আগের দুই পর্বে গণিতবিদ জন নেপিয়ারের আবিষ্কৃত নেপিয়ার্স বোনস বা র্যাডোলজি নামক যন্ত্রের মাধ্যমে ক্যালকুলেশন করা শিখেছি। এবার আমরা চলে যাব সতেরো শতকের মাঝে। নেপিয়ার এবং তাঁর অ্যালগরিদমের সাহায্যে এডমন্ড গুন্টার, উইলিয়াম ওট্রেড এবং অন্যরা ক্যালকুলেটরের পরবর্তী উল্লেখযোগ্য বিকাশ করার কাজ করেছিল। তারা আরও এক ধাপ এগিয়ে আবিষ্কার করলেন স্লাইড পদ্ধতি (Slide Rule) বা স্লিপস্টিক (Slipstick)।
স্লাইড নিয়মটি ছিল অ্যাবাকাসের একটি অগ্রগতি। কারণ, এতে একটি স্লাইডিং স্টিক রয়েছে, যা লগারিদমিক স্কেল বা ১০ ভিত্তিক গুণন পদ্ধতি ব্যবহার করে দ্রুত গুণ করতে পারে। মূলত এতে দুটি লগারিদমিক স্কেল থাকে, যাতে মোটামুটি অনেকগুলো ক্ষুদ্রমানও দাগান্বিত থাকে। আরও দুটি মুভ্যাবল পার্ট থাকে—একটি হলো দুটি স্থির স্কেলের মাঝে, আরেকটি ইকুয়ালাইজার। মূলত এই দুটি দিয়েই আমাদের কাজ। লগারিদম পড়ার সময় আমরা কয়েকটি নিয়ম লিখেছিলাম।
মনে করে দেখো,
1. =x + y
2. =x - y
মূলত এ দুটি সমীকরণ ব্যবহার করে আমরা স্লাইড পদ্ধতিতে দুটি সংখ্যাকে গুণ বা তাদের লগ নিয়ে লগদ্বয়ের সমষ্টি নির্ণয় করব।
ওপরের চিত্রে ৩ স্লাইডের স্কেলের সামনের এবং পেছনের অংশ দেখানো হয়েছে। স্থির স্কেল দুটির দুই পিঠে দুই ধরনের স্কেল দাগান্বিত আছে। মূলত স্কেলগুলো এক দশক পর্যন্ত পরিমাপ দেখায়; অর্থাৎ ১০ পর্যন্ত হয়ে থাকে। চিত্রে CD স্কেল হলো সিঙ্গেল ডিকেড স্কেল (Single Decade Scale), যা ১ থেকে ১০ পর্যন্ত নির্দেশিত, অন্যদিকে AB স্কেল হলো ডাবল ডিকেড স্কেল (Double Decade Scale), যা নির্দেশিত ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত; অর্থাৎ এক স্কেলে দশের কতগুলো সূচক কভার হচ্ছে, সেটার ওপর ভিত্তি করে নামকরণ করা হয়েছে।
এবার আমরা এই স্কেল দিয়ে কিছু সমস্যা সমাধান করব। যেমন: ২ কে ২ দিয়ে গুণ করতে হলে মাঝের মুভ্যাবল স্কেলের ১ কে নিচের CD স্কেলের ২-এর ওপর সেট করতে হবে। এরপর ইকুয়ালাইজার নিয়ে মাঝের স্কেলের ২, নিচের স্কেলের কোথায় মিলিত হয়, সেটা নির্ণয় করলেই গুণফল পাওয়া যাবে।
যদি ভাগ করা হতো, তবে নিচের CD স্কেলের ২-এর সঙ্গে মুভ্যাবল স্কেলের ২ এক লাইনে এনে (মুভ্যাবল স্কেলকে সামনে এবং পেছনে নেওয়া যায়) ইকুয়ালাইজার দিয়ে দেখতে হবে CD স্কেলের ১ মুভ্যাবল স্কেলের কোথায় আছে, এটা অবশ্যই ১ এই থাকবে। যদি ৮ কে ৪ দিয়ে ভাগ করা হতো, তাহলে মাঝের স্কেলের ৪ কে নিচের স্থির স্কেলের ৮ দাগান্বিত লাইনের সঙ্গে মিলিয়ে দিলে দেখা যাবে, মাঝের স্কেলের ১ এবং স্থির স্কেলের ২ একই লাইনে আছে; অর্থাৎ ভাগফল হবে ২।
এই স্কেল নিয়ে আর বেশি আলোচনা করব না। কেননা, হাতে হাতে ক্যালকুলেশনে এর কোনো ভূমিকা নেই, এটা একটা ছোটখাটো ক্যালকুলেটর হয়ে গেছে। আরও একধরনের স্লাইড স্কেল আছে, তবে সেটা গোলীয়। তোমাদের জেনে রাখার জন্যই মোটামুটি একটা ধারণা দিতে এসব আলোচনা নিয়ে আসা।
প্রতিবারের মতোই রেফারেন্স অংশে আমি যাবতীয় লিঙ্ক দিয়ে রাখব। এগুলো নিয়ে আরও বিস্তারিত জানার হলে সেখানে পড়তে পারো। এখান থেকেই হাতে হাতে ক্যালকুলেশনের পাট চুকিয়ে মানুষ প্রকৃত যান্ত্রিক ক্যালকুলেটরের দিকে যাত্রা করে। স্লাইড রুলের মাধ্যমে আমরা কেবল গুণ, ভাগ করাকে সহজ করেছি, তেমন নয়।
সায়েন্টিফিক পকেট ক্যালকুলেটর আবিষ্কারের আগে স্লাইড রুল বিজ্ঞান এবং প্রকৌশলে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত গণনাযন্ত্র ছিল। এর ব্যবহার সহজ এবং কম খরচে পাওয়া যেত, তাই এটির ব্যবহার ১৯৫০ এবং ১৯৬০-এর দশকে বাড়তে থাকে, এমনকি ইলেকট্রনিক কম্পিউটারগুলোও ধীরে ধীরে চালু করা হয়েছিল। তবে ১৯৭৪ সালের দিকে হ্যান্ডহেল্ড ইলেকট্রনিক সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটরের আবিষ্কার, স্লাইডের ব্যবহার অনেকটাই কমিয়ে ফেলে এবং সবাই আধুনিক ক্যালকুলেটরের দিকে মুভ করতে শুরু করে।