'কত কাল ধরে’ রচনার মূল বিষয়বস্তু:
ইতিহাসের পৃষ্ঠায় সময় তার সব চিহ্ন লুকিয়ে রাখে। এটা শুধু রাজা-বাদশাদের কথা নয়। বরং ইতিহাসের বড় অংশ জুড়ে রয়েছে সাধারণ মানুষের কথা। ‘কত কাল ধরে’ রচনায় বাঙালির আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন ইতিহাসের ধারা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে রাজা-মন্ত্রী-সামন্ত-সৈন্য সব মানুষের জীবনের কথা রয়েছে।
হাজার বছর আগে এ দেশের পুরুষরা ধুতি পরত, মেয়েরা শাড়ি পরত। শুধু যোদ্ধারা জুতা ব্যবহার করত, সাধারণ লোকের তা সামর্থ্যের বাইরে ছিল। তবে তারা পায়ে কাঠের খড়ম পরত। এ ছাড়া সাজসজ্জার দিকে ঝোঁক ছিল বাঙালির। নারী ও পুরুষেরা নানা বাহারের চুল রাখত। মেয়েরা নানা রকম প্রসাধনী ব্যবহার করত। নারীদের পাশাপাশি পুরুষদেরও অলংকার ব্যবহারে চল ছিল।
প্রাচীনকাল থেকে ভাত ছিল বাঙালির প্রিয় খাবার। তারা নানা রকম টাটকা তরিতরকারি দিয়ে প্রতিদিন আহার করত। ভাতের পর মাছ ছিল প্রিয় খাবার। শুঁটকির চলও সেকালে ছিল। ছাগল, হরিণ ও পাখির মাংসও সবাই খেত। অন্যান্য প্রিয় খাবারের মধ্যে ছিল ক্ষীর, দই, পায়েস, ছানা, খাজা, মোয়া, নাড়ু, পিঠাপুলি, বাতাসা, কদমা প্রভৃতি। ফল-ফলাদির মধ্যে আম-কাঁঠাল, তাল-নারকেল ইত্যাদি ছিল সবার প্রিয়। সেকালের সব রান্নাবান্না হতো মাটির পাত্রে।
সেকালে পুরুষেরা শিকারপ্রিয় ছিল। নারী ও পুরুষের মধ্যে নানা রকম খেলাধুলার চল ছিল। গানবাজনার জন্য নানা রকম বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার ছিল। সেকালে যাতায়াতের প্রধান বাহন ছিল নৌকা। ধনী লোকের জন্য ছিল হাতি ও ঘোড়ার গাড়ি আর সাধারণ লোকের জন্য গরুর গাড়ি। অভিজাতদের মধ্যে পালকির ব্যবহার ছিল। ধনী লোকের বাড়ি-ঘর ইট-কাঠের হলেও বেশির ভাগ সাধারণ বাড়ি ছিল কাঠ-খড়-মাটি-বাঁশের তৈরি
সেকালে ধনী-দরিদ্রের মধ্যে পার্থক্য ছিল সমাজের সকল ক্ষেত্রে। আজ আর সে যুগ নাই; অর্থাৎ রাজা-বাদশাদের ভোগ বিলাসের দিন শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু এখনো মানুষে মানুষে সেই পার্থক্য রয়ে গেছে। একদিকে ধনীর সম্পদের বাড়াবাড়ি, আরেক দিকে দরিদ্রের কষ্টের হাহাকার।
জাহেদ হোসেন, সিনিয়র শিক্ষক, বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা