববিদ্যালয়েই শেখার সুযোগ হয়, তাহলে কেমন হয়! বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স) বিজনেস ক্লাব শিক্ষার্থীদের কর্মজীবনে একধাপ এগিয়ে নিতে কাজ করে, শেখায় বিভিন্ন স্কিল। নানা কার্যক্রম, আমোদ ও উচ্ছ্বাসে বছরজুড়ে কাটে ক্লাবের সদস্যদের সময়।
দেশের সিংহভাগ আয় আসে টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি থেকে। এ শিল্পে চাকরিজীবীদের সঙ্গে নেটওয়ার্কিং, পেশাদারি প্রশিক্ষণ দেওয়া, ব্যবসায়িক ধারণা লাভ, নেতৃত্বদান ইত্যাদির লক্ষ্যে ২০১৬ সালে বুটেক্স বিজনেস ক্লাবের যাত্রা। বছরজুড়ে প্রতিযোগিতা, সেমিনার ও ওয়ার্কশপ নিয়ে সাজানো হয় ক্লাবটি। তবে তাদের মূল আকর্ষণ হলো বিজনেস কেস প্রতিযোগিতা।
প্রতিবছর দেশজুড়ে আয়োজিত হয় আন্তবিশ্ববিদ্যালয় বিজনেস কেস প্রতিযোগিতা টেক্সবিজ (TexBiz)। এটি দেশে টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রির সমস্যা নিয়ে প্রথম বিজনেস কেস প্রতিযোগিতা। আরেকটি অন্তবিশ্ববিদ্যালয় আয়োজন আছে টেক্সপ্রেস (TexPres) নামে। টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতে ঘটে যাওয়া সমস্যা নিয়ে এসব প্রতিযোগিতাগুলো অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রতিযোগিতাগুলোতে উদ্ভাবনী চিন্তাধারার অংশগ্রহণকারী থেকে পাওয়া যায় বিভিন্ন সমস্যার সমাধান।
প্রতিযোগিতাগুলো টেক্সটাইলের ওপর ভিত্তি করে আয়োজন হলেও এতে অংশগ্রহণ করেন দেশের সব পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীরা কেবল সমস্যার সমাধান বের করেন না, বরং ব্যবসায়িক লাভ ও টেকসইয়ের বিষয়টিও বিবেচনা করতে হয়।
৩৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আয়োজিত হয় আন্তবিশ্ববিদ্যালয় বিজনেস কেস প্রতিযোগিতা টেক্সপ্রেস। প্রতিযোগিতা, অনলাইন-অফলাইন সেশন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভিজিট বা আউটডোর অ্যাকটিভিটির মাধ্যমে বছরজুড়ে চলে বুটেক্স বিজনেস ক্লাবের কার্যক্রম।
কমিউনিকেশন স্কিল, বিদেশে পড়াশোনা ও বিভিন্ন ক্যারিয়ার সম্পর্কে ধারণা দিতে অনলাইনে সেশন হয়, যার নাম ড্রিমওয়েভার (Dreamweaver)। দেশের স্বনামধন্য উদ্যোক্তা নিয়ে হয় এন্ট্রাপ্রেনিউর টক (Entrepreneur Talk)। শিক্ষার্থীরা উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প, অনুপ্রেরণা কিংবা নির্দেশনা পেয়ে থাকেন প্রোগ্রামটিতে।
শিক্ষার্থীরা টেক্সটাইল প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম দেখতে নিয়মিত ভ্রমণে যান দেশি ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে। ইতিমধ্যে স্কয়ার, ডাইসিন, ব্লুচিজ ও ব্যুরো-৬৬৬ প্রতিষ্ঠানে গিয়েছেন ক্লাবের সদস্যরা।
টেক্সটাইল প্রকৌশলে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের চূড়ান্ত বর্ষে করতে হয় দুই মাসের ইন্টার্নশিপ। ইন্ডাস্ট্রির স্পিনিং, ওয়েভিং, নিটিং, ফিনিশিং ইত্যাদি শিখতে গিয়ে অনেকে তাল হারিয়ে ফেলেন। শিক্ষার্থীদের দিকনির্দেশনামূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আয়োজন করে ইন্টার্ন-টক (InternTalk), যেখানে স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্ন করা গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীরা সেশন নেন।
ক্লাবে আছে আটটি ডিপার্টমেন্ট। ক্রিয়েটিভ অ্যাফেয়ার্স, আইটি, কমিউনিকেশন, পাবলিক রিলেশন, অ্যাডমিন, ইভেন্ট, ফিন্যান্স ও লজিস্টিকস। প্রতিটি ডিপার্টমেন্টের মধ্যে সমন্বয়ে ইভেন্ট, ওয়ার্কশপ ও সেশন আয়োজিত হয়। এতে পেশাদারি কর্মকাণ্ড শেখা হয়।
ক্লাবটিতে যে কেউ চাইলেই যুক্ত হতে পারেন না। এখানে যুক্ত হতে তিনটি ধাপ পার হতে হয়। প্রথমে অনলাইনে আবেদন ও প্রাথমিক টাস্ক জমা দিতে হয়। দ্বিতীয়ত প্রাথমিকভাবে আবেদনকারীর মধ্যে নির্বাচিত প্রার্থীদের পরবর্তী কাজ জমা নেওয়া হয়। তৃতীয় ও সর্বশেষ ধাপে ভাইভাতে অংশগ্রহণ করতে হয়।
ক্লাবটির বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসিফ ইকবাল বলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতা আয়োজনের ফলে শিক্ষার্থীরা স্কিলের উন্নতি করতে পারেন। ক্লাবের সদস্যরা অনেক আন্তরিক। বস্ত্রশিল্পের অবস্থার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে তারা কাজ করে যাচ্ছে। আয়োজিত ওয়ার্কশপগুলোর মাধ্যমে আমরা শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতা পাচ্ছি।’
আরেক শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ রিদয় বলেন, 'তারা ক্যাম্পাসের অন্যতম একটি কমিউনিটি, যারা শিক্ষার্থীদের উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করে। বিভিন্ন বিষয়ে যথাযথ বিশ্লেষণের মাধ্যমে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে প্রশিক্ষণ দেয়। ইন্টারপারসোনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট, নেটওয়ার্কিং ও নেতৃত্বের গুণাবলি অর্জনের জন্য তারা খুব ভালো কাজ করে যাচ্ছে।'
মাহবুব আলম রিয়াজ, শিক্ষার্থী, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়।