সাহিত্যের রূপ বলতে সাহিত্যের বিভিন্ন ধরনকে বোঝায়। সাহিত্যের বিভিন্ন রূপের মধ্যে কবিতা, গান, প্রবন্ধ, নাটক ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
কবিতা: কবিতা হলো ছন্দবদ্ধ রচনা, যা একজন কবির আবেগ-অনুভূতি ও চিন্তার সংক্ষিপ্ত রূপ।
গান: গান হচ্ছে নির্দিষ্ট সুর, তাল ও লয়ে উচ্চারিত ছন্দবদ্ধ রচনা বা সংগীত। গানে পরপর দুই লাইনের শেষে মিল-শব্দ থাকে। লাইনগুলো সুর করে এবং তালে তালে গাওয়া হয়। সুরই হলো গানের প্রাণ। ছন্দবদ্ধ ভাষা বা পদ্য–ভাষায় গান লেখা হয়।
গল্প: গল্প কথাসাহিত্যের এমন একটি বিশেষ
রূপ, যা দৈর্ঘ্যে ছোট এবং একটি ঘটনাকে কেন্দ্র
করে আবর্তিত হয়। গল্প হলো কোনো কাল্পনিক বা বাস্তব ঘটনার বর্ণনা, যা লেখক ভাষায় প্রকাশ করে লিপিবদ্ধ করেন। গল্পের কাহিনি নির্দিষ্ট কোনো বিষয় নিয়ে গদ্য-ভাষায় লিখিত হয়। সেই কাহিনিকে প্রকাশ করার জন্য কিছু চরিত্র থাকে। গল্পের চরিত্রগুলোয় অভিনয় করা যায়। গল্প কয়েকটি অনুচ্ছেদে বিভক্ত থাকে এবং চরিত্রের প্রয়োজনে মাঝেমধ্যে সংলাপ থাকে। গল্পের কাহিনি সাধারণত বর্ণনানির্ভর হয়।
প্রবন্ধ: গদ্য–ভাষায় কোনো বিষয়ের সুবিন্যস্ত আলোচনাকে প্রবন্ধ বলে। অর্থাৎ প্রবন্ধ হলো কোনো বিষয়ে যুক্তিপূর্ণ রচনা। প্রবন্ধে মূলত কোনো বিষয়ের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়। লেখকের সুচিন্তিত মতামত, অর্থাৎ যে বিষয়ে প্রবন্ধ লেখা হয়, লেখক সেই বিষয়ের আলোচনা-সমালোচনা সূচারুরূপে ব্যক্ত করেন। প্রবন্ধ কতগুলো অনুচ্ছেদে বিভক্ত থাকে। প্রতিটি অনুচ্ছেদই পরস্পরের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ ও সম্পর্কযুক্ত থাকে। প্রবন্ধের বিষয় সম্পর্কে শুরুতে ইঙ্গিত এবং শেষে লেখকের মতামত থাকে।
নাটক: মঞ্চে অভিনেতা-অভিনেত্রীর সাহায্যে মানবজীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা যখন সংলাপের মাধ্যমে দর্শকের সামনে উপস্থিত করা হয়, তখন তাকে নাটক বলে। অন্য কথায় রঙ্গমঞ্চে অভিনয়ের উপযোগী করে যে সাহিত্য রচিত হয়, তাকে নাটক বলে। সংলাপকে নাটকের প্রাণ বলা হয়। একটি আদর্শ নাটকে পাঁচটি অঙ্ক থাকে।
প্রশ্ন: গল্প ও নাটক কী? লেখো।
উত্তর: গল্প হলো কথাসাহিত্যের এমন একটি বিশেষ রূপ, যা দৈর্ঘ্যে ছোট এবং একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। অন্যদিকে নাটক অভিনয়ের উপযোগী করে গদ্য–ভাষায় লেখা হয়। সংলাপনির্ভর অভিনয়যোগ্য গদ্য রচনাই হলো নাটক।
প্রশ্ন: গল্প ও নাটকের মধ্যে সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্যগুলো লেখো।
উত্তর
১. গল্প ও নাটক উভয়ই গদ্য–ভাষায় লেখা হয়।
২. কোনো একটি বিষয় নিয়ে নাটক ও গল্পের কাহিনি আবর্তিত হয়।
৩. গল্প ও নাটকের কাহিনি প্রকাশ করার জন্য কিছু চরিত্র থাকে।
৪. গল্প কয়েকটি অনুচ্ছেদে বিভক্ত থাকে এবং চরিত্রের প্রয়োজনে মাঝেমধ্যে সংলাপ থাকে। নাটকে অঙ্কবিভাজন ও দৃশ্যপট থাকে এবং নাটকের চরিত্রগুলো সংলাপের মাধ্যমেই কাহিনি এগিয়ে নেয়।
৫. নাটকে সংলাপের পাশাপাশি স্থান, সময় ও পরিবেশের বর্ণনা থাকে। গল্পের কাহিনি, পরিবেশ, পরিস্থিতি—সবকিছু বর্ণনানির্ভর হয়ে থাকে।
প্রশ্ন: গান ও প্রবন্ধের মধ্যে পাঁচটি পার্থক্য লেখো।
উত্তর: গান ও প্রবন্ধের মধ্যে পার্থক্যগুলো নিচে দেওয়া হলো—
১. গানে পরপর দুই লাইনের শেষে শব্দের মিল থাকে। প্রবন্ধে শব্দের মিল থাকে না। প্রবন্ধ বর্ণনানির্ভর লেখা।
২. গানের লাইনগুলো নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যের হয়। প্রবন্ধের লাইনগুলো বর্ণনানির্ভর বলে নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যের হয় না।
৩. গান পদ্য–ভাষায় লেখা হয়। প্রবন্ধ গদ্য–ভাষায় লেখা হয়।
৪. গান সুর করে তালে তালে পড়া যায়। কিন্তু প্রবন্ধ গদ্য–ভাষায় লেখা হয় বলে সুর করে কিংবা তালে তালে পড়া যায় না।
৫. গানে কোনো অনুচ্ছেদ থাকে না। প্রবন্ধ কয়েকটি অনুচ্ছেদে বিভক্ত থাকে।
জাহেদ হোসেন, সিনিয়র শিক্ষক, বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা