একটি ফুটবলের সঞ্চারপথ বা ট্র্যাজেক্টরি
একটি ফুটবলের সঞ্চারপথ বা ট্র্যাজেক্টরি

সঞ্চারপথ বিষয়ক জ্যামিতিক সমস্যা

বছরজুড়ে গণিত ইশকুলে জ্যামিতি শিখি

কতগুলো বিন্দুর সেট যদি নির্দিষ্ট শর্ত মেনে চলে, তাহলে তাকে সঞ্চারপথ বলা হবে। যেমন: কতগুলো বিন্দুর সেট একটি নির্দিষ্ট বিন্দু থেকে সমদূরত্বে থেকে যে আবদ্ধ ক্ষেত্র তৈরি করে, তার সঞ্চারপথ হলো একটি বৃত্ত।

এতটুকু বোঝার পর তন্বীর হঠাৎ করে আগের সমস্যাটির কথা মনে পড়ে গেল। সেটি ছিল সঞ্চারপথ সম্পর্কিত সমস্যা। সে তখন এ বিষয় সম্পর্কে জানত না বলে সমস্যাটি সমাধানের দিকে এগোয়নি। এখন সে যেহেতু সঞ্চারপথ সম্পর্কে জেনে নিয়েছে, সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা করে দেখতে পারে। তাই সে দৌড়ে গিয়ে সমস্যাটি খুঁজে বের করল। সেটি ছিল এ রকম—

ত্রিভুজ ABC তে AB = 12, BC = 20 এবং CA = 16। AB এবং AC বাহুর ওপর দুটি বিন্দু X ও Y। XY রেখাংশের ওপর K এমন একটি বিন্দু, যেন XK/KY = 7/5 হয়। AB ও AC এর ওপর যদি X এবং Y এর অবস্থানের পরিবর্তন করা হয়, তাহলে K এর সঞ্চারপথ একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্র দখল করে। এই ক্ষেত্রটির ক্ষেত্রফলকে লঘিষ্ঠ m/n আকারে লেখা যায়। তাহলে m+n এর মান কত?

 

প্রথম দেখাতে সমস্যাটিকে একটু হিজিবজি লাগল। তাই তন্বী কয়েকবার পড়ে এবং ছবি এঁকে এঁকে সমস্যাটি বোঝার চেষ্টা করল। 

X ও Y এর অবস্থানের পরিবর্তন করলে K বিন্দুটি নির্দিষ্ট পথ দিয়ে যাবে। তাকে সেসব পথেরই খোঁজ পেতে হবে। অনেকক্ষণ চেষ্টা করার পর সে বুঝতে পারল যে সে আসলে ঠিক পথে এগোচ্ছে না। সমস্যাটিকে সে আরও জটিল করে ফেলছে!

না! তাকে হতাশ হলে চলবে না, ভাবনায় পরিবর্তন আনতে হবে, যাতে সমস্যাটি আরও সহজ হয়, এসব ভেবে পুনরায় সে চেষ্টা করতে লাগল। তারপর ভাবল, X আর Y যেহেতু AB এবং AC এর ওপরের যেকোনো বিন্দুই হতে পারবে, তাহলে নিশ্চই A, B এবং C বিন্দুর ওপরও হতে পারবে। হ্যাঁ… তা–ই তো! সে তার খাতায় একটি চিত্র এঁকে ফেলল।

X বিন্দুকে B বিন্দুর ওপর এবং Y কে C বিন্দুর ওপর কল্পনা করে নিলে K এর অবস্থান হবে BC এর ওপর। K এর এই নতুন অবস্থানকে চিত্রে E বিন্দু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যেখানে BE/EC = 7/5। আসলে এটি XK/KY (যেহেতু B ও C এর ওপর X ও Y বিন্দু ধরে নেওয়া হয়েছিল; তাই B বিন্দু = X বিন্দু এবং C বিন্দু = Y বিন্দু)। এরপর X কে B বিন্দুতে স্থির রেখে যদি Y কে C বিন্দু থেকে A তে নিয়ে আসা হয়, তখন K এর অবস্থান হবে AB এর ওপর এবং এটিও AB কে 7/5 অনুপাতে বিভক্ত করবে। K এর নতুন অবস্থানকে D হিসেবে চিহ্নিত করলে BD/DA = 7/5। AC এর ওপর যেকোনো বিন্দু নিলে K-এর অবস্থান DE এর ওপরই হবে। তাহলে, এই অংশটুকুতে K এর সঞ্চারপথ হয়ে যাচ্ছে DE! তার মানে সে সমস্যাটি সমাধানের দিকেই এগোচ্ছে।

একইভাবে, Y কে C বিন্দুতে স্থির রেখে, X কে B বিন্দু থেকে সরিয়ে A তে নিয়ে এসে AC এর ওপর K এর নতুন অবস্থানকে F হিসেবে চিহ্নিত করলে K এর সঞ্চারপথ হয় EF।

তন্বী এখন A, B, C বিন্দুতে X, Y কে আলাদাভাবে বসিয়ে দেখতে পেল, DA ও FA হলো K এর আরও দুটি সঞ্চারপথ! তাহলে সব কটিকে একত্র করলে যে ক্ষেত্র পাওয়া যায় তা হলো, ADEF ক্ষেত্র! এরপর, K এর যতগুলো অবস্থান সম্ভব, তার কোনোটিই এই ADEF ক্ষেত্রের বাইরে হবে না। এখন এর ক্ষেত্রফল বের করতে পারলেই সমস্যাটি সম্পূর্ণ সমাধান হয়ে যাবে। ততক্ষণে তার নজর চলে গিয়েছে ABC ত্রিভুজের বাহুগুলোর মানের দিকে…

16² + 12² = 20²

বা, AB² + AC² = BC²

তার মানে পিথাগোরাসের বিপরীত উপপাদ্যমতে A কোণটি সমকোণ! আবার আগেই পেয়েছিল BE/EC = AF/FC = 7/5। তাহলে EF ও AB সমান্তরাল। ∠AFE হলো সমকোণ। একইভাবে, DE||AC এবং ∠ADE সমকোণ। সুতরাং ADEF হলো একটি আয়তক্ষেত্র। এরপর সে AF ও AD এর মান বের করে ফেলল নিচের মতো করে।

AF/FC = 7/5

বা, (FC + AF)/AF = 12/7

বা, AF = 28/3 

একইভাবে, AD = 5 

তাহলে ADEF আয়তক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল = AF × AD = 28/3 × 5 = 140/3; যা m/n আকারে প্রকাশিত রূপ। অর্থাৎ m = 140 এবং n = 3। সুতরাং m + n = 140 + 3 = 143।

সমস্যাটি সমাধান করে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল তন্বী!