এইচএসসির বাংলা ১ম পত্রের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতির খুঁটিনাটি, নমুনা প্রশ্নোত্তর সহ

এইচএসসি পরীক্ষা ২০২৩ : বিশেষ পরামর্শ

বাংলা ১ম পত্র

মোহাম্মদ হুমায়ূন কবীর

প্রিয় পরীক্ষার্থী, এ বছরও পুনর্বিন্যস্ত সংক্ষিপ্ত সিলেবাসেই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলা ১ম পত্রে নির্ধারিত ৭টি গদ্য (অপরিচিতা, বিলাসী, আমার পথ, মানব-কল্যাণ, মাসি-পিসি, বায়ান্নর দিনগুলো, রেইনকোট), ৭টি কবিতা (সোনার তরী, বিদ্রোহী, প্রতিদান, তাহারেই পড়ে মনে, আঠারো বছর বয়স, ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯, আমি কিংবদন্তির কথা বলছি), ১টি উপন্যাস (লালসালু) এবং ১টি নাটক (সিরাজউদ্দৌলা) থেকে ৭০ নম্বরের সৃজনশীল এবং ৩০ নম্বরের বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর করতে হবে।

∎ সৃজনশীল প্রশ্ন

কোথা থেকে কয়টি প্রশ্নের উত্তর করতে হবে

‘ক’ বিভাগে (গদ্য) ৪টি সৃজনশীল প্রশ্ন থেকে কমপক্ষে ২টি, ‘খ’ বিভাগ (কবিতা) ৩টি থেকে কমপক্ষে ২টি, ‘গ’ বিভাগ (সহপাঠ) উপন্যাস ২টি থেকে কমপক্ষে ১টি এবং নাটক ২টি থেকে কমপক্ষে ১টি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অবশ্যই করতে হবে। এ ছাড়া অন্য আরেকটি প্রশ্নের উত্তর তুমি যেকোনো বিভাগ থেকে করতে পারবে।

∎ সৃজনশীল প্রশ্ন: সময় বণ্টন দেখে নাও

১১টি সৃজনশীল প্রশ্ন থেকে মোট ৭টি প্রশ্নের উত্তর করার জন্য সময় পাবে ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। অর্থাৎ প্রতিটি প্রশ্নের জন্য বরাদ্দ ২১.৪২ মিনিট। এর মধ্যে ১১টি উদ্দীপক পড়তে হবে, ভাবতে হবে, কল্পনা করতে হবে, পাঠ্যবইয়ের সঙ্গে মেলাতে হবে। বাস্তবতা হলো, একটি প্রশ্নের উত্তর লেখার জন্য তুমি আসলে কোনোভাবেই ১৭-১৮ মিনিটের বেশি সময় পাবে না। কাজেই সুনির্দিষ্ট ও পরিমিত উত্তর লেখা ছাড়া ভালোমতো সম্পূর্ণ উত্তর লেখা সম্ভব নয়।

এত অল্প সময়ের মধ্যে কীভাবে ৭টি প্রশ্নের উত্তর লিখবে? এটাই তো তোমাদের সবার জিজ্ঞাসা?

এখন আমরা এর সমাধান একটি সৃজনশীল প্রশ্ন ও তার নমুনা উত্তরের মাধ্যমে দেব।

মনে করো, ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতা থেকে একটি প্রশ্নের উদ্দীপক—

আমাদের ব্যাখ্যা-বিশেস্নষণের কারণে তোমার কাছে উত্তর অনেক বড়ো মনে হতে পারে, কিন্তু তুমি লেখার সময় ঠিকই উত্তরের পরিসর ছোটো হয়ে যাবে। আসলে আড়াই ঘণ্টায় ৭টি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর যথাযথভাবে লেখা দুঃসাধ্য ব্যাপার, তারপরও তোমাদেরকে লিখতে হয়, তোমরা লেখ। কারণ আঠারো বছর বয়সের ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলো তো আছে তোমাদের মধ্যে, তাই তো সম্ভব হয়। উপর্যুক্ত দিক-নির্দেশনাগুলো মনে রাখলে ভালো নম্বর পাবে ইনশালস্নাহ।

১। মাগফার আহমেদ চৌধুরী আজাদ; করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর পাস করা স্বাধীনচেতা, দুরন্ত, টগবগে এক তরুণ। ১৯৭১ সালে পুরো দেশ উত্তাল। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গ্রামগঞ্জ, শহর-বন্দর, হাটবাজার জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দিচ্ছে। নৃশংসভাবে হত্যা করছে নিরস্ত্র-নিরপরাধ মানুষকে। এমন সময় আজাদ যোগ দিলেন ক্রাক প্লাটুনে। সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন উড়িয়ে দেওয়াসহ বেশ কিছু অভিযানে সফলতা দেখালেন। কিন্তু ৩০ আগস্ট ধরা পড়লেন পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে। সহযোদ্ধাদের তথ্য নেওয়ার জন্য তাঁর ওপর চালানো হলো অমানবিক অত্যাচার-নির্যাতন; কিন্তু মুখ খুললেন না আজাদ, সবকিছু সহ্য করলেন দাঁতে দাঁত কামড়ে। তাঁর মা সাফিয়া বেগম রমনা থানায় তার সঙ্গে দেখা করতে এলে ভাত খেতে চেয়েছিলেন আজাদ। কিন্তু পরের দিন সাফিয়া খাতুন ভাত নিয়ে গেলে ছেলেকে আর খুঁজে পাননি। ছেলেকে ভাত খাওয়াতে না পারার কষ্টে আজাদের মা সারা জীবন আর ভাত খাননি।

ক. ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতাটি কোন ছন্দে রচিত?—১

খ. ‘তাজা তাজা প্রাণে অসহ্য যন্ত্রণা’- বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?—২

গ. উদ্দীপকের আজাদের মধ্যে ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার তারুণ্যের যে বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে তা ব্যাখ্যা করো।—৩

ঘ. উক্ত বৈশিষ্ট্যই ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার একমাত্র দিক নয়—মন্তব্যটির সত্যতা যাচাই করো।—৪

সৃজনশীল প্রশ্ন যেহেতু একটি বিশেষ ধরনের পরীক্ষাপদ্ধতি, তাই এর উত্তর লিখন-কৌশলও বিশেষ ধরনের। যেখানে অপ্রাসঙ্গিক তথ্য বা উত্তর লিখে বাহুল্য দোষ ঘটানোর কোনো সুযোগ নেই। বরং উত্তর হবে সুনির্দিষ্ট, পরিমিত ও প্রাসঙ্গিক যেমন আলোচ্য উদ্দীপকের আলোকে প্রশ্নের ক, খ, গ, ঘ চারটি অংশের সঠিক উত্তর কীভাবে লিখবে তা নিচে থেকে দেখে নাও।

∎ ক. জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ছিল—

‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতাটি কোন ছন্দে রচিত? এর উত্তরে তোমরা হয়তো লিখবে—‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতাটি মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত। কিন্তু এ উত্তর আমরা ‘মাত্রাবৃত্ত’ এই একটিমাত্র শব্দেও দিতে পারি। একটি পূর্ণ বাক্য লেখার দরকার নেই। তাহলে এই প্রশ্নের উত্তরে আমরা প্রায় ৫টি শব্দ লেখার সময় বাঁচাতে পারি। এভাবে ৭টি সৃজনশীলের জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তরে অনেকগুলো শব্দ লেখার সময় বাঁচানো যায়। পূর্ণ বাক্য না লিখলেও তুমি এখানে পূর্ণ ১ নম্বরই পাবে। তবে এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, জ্ঞানমূলক প্রশ্নে যে তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে, সেটার বানান ভুল করলে উত্তর কাটা যাবে এবং শূন্য পাবে।

∎ খ. অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ছিল—

‘তাজা তাজা প্রাণে অসহ্য যন্ত্রণা’—বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন? এর মধ্যে একটি নম্বর জ্ঞানের জন্য আরেকটি নম্বর অনুধাবনের জন্য। তাই আমরা জ্ঞান অংশের জন্য লিখতে পারি—‘তাজা তাজা প্রাণে অসহ্য যন্ত্রণা’ বলতে চারপাশের নানা অন্যায়-অত্যাচার, শোষণ-বঞ্চনা, উত্পীড়ন-নিপীড়ন, সামাজিক অনাচার-বৈষম্য ইত্যাদি দেখে সংবেদনশীল তাজা প্রাণে অসহ্য যন্ত্রণা অনুভূত হওয়াকে বোঝানো হয়েছে।

এরপর অনুধাবন অংশে ব্যাখ্যা করব যে সুযোগ্য নেতৃত্বের অভাব, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ইত্যাদি কারণে কোনো দেশে দুঃশাসন চলতে থাকলে ক্রমেই সেখানে অন্যায়, অত্যাচার, শোষণ, বঞ্চনা ও বৈষম্য দেখা দেয়। ফলে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। আর এই অভিঘাত এসে লাগে তরুণের তাজা প্রাণে। যেহেতু আঠারো বছর বয়সে তরুণ-তরুণীরা অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও সংবেদনশীল হয়ে থাকেন, তাই মানুষে মানুষে ভেদাভেদ, বৈষম্য, শোষণ ও বঞ্চনা তরুণদের মর্মাহত করে। তাঁরা কোনোভাবেই সেসব নেতিবাচকতা মানতে পারেন না। তাই এর প্রতিবাদে তাঁদের তাজা প্রাণে যন্ত্রণা অনুভূত হয়।

তুমি ইচ্ছে করলে জ্ঞান অংশের উত্তর আগে অনুধাবনমূলক উত্তর পরে অথবা অনুধাবনমূলকের উত্তর আগে জ্ঞানমূলকের উত্তর পরে লিখতে পার। তবে জ্ঞানমূলকের উত্তর আগে লিখে অনুধাবনের উত্তর পরে লেখা ভালো। অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তর এক প্যারাতে লেখা যায়, আবার দুই প্যারাতেও লেখা যায়। তবে দুই প্যারাতে লেখার চেষ্টা করবে। আর অনুধাবনমূলক প্রশ্নের শুরুতে অযথা কবি/সাহিত্যিককে নানা বিশেষণে বিশেষায়িত করার দরকার নেই। মনে রাখতে হবে, সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর হবে ‘জিরো ফ্যাট’,

অর্থাৎ চর্বিশূন্য। শুধু অনুধাবনে নয়, কোনোক্রমে কোনো প্রশ্নের উত্তরে অপ্রাসঙ্গিক কথা, অপ্রয়োজনীয় তথ্য বা বাহুল্য দোষ করা যাবে না। এ জন্য ‘খ’ অংশ, অর্থাৎ অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে বোর্ড বলছে—সর্বোচ্চ ৫ বাক্যে উত্তর লেখা যেতে পারে।

∎ গ. প্রয়োগমূলক প্রশ্ন ছিল—

উদ্দীপকের আজাদের মধ্যে ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার তারুণ্যের যে বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে, তা ব্যাখ্যা করো।

মোট নম্বর ৩। ১ নম্বর জ্ঞানে, ১ নম্বর অনুধাবনে এবং ১ নম্বর প্রয়োগে। তাই প্রয়োগমূলকের উত্তর তিন প্যারায় করাই ভালো। প্রয়োগ মানে আমরা জানি, শিক্ষার্থী তার পাঠ্যবই থেকে যা জেনেছে এবং যা বুঝেছে, তা নতুন ক্ষেত্রে, অর্থাৎ উদ্দীপকে প্রয়োগ করবে। কাজেই উদ্দীপকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গল্প/কবিতার যে দিকটির সাদৃশ্য/বৈসাদৃশ্য থাকে, সেটাই জ্ঞান। ওই দিক একটি শব্দে বা বাক্যে লিখতে পারলেই ১ নম্বর, যেমন আলোচ্য প্রশ্নের জ্ঞান হলো—‘দেশ, জাতি ও মানুষের চিরায়ত কল্যাণে আত্মদান’। তবে এ তথ্য শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সমার্থক শব্দ দিয়েও লিখতে পারে যেমন অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বা প্রতিবাদী সত্তার জাগরণ বা রক্তদানের পুণ্য ইত্যাদি। তারপর ওই দিক পাঠ্যবইয়ের আলোকে বর্ণনা করাই হলো অনুধাবন।

দ্বিতীয় প্যারায় আমরা লিখবো- ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কিশোর বিপ্লবী কবি সুকান্ত্ম ভট্টাচার্য তারম্নণ্যের ইতিবাচক ও নেতিবাচক বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন। তন্মধ্যে সবচেয়ে গুরম্নত্বপূর্ণ ইতিবাচক দিক হলো- দেশ, জাতি ও মানুষের চিরায়ত কল্যাণে আত্মদান। শৈশব-কৈশোরের পরনির্ভরশীলতা থেকে যৌবনের আত্মনির্ভরশীলতার পথে পা দিয়েই তরম্নণরা উপলব্দি করে যে- যুগে-যুগে, দেশে-দেশে মানুষের চিরায়ত কল্যাণের জন্য রক্তদানের প্রয়োজন হয়। সময়ের প্রয়োজনে তখন তরম্নণ প্রজন্ম বাষ্পের বেগে স্টিমারের গতির মতো আত্মদানের পথে ছুটে চলে এবং অকাতরে প্রাণ উত্সর্গ করে দেয়। তরম্নণরা শুধু যে দেশ-জাতির কল্যাণে আত্মদানই করে তা নয় বরং দেশ ও জাতির শত্রম্নদেরকে নিশ্চিহ্ন করে নতুন নতুন শপথে বলীয়ান হয়।কবির ভাষায়-

“এ বয়স জানে রক্তদানের পুণ্য

বাষ্পের বেগে স্টিমারের মতো চলে,

প্রাণ দেওয়া-নেওয়া ঝুলিটা থাকে না শূন্য

সঁপে আত্মাকে শপথের কোলাহলে।”

আর সবশেষে ঐ দিকটি (দেশ, জাতি ও মানুষের চিরায়ত কল্যাণে আত্মদান) উদ্দীপকে কীভাবে ফুটে উঠেছে তা বর্ণনা করাই প্রয়োগ। অর্থাত্ উদ্দীপকের মাগফার আহমেদ চৌধুরী আজাদ কীভাবে দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব অর্জনের জন্য নিজের জীবন উত্সর্গ করেছেন সে প্রসঙ্গ ব্যাখ্যা করাই প্রয়োগ। উচ্চ শিড়্গিত যুবক আজাদ চাইলেই ভালো চাকুরি বা ভালো কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারতেন। নিজের জীবনকে নিজের মতোন গড়ে নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি ১৯৭১ সালে পুরো দেশে সংঘটিত পাকিসত্মানি হানাদার বাহিনির নৃশংসতা, বর্বরতা, হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের প্রতিবাদে মুক্তিবাহিনির ‘ক্রাক পস্নাটুন’ এ যোগ দিয়ে অসীম সাহসিকতার পরিচয় দেন। পাকবাহিনির হাতে ধরা পড়ে অমানবিক অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেও সহযোদ্ধাদের সম্পর্কে কোনো তথ্য দেননি। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন ‘এ বয়স জানে রক্তদানের পুণ্য’ এই চরণের বা দর্শনের সারবত্তা। অবশেষে চিরতরে নিখোঁজ হন আজাদ।

অতএব উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেড়্গিতে বলা যায়- উদ্দীপকের আজাদের মধ্যে ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার তারম্নণ্যের দেশ, জাতি ও মানুষের চিরায়ত কল্যাণে আত্মদানের বৈশিষ্ট্যটি ফুটে উঠেছে। তাহলে পূর্ণ ৩ নম্বরই পাওয়া যাবে। ‘গ’ অংশ বা প্রয়োগমূলক সম্পর্কে বোর্ড বলছে- এর উত্তর ১২ বাক্যের মধ্যে শেষ করা যেতে পারে।

ঘ। উচ্চতর দক্ষতার প্রশ্ন ছিল- উক্ত বৈশিষ্ট্যই ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার একমাত্র দিক নয়- মন্ত্মব্যটির সত্যতা যাচাই কর। এড়্গেত্রে মোট নম্বর-৪। ১ নম্বর জ্ঞানে, ১ নম্বর অনুধাবনে, ১ নম্বর প্রয়োগে এবং ১ নম্বর উচ্চতর দড়্গতায়। আমরা জানি, উচ্চতর দড়্গতা মানেই একটি সিদ্ধান্ত্মের ব্যাপার। প্রশ্নেই সাধারণত একটি অনুসিদ্ধান্ত্ম দেওয়া থাকে। যদি সিদ্ধান্ত্মটি ঠিক হয় তাহলে সেটিকেই ব্যাখ্যা বিশেস্নষণ করে, উদ্দীপকে প্রয়োগ করে প্রমাণ করতে হবে যে, সিদ্ধান্ত্মটি ঠিক। আর যদি সিদ্ধান্ত্মটি ভুল হয় তাহলে কেন ভুল, সেটিও প্রমাণ করতে হবে। অনেক সময় সিদ্ধান্ত্মটি আংশিক সত্য হতে পারে। সেক্ষেত্রে উদ্দীপকের সাথে পাঠ্যবইয়ের যে অংশটুকুর মিল আছে তা বর্ণনা করে, যে যে ক্ষেত্রে মিল নেই সেগুলোও বর্ণনা করতে হবে এবং সবশেষে সিদ্ধান্ত্ম দিতে হবে যে বক্তব্যটি বা সিদ্ধান্ত্মটি আংশিক সত্য, পুরোপুরি নয়। বিচার-বিশেস্নষণ-সংশেস্নষণ, মূল্যায়ন করে সিদ্ধান্ত্ম দেওয়ার নামই উচ্চতর দক্ষতা। এ ক্ষেত্রে প্রশ্নটি ভালভাবে পড়ে পাঠ্যবইয়ের সাথে মিলিয়ে বুঝতে হবে। প্রশ্ন বুঝতে ভুল হলে পুরো ৪ নম্বরে ০ পাবে। যেমন আলোচ্য প্রশ্নে জানতে চাওয়া হয়েছে- উক্ত বৈশিষ্ট্যই ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার একমাত্র দিক নয়- মন্ত্মব্যটির সত্যতা যাচাই কর।

প্রথমেই আমরা জ্ঞান অংশে বলবো যে, উক্ত বৈশিষ্ট্য অর্থাত্ দেশ, জাতি ও মানুষের চিরায়ত কল্যাণে তরম্নণদের আত্মদানের দিকটি কবিতার একমাত্র দিক নয়- মন্ত্মব্যটি সত্য। কারণ ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতা পর্যালোচনা করে আমরা দেখতে পাই এখানে পরনির্ভরশীলতা থেকে আত্মনির্ভরশীলতার পথে পদার্পণের মুহূর্তে তরম্নণদের মনে বিভিন্ন দুঃসাহসিক ভাবনা চিন্ত্মার উদ্ভব হওয়া, পারিপার্শ্বিক নেতিবাচকতার প্রভাবে তরম্নণ প্রাণে যন্ত্রণা অনুভূত হওয়া, সংবেদনশীল মনে বহুবিচিত্র মত ও পথের ছোঁয়া লাগা, নেতিবাচকতার প্রভাবে তরম্নণদের বিপর্যসত্ম হওয়া এবং দেশ-জাতির কল্যাণে আঠারোর প্রয়োজনীয়তার দিকগুলোও রয়েছে।

এরপর অনুধাবন অংশে কবিতার অন্যান্য দিক (উদ্দীপকের সাথে ভাবগত মিল নেই যেসব দিক) সংড়্গেপে ব্যাখ্যা করব। আমরা লিখতে পারি এভাবে- ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় আমরা দেখতে পাই- আঠারো বছর বয়সকে তথা যৌবনের পদার্পণের মুহূর্তটিকে তরম্নণদের কাছে ‘দুঃসহ’ মনে হয়। কারণ এ সময়ে তারা শৈশব কৈশোরের পরনির্ভরশীলতা পেরিয়ে যৌবনের আত্মনির্ভরশীলতার পথে পা বাড়ায়। কিন্তু তরম্নণ প্রাণ অসীম সাহসিকতার সাথে আঠারো বছর বয়সের আত্মনির্ভরশীলতার ঝুঁকি গ্রহণ করে। তাছাড়া আঠারো বছর বয়সে বহুবিচিত্র চিন্ত্মা-চেতনা, স্বপ্ন-কল্পনা ইত্যাদি উঁকি দেয় তরম্নণদের মনে। অন্যদিকে সুযোগ্য নেতৃত্বের অভাব, সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ইত্যাদি কারণে কোনো দেশে দুঃশাসন চলতে থাকলে ক্রমশ সেখানে অন্যায়, অত্যাচার, শোষণ, বঞ্চনা, বৈষম্য দেখা দেয়। ফলে জনজীবন বিপর্যসত্ম হয়ে পড়ে। আর এই অভিঘাত এসে লাগে তরম্নণের তাজা প্রাণে। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ-বৈষম্য-শোষণ-বঞ্চনা তরম্নণদেরকে মর্মাহত করে। আঠারো বছর বয়সে যেহেতু জগত্ ও জীবনের বহুবিচিত্র মত ও পথ তরম্নণ প্রজন্মের সামনে উন্মোচিত হয়, তাই এ বয়সে সঠিক পথে পরিচালিত হওয়া দুঃসাধ্য ব্যাপার। ভুল পথের নানা চাকচিক্য তরম্নণদের আকৃষ্ট করে অন্ধকার জগতে নিয়ে যায়। ফলে তাদের জীবনে নেমে আসে ঘোর অমানিশার অন্ধকার। কবির ভাষায়- “এ বয়স কালো লড়্গ দীর্ঘশ্বাসে

এ বয়স কাঁপে বেদনায় থরোথরো।”

সবশেষে কবি সুকান্ত্ম ভট্টাচার্য আঠারো বছর বয়সের বিভিন্ন ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রবণতা তুলে ধরে ইতিবাচকতার জয়গান গেয়েছেন। দেশ-জাতির ক্রান্ত্মিকালে আঠারো বছর বয়সের আগমন প্রত্যাশা করেছেন।

এপর প্রয়োগের প্যারায় আমরা উদ্দীপকের মাগফার আহমেদ চৌধুরী আজাদ কীভাবে দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব অর্জনের জন্য নিজের জীবন উত্সর্গ করেছেন সে প্রসঙ্গ ব্যাখ্যা করব।

সবশেষে উচ্চতর দড়্গার প্যারায় আমরা তুলনামূলক আলোচনা করে দেখাব যে, আঠারো বছর বয়সে তরম্নণ-তরম্নণীরা জানে- দেশ-জাতি ও মানুষের কল্যাণে আত্মদানের মধ্যেই মানব জীবনের সার্থকতা। তাই তো তাঁরা সকল ভয়, ডর, শঙ্কার উর্ধ্বে উঠে, সকল বাধা বিপত্তিকে তুচ্ছজ্ঞান করে অসীম সাহসিকতায় বাষ্পের বেগে, স্টিমারের গতির মতো আত্মদানের পথে ছুটে চলে এবং অকাতরে প্রাণ উত্সর্গ করে। উদ্দীপকের মাগফার আহমেদ চৌধুরী আজাদ যে কাজটি করেছেন। কিন্তু এর বাইরেও কবিতায় আরও বেশ কিছু দিক রয়েছে, যেমন- পরনির্ভরশীলতা থেকে আত্মনির্ভরশীলতার পথে পদার্পণের মুহূর্তে তরম্নণদের মনে বিভিন্ন দুঃসাহসিক ভাবনা চিন্ত্মার উদ্ভব হওয়া, পারিপার্শ্বিক নেতিবাচকতার প্রভাবে তরম্নণ প্রাণে যন্ত্রণা অনুভূত হওয়া, সংবেদনশীল মনে বহুবিচিত্র মত ও পথের ছোঁয়া লাগা, নেতিবাচকতার প্রভাবে তরম্নণদের বিপর্যসত্ম হওয়া এবং দেশ-জাতির কল্যাণে আঠারোর প্রয়োজনীয়তা ইত্যাদি। এই দিকগুলো উদ্দীপকে ফুটে উঠে নি।

কাজেই উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেড়্গিতে বলা যায়- উক্ত বৈশিষ্ট্য অর্থাত্ দেশ, জাতি ও মানুষের চিরায়ত কল্যাণে তরম্নণদের আত্মদানের দিকটি কবিতার একমাত্র দিক নয়- মন্ত্মব্যটি সত্য। ‘ঘ’ অংশ বা উচ্চতর দড়্গতামূলক সম্পর্কে বোর্ড বলছে- ১৫ বাক্যের মধ্যে উত্তর লেখা যেতে পারে।

বহুনির্বাচনি অংশে নির্ধারিত ৭টি গদ্য (অপরিচিতা, বিলাসী, আমার পথ, মানব-কল্যাণ, মাসি-পিসি, বায়ান্নর দিনগুলো, রেইনকোট) থেকে চার দড়্গতার (জ্ঞানমূলক, অনুধাবনমূলক, প্রয়োগমূলক ও উচ্চতর দড়্গতামূলক) ১২টি বহুনির্বাচনি প্রশ্ন, নির্ধারিত ৭টি কবিতা (সোনার তরী, বিদ্রোহী, প্রতিদান, তাহারেই পড়ে মনে, আঠারো বছর বয়স, ফেব্রম্নয়ারি ১৯৬৯, আমি কিংবদন্ত্মির কথা বলছি) থেকে চার দড়্গতার ১২টি বহুনির্বাচনি প্রশ্ন , উপন্যাস (লালসালু) থেকে ৩টি এবং নাটক (সিরাজউদ্দৌলা) থেকে ৩টি করে মোট ৩০টি বহুনির্বাচনি প্রশ্ন থাকবে।

পরীক্ষার শুরুতেই ৩০ মিনিটে ৩০টি বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর ওএমআর শিটে বৃত্ত ভরাট করতে হবে। ওএমআর শিটে প্রশ্নের সেট কোড লিখতে ভুল কোরোনা কিন্তু। সুস্থ দেহ ও সুস্থ মনে সুন্দর পরীক্ষা দাও- এই প্রত্যাশা।