বছরজুড়ে গণিত অলিম্পিয়াডের প্রস্তুতি
গণিতপ্রেমী বন্ধুরা, আশা করি সবাই ভালো আছ। অনেক দিন পর আজ তোমাদের সঙ্গে গণিতের কয়েকটা সুন্দর সমস্যা ও সমাধান কৌশল নিয়ে আলোচনা করব। তো চলো, শুরু করা যাক।
প্রথমবারের মতো গণিত ইশকুলে এসেছে তোরা। তার মনের মধ্যে গণিতের একটি মজার এবং সুন্দর সমাধান কৌশল ‘টেলিস্কোপিং’ নিয়ে অনেক দিন ধরে প্রশ্ন ছিল। গণিত ইশকুলের অঙ্ক ভাইয়াকে পেয়ে সে তার মনের কথা বলে দিল।
সে টেলিস্কোপিং নিয়ে মৌলিক বিষয়টা জানতে চায়। অঙ্ক ভাইয়াও সঙ্গে সঙ্গে খাতা–কলম নিয়ে তার সঙ্গে বসে গেলেন।
তোরা প্রথমে অঙ্ক ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করল যে এটার নাম টেলিস্কোপিং হলো কেন? তখন অঙ্ক ভাইয়া বললেন, ‘আমরা যেমন টেলিস্কোপ দিয়ে অনেক দূরের জিনিস সহজে দেখতে পাই, টেলিস্কোপিংও অনেকটা সেভাবেই সাহায্য করে।’
অঙ্ক ভাইয়া আরও বললেন যে টেলিস্কোপ কিন্তু অনেকগুলো ছোট ছোট ভাগে ভাগ করা থাকে, ফলে যখন বড় করা হয়, তখন একটি টিউবের মতো কাজ করে। ভাঁজ করা অবস্থায় একটি বাদে বাকি টিউবগুলো দেখা যায় না।
অঙ্কেও আমরা অনেকটা ভাঁজ খোলা টেলিস্কোপের মতো ব্যবহার করব। তো চলো কয়েকটা উদাহরণ দেখা যাক।
মান নির্ণয় করতে হবে নিচের রাশিটার। প্রথমেই বলে রাখি, দেখে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
1/(1∙2) + 1/(2∙3) + 1/(3∙4) + 1/(4∙5) + ... ... + 1/(99∙100)
তো দেখেই মনে হচ্ছে বিশাল একটা রাশি, এটার সমাধান করতে গেলে তো জীবন তেজপাতা হয়ে যাবে! একই কথা বলল তোরাও। অঙ্ক ভাইয়া তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, ‘এখানে টেলিস্কোপিং মেথডটা ব্যবহার করলে খুব সহজেই তুমি বিষয়টা ধরতে পারবে।’ তিনি আরও বললেন টেলিস্কোপিং বিষয়টা উদাহরণের মাধ্যমেই বোঝা ভালো এবং সহজে বোঝাও যায়। তিনি এবার এটা সমাধানের কৌশল নিয়ে আলোচনা শুরু করলেন। তিনি প্রথমে ছোট ছোট কয়েকটা অংশে রাশিটাকে দেখতে বললেন, অর্থাৎ
∎ 1/(1∙2) + 1/(2∙3) = 2/3
∎ 1/(1∙2) + 1/(2∙3) + 1/(3∙4) = 3/4
∎ 1/(1∙2) + 1/(2∙3) + 1/(3∙4) + 1/(4∙5) = 4/5
∎ 1/(1∙2) + 1/(2∙3) + 1/(3∙4) + 1/(4∙5) + 1/(5∙6) = 5/6
আশা করি, বিষয়টা এবার তোমরা ধরতে পারছ। তো উত্তর কী হতে যাচ্ছে, সেটা তোরা এবার অনুমান করে বলে দিল। সেটা হলো 99/100।
কিন্তু আমাদের তো এটা প্রমাণ করে দেখানো লাগবে, শুধু অনুমান করে বললেই তো হবে না। এটাকে আমরা সাধারণভাবে এভাবে লিখতে পারি, 1/(1∙2) + 1/(2∙3) + 1/(3∙4) + 1/(4∙5) + ... ... + 1/n(n + 1) = n/(n + 1)। এই n/(n + 1) কে আমরা এবার আংশিক ভগ্নাংশে প্রকাশ করব, যেটা আমরা নবম শ্রেণির উচ্চতর গণিত বই থেকেই শিখেছি। তোরা বলল, সে এটা পারে এবং সঙ্গে সঙ্গে হিসাব করো বলল: (1/n) - 1/(n + 1)।
অঙ্ক ভাইয়া বললেন, হ্যাঁ, ঠিক হয়েছে। তো এরপরের কাজ তিনি তোরার ওপরই ছেড়ে দিলেন। বললেন, ‘এবার আশা করি তুমি বুঝতে পেরেছ বিষয়টা!’ তোরা হ্যাঁ–সূচক সম্মতিতে মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, সে এবার বাকি বিষয়টা পারবে। তো সে প্রতিটি ভগ্নাংশে এভাবে আলাদা করে ফেলল, (1/1 - 1/2) + (1/2 - 1/3) + (1/3 - 1/4) + (1/4-1/5) + ... ... + (1/n - 1/(n + 1))
তো এবার নিশ্চয় সবাই খুশি হয়ে গেছ? ইস, যদি এখন তোমাদের সামনে থাকতাম, তাহলে তোমাদের খুশির ভাগিদার হতে পারতাম। যা–ই হোক, তোরাও খুশিমনে হিসাব করতে থাকল। সে সব কটিকে যোগ করে পেল, 1 - 1/(n + 1)। তাহলে আমাদের প্রমাণ কিন্তু এবার শেষ, আমাদের প্যাটার্ন অনুযায়ী লিখতে পারি n/(n + 1) = 99/100 [যেহেতু পদ ছিলো 99টি]।
তো আমাদের উত্তর বের করা তাহলে শেষ! এবার তোমাদের জন্য একটি বাড়ির কাজ থাকছে। নিচের রাশিটির মান নির্ণয় করবে।
(100 - 98) + (98 - 96) + (96 - 94) + (94 - 92) + ... ... + (34 - 32)
আশা করি, তোমরা এটার সমাধান করতে পারবে। এটার উত্তর পরবর্তী কোনো লেখায় জানিয়ে দেব। তখন মিলিয়ে নিয়ো। তো আজ এখানেই শেষ করছি, সবাই ভালো থেকো।