মজার গণিত-কান্ড
মুসা আল খাওয়ারিজমি। সারা বিশ্বেই তিনি বীজগণিতের জনক হিসেবে পরিচিত। তবে গণিতমহলে মাঝেমধ্যে বীজগণিতের জনক হিসেবে আরও একটি নাম উচ্চারিত হয়। তিনি হচ্ছেন গ্রিক গণিতবিদ ডায়োফ্যান্টাস। ধারণা করা হয়, ডায়োফ্যান্টাস খ্রিষ্টীয় তৃতীয় শতকের কোনো একসময় আলেকজান্দ্রিয়ায় বেঁচে ছিলেন।
যেসব সমীকরণের সমাধান কেবল পূর্ণসংখ্যায় হতে পারে, সেগুলোকে ডায়োফ্যান্টাসের নামানুসারে ‘ডায়োফ্যান্টাইন সমীকরণ’ বলে। তাঁর লেখা বই ‘অ্যারিথমেটিকা’ প্রাচীন গ্রিসের শ্রেষ্ঠ গণিত রচনাগুলোর একটি। বইটি ১৩ খণ্ডে বিভক্ত ছিল। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হলো, এর মধ্যে শুধু ছয় খণ্ড ব্যতীত বাকি সব খণ্ডই হারিয়ে গেছে কালের অতল গর্ভে।
তিনিই প্রথম ব্যক্তি, যিনি বীজগণিতে স্বরলিপি এবং প্রতীক ব্যবহার করেন। বর্তমানে একটি বীজগাণিতিক সমস্যা বা সমীকরণ সমাধান করার ক্ষেত্রে আমরা সাধারণত সেই বীজগাণিতিক সমীকরণে অজানা রাশিকে x ধরে নিই। ডায়োফ্যান্টাসের আগে প্রায় সবাই সমীকরণের পূর্ণরূপ ব্যবহার করতেন অর্থাৎ সমীকরণের জায়গায় ভাষা ব্যবহার করতেন, যা খুবই সময়সাপেক্ষ ছিল। তাঁর লেখা ‘অ্যারিথমেটিকা’ বইয়ে কোনো কিছুর অজানা রাশি বোঝাতে তিনি গ্রিক অক্ষর সিগমা ‘ς’-এর মতো একটি অক্ষর ব্যবহার করেছিলেন।
এই অ্যারিথমেটিকা বইয়েরই ১৬২১ সালের ক্লাউড-গ্যাসপার বাচেট অনূদিত সংস্করণের সমস্যা ১১.৮–এর ডানে বিখ্যাত গণিতবিদ পিয়েরে ডি ফার্মা (১৬০১ – ১৬৬৫) লেখেন তাঁর সেই বিখ্যাত উপপাদ্য (যেটিও ছিল একটি ডায়োফ্যান্টাইন সমীকরণ সম্পর্কে), যেটি ফার্মার শেষ উপপাদ্য নামে পরিচিত। ফার্মার সেই বিখ্যাত উপপাদ্য এবং সেটার জন্য গণিতের ৩৫৮ বছরের অপেক্ষা—এই সবকিছু নিয়ে অন্য কোনো দিন আলোচনা করা যাবে।
মৃত্যুর আগে সমাধিফলকে বা এপিটাফে খোদাই করার জন্য ডায়োফ্যান্টাস কিছু কথা লিখে যান কিংবা এটাও হতে পারে যে হয়তো তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর শিষ্যরাই এটি রচনা করেছিলেন।
সেই কথা বা রচনা ছিল একটা চমৎকার সমস্যা বা ধাঁধা, যার সমাধান করলে ডায়োফ্যান্টাস কত বছর বেঁচে ছিলেন, এমনকি তাঁর পুরো জীবন সম্পর্কে জানা যায়। এই সমস্যাকে বলা হয় ‘ডায়োফ্যান্টাসের ধাঁধা’ বা Diophantus’s Riddle। তো, চলো দেখা যাক কী ছিল সেই সমস্যা।
কবরের গায়ে এপিটাফে খোদাই করে লেখা ছিল, ‘তাঁর (ডায়োফ্যান্টাসের) জীবনের ছয় ভাগের একভাগ ছিল তাঁর শৈশব, বারো ভাগের একভাগ তাঁর কৈশোর। তারপর, জীবনের সাতভাগের একভাগ অতিক্রম করে তিনি বিয়ে করলেন। বিয়ের পাঁচ বছর পর তাঁর একটি ছেলে হলো। ছেলের আয়ু ছিল তার আয়ুর অর্ধেক এবং ছেলে মারা যাওয়ার পর শোকাহত ডায়োফ্যান্টাস মাত্র চার বছর বেঁচে ছিলেন। ডায়োফ্যান্টাস সব মিলিয়ে কত বছর বেঁচে ছিলেন?’
সমস্যাটি সমাধানের জন্য বীজগণিতের প্রাথমিক ধারণা থাকাই যথেষ্ট। তো, আর দেরি কেন? সবাই লেগে পড়ো সমস্যাটা সমাধান করার জন্য এবং বের করে ফেলো এই মহান গণিতবিদের জীবনকাল।
সমাধান:
এখানে সমস্যাটির সমাধান দেখার আগে অবশ্যই নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা করবে। তারপর এখান থেকে দেখে সমাধানের উত্তরটি মিলিয়ে নেবে। তবেই তুমি সমস্যা সমাধানের আনন্দ পাবে। চলো মিলিয়ে নেওয়া যাক সমস্যাটির সমাধান।
আমরা যদি ডায়োফ্যান্টাসের জীবনকালকে x ধরি, তাহলে এপিটাফ বা সমাধিফলকের সমস্যা অনুসারে গঠিত সমীকরণটি দ্বারায়,(1/6)x + (1/12)x + (1/7)x + 5 + (1/2)x + 4 = x।
এই সমীকরণ থেকে x মানের জন্য সমাধান বের করলে তোমরা পাবে ৮৪। অর্থাৎ, ডায়োফ্যান্টাস ৮৪ বছর বেঁচে ছিলেন। তাঁর শৈশব কেটেছে ১৪ বছর পর্যন্ত, এরপর কৈশোর কেটেছে আরও ৭ বছর অর্থাৎ ২১ বছর পর্যন্ত। এর আরও ১২ বছর পর, ৩৩ বছর বয়সে তিনি বিয়ে করেন। বিয়ের ৫ বছর পর তাঁর প্রথম এবং একমাত্র সন্তান হলো, তখন তাঁর বয়স ৩৮ বছর। আর সেই সন্তানের আয়ু ছিল মাত্র ৪২ বছর অর্থাৎ তাঁর বয়স যখন ৮০, তখন তাঁর সন্তান মারা যায়। এর ৪ বছর পর, ৮৪ বছর বয়সে ডায়োফ্যান্টাসের মৃত্যু হয়।
সবার জীবন হোক গণিতের ন্যায় সুন্দর, এই কামনা করে আজকের পর্ব এখানেই শেষ করছি। দেখা হবে নতুন কোনো পর্বে। ততক্ষণ পর্যন্ত আরও বেশি বেশি সমস্যার সমাধান করো এবং সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে নিজের মস্তিষ্ককে আরও শানিয়ে নাও। হ্যাপি প্রবলেম সলভিং।